মরহুম সৈয়দ আব্দুল মুক্তাদির এর জীবনী
মরহুম সৈয়দ আব্দুল মুক্তাদির |
মরহুম সৈয়দ আব্দুল মুক্তাদির এর জীবনী
মরহুম সৈয়দ আব্দুল মুক্তাদির ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দের১৭ই মার্চ এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম ঐতিহ্যবাহী সৈয়দ পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর পিতা সৈয়দ শমসের আলী তৎকালীন সময়ে পুলিশের একজন কমকর্তা ছিলেন। তাঁর পিতার চাকুরী জনিত কারণে শিলং এর ডঃ এইচ গরডন রবার্টস হসপিটালে তাঁর জন্ম হয়। তাঁর জন্মের কিছুদিন পর তাঁর পিতা সিলেটে বদলী হোন এবং তখন তাঁরা মৌলভীবাজারের শান্তিবাগের বাসায় থাকতেন। মরহুম সৈয়দ আব্দুল মুক্তাদির সাহেবের ৪ ভাই ও ৪ বোনের মধ্যে তিনিই সবার বড় ছিলেন। মরহুম সৈয়দ আব্দুল মুক্তাদির গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে বিভিন্ন দপ্তরে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ও তৎকালীন মাননীয় প্রধান মন্ত্রীমহোদয়ের একান্ত সচীব হিসাবে দায়ীত্ব পালন করেছেন।
তাঁর শিক্ষাজীবন:
তিনি মৌলভীবাজার সরকারী বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি (মেট্রিকুলেশন) পাশ করে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজে ভর্তি হোন। তিনি ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত হয়ে তুখর ছাত্রনেতা হিসেবে উক্ত কলেজের ছাত্র সংসদের নির্বাচনে বিপুল ভোটে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিপদে আপদে সহায়তা করতেন। উক্ত কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পলিটিক্যাল সাইন্সে ভর্তি হোন এবং মাস্টার্স পাশ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন।
কর্মজীবন:
তিনি জুলাই, ১৯৬৬ সালে মৌলভীবাজার সরকারী কলেজে অধ্যাপনা দিয়ে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন এবং ডিসেম্বর, ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত অধ্যাপনা করেন। অধ্যাপনায় থাকাকালীন তিনি ১৯৬৭ সালে সিএসএস (Pakistan Civil Service PCS Cadre) পরীক্ষার মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে PCS Cadre হিসেবে যোগদান করেন।
পরবর্তীতে জানুয়ারি, ১৯৬৮ সাল থেকে ডিসেম্বর, ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত (East Pakistan Civil Service Cadre) তিনি ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
জানুয়ারি, ১৯৬৯ সাল থেকে অক্টোবর, ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত সহকারী কমিশনার অব ট্যাক্সেস, ডেপুটি কমিশনার অব ট্যাক্সেস (সেকেন্ড সেক্রেটারি), জয়েন্ট কমিশনার অব ট্যাক্সেস (এনবিআর) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
মার্চ, ১৯৭৯ সাল থেকে অক্টোবর, ১৯৮০ সাল পর্যন্ত তিনি তৎকালীন মাননীয় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রীমহোদয়ের প্রাইভেট সেক্রেটারি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
অক্টোবর,১৯৮০ সাল থেকে জানুয়ারী, ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ টেলিফোন এন্ড টেলিগ্রাফ বোর্ডের ডাইরেক্টর (ফাইন্যান্স এন্ড রেভিনিউ) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
জানুয়ারি, ১৯৮৪ সাল থেকে মার্চ, ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত তিনি তৎকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়ের প্রাইভেট সেক্রেটারি (With Ranks and Status of Joint Secretary) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
পরবর্তীতে সরকারী চাকুরী থেকে তিনি স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন এবং বিভিন্ন সমাজ উন্নয়নমূলক এনজিও-তে দায়িত্ব পালন করেন।
অক্টোবর, ১৯৮৬ সাল থেকে ডিসেম্বর, ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত তিনি নির্বাহী পরিচালক বিএডিএস এন্ড ইউএসএইড ফান্ডেড পপুলেশন প্রজেক্টে দায়িত্ব পালন করেন।
জানুয়ারী, ১৯৮৮ সাল থেকে ডিসেম্বর, ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত তিনি কনসালটেন্ট হিসেবে এমসিসি ইন্টারন্যাশনাল এনজিও-তে দায়িত্ব পালন করেন।
ডিসেম্বর, ১৯৮৯ সাল থেকে অক্টোবর, ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তিনি দি পপুলেশন কাউন্সিল অব নিউ ইয়র্ক (বাংলাদেশ অফিস)-এর কনসালটেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
অক্টোবর, ১৯৯২ সাল থেকে ডিসেম্বর, ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত তিনি দি ক্রিশ্চিয়ান সার্ভিস ইন্টারন্যাশনাল (সি.এস.আই) কানাডা বেজড এনজিও-তে কনসালটেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন রূপালী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ, বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক লিঃ ও অগ্রনী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ এর পরিচালনা পরিষদের পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ব্যক্তি মালিকানাধীন এয়ার লাইনস ইউনাইটেড এয়ার ওয়েজের চিফ এডভাইজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোঃ লিঃ এর ডাইরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি সিলেটবাসীর সবচেয়ে বড় সংগঠন জালালাবাদ এসোসিয়েশনে প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে পর পর দুইবার নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে পালন করেছেন।
তিনি মৌলভীবাজার জেলা সমিতির নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি সি ন্যাশনাল ইএনটি এন্ড হেড নেক ক্যান্সার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের ট্রেজারার ও জয়েন্ট সেক্রেটারি জেনারেল হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
প্রতিভা বিকাশ সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট ভলান্টারি এসোসিয়েশ অব বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা ও আমৃত্যু প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি অফিসার্স ক্লাব, ঢাকা এর সম্মানিত সদস্য ছিলেন।
তিনি মেজর জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী সাহেবের স্মরণে প্রতিষ্ঠিত ওসমানী স্মৃতি পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
ব্যক্তি জীবনে তিনি মৌলভীবাজার নিবাসী এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম ঐতিহ্যবাহী সৈয়দ পরিবারের মরহুম সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম সাহেবের কন্যা সৈয়দা শওকত আরা বেগমকে জীবন সঙ্গিনী হিসেবে বেচে নিয়ে ১৯৭০ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হোন। ঐ মহীয়সী রমনীও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স সম্পন্ন করে বদরুন্নেসা সরকারি কলেজ, ঢাকায় অর্থনীতি বিভাগে অধ্যাপনা শুরু করেন, তৎপর সরকারী তুলারাম কলেজ নারায়নগঞ্জ-এ অধ্যাপনা করেন, তত্পর মৌলভীবাজার সরকারি কলেজে প্রিন্সিপাল হিসাবে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় অবসর গ্রহণ করেন।
মরহুম সৈয়দ আব্দুল মুক্তাদির সাহেবের দুই ছেলে; বড় ছেলে সৈয়দ তানভীর মুক্তাদির (নাফি) লন্ডনে পড়াশুনা শেষে চাকুরী নিয়ে স্বপরিবারে লন্ডনেই বসবাস করছেন এবং ছোট ছেলে সৈয়দ তানজিল মুক্তাদির (রাফি) লন্ডনে পড়াশুনা শেষে বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যবসা করছেন।
No comments