দ্যা ডেইলি এজুখেইশনে বিজ্ঞাপন দিতে কল করুন

+88 01521 20 70 54 (Call for Ad)

করোনার প্রথম ঢেউয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া মিতুর গল্প

বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রথম ঢেউয়ে স্বীয় অবস্থান থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া মিতুর গল্প

ফারজানা নওরীন মিতু ফোনালাপ সাক্ষাৎকারঃ
পরিচয়ঃ সরকারি গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের মাস্টার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী।
ঢাকা ইয়েস-২ এর ডেপুটি লিডার

লকডাউন ২৪শে মার্চ তারিখ থেকে শুরু হলেও আমার লক ডাউন শুরু হয় ৯ই মার্চ থেকে। বলতে গেলে ৪ঠা জুলাই পর্যন্ত লকডাউনে বাসায় ছিলাম।
লকডাউনের প্রথম দিকে চাকরির পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। 

তবে প্রথম দিকেই ত্রান কাজ নিয়ে বেশী ব্যস্ততা ছিল, কারণ ওই সময় করোনা আক্রমনের আশঙ্কাটা  বেশী ছিল। ত্রান কার্যক্রমের শুরুতে বিদ্যানন্দের সাথে যুক্ত হই। বন্ধুদের সহযোগীতায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মেনশনের মাধ্যমে অনেক বড় একটি সার্কেল তৈরি করে ফেলি।সার্কেলের মাধ্যমে প্রায় ৬০০০/- (ছয় হাজার টাকা মাত্র) মতো বিদ্যানন্দের ফান্ডে দেওয়া হয়।

তারপর বদরুননেসা কলেজে পড়ুয়া বিডি ক্লিনের সক্রিয় সদস্য ছোট বোন সেতু আক্তার সরকারের ত্রান তহবিলের কাজের দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়ে অনুরোধ করে। মূলত ইমার্জেন্সি কল রেসপন্স  টিমে কাজের দায়িত্ব পড়ে।

উপজেলার অন্তর্গত মানুষ যে ইমার্জেন্সি কল রেসপন্স  টিমের কাছে যে ফোনগুলো করতো তার এলাকাভিত্তিক একটি তালিকা তৈরি এবং এলাকার লোকদের ভোটার আইডি কার্ডের তথ্য সংগ্রহ করে কোন পরিবারের সংখ্যা কতোজন এবং কোন পরিবারের মধ্যে কবে কি পরিমান ত্রাণ দেওয়া হলো, কোন এলাকায় ত্রান প্রয়োজন, কি পরিমান ত্রান দেওয়া দরকার প্রতিদিন প্রভৃতি তথ্য সংগ্রহ করতেন। এবং তার দেওয়া  তথ্যের তালিকা থেকেই সব তথ্য নিশ্চিত করে রাতের আধাঁরে  স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হতো এবং প্রতিদিনের ত্রান দেয়ার তথ্য গুগল শীটে আদান প্রদান করা হতো এবং সপ্তাহ হিসেবে ত্রান দেওয়া নিশ্চিত হলে তারিখ ঠিক চিহ্ন দিয়ে রাখা হতো।


এরপর স্থানীয় কিছু সংগঠনের উদ্যোগ্যে এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করি। তারমধ্যে অন্যতম ছিল বিডি ক্লিন কাঁচপুর, স্বপ্নের কাঁচপুর সেবা সংস্থা।

এসব স্থানীয় সংগঠন উদ্যোগ্যে সদস্য প্রতি দৈনিক ৫০০/- টাকা চাঁদা উঠিয়ে মহল্লায় ফ্রি বাজারের ব্যবস্থা করি। ফ্রি বাজার কার্যক্রম টানা প্রায় এক সপ্তাহ ব্যাপী চলে। এছাড়াও, এসব সংগঠন ফ্রি বাজার কার্যক্রম ছাড়াও, ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা, লকডাউন মানার জন্য এলকায়ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গঠনের মাধ্যমে পথে জনসমাগম এড়াঁতে পাহাড়ার ব্যবস্থা ছাড়াও এলাকার প্রতিটি বাড়িতে ইমার্জেন্সি ফোন নাম্বার প্রদান; যাতে বাড়ির লোকজন বাইরে বের না হয়ে দায়িত্বরত স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে নিত্য-প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী পৌঁছে দেয়। এসকল দায়িত্ব ছাড়াও এলাকাভিত্তিক কোন বাড়িতে লকডাউন দিলে সেসকল বাড়িতে প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী পৌঁছে দেয়। এছাড়াও হ্যান্ড-স্যনিটাইজার বিতরণ, মাস্ক বিতরণের মতো কার্যক্রম পরিচালনে করে থাকে উক্ত সংগঠন।

উইজডম কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা সুবাদে কোচিং এর ছাত্র-ছাত্রীদের সহযোগীতায় বেদে পল্লীতে ত্রান কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হই। বেদে পল্লীতে প্রায় ১১ টা পরিবার কে সাহায্য করা হয় রমজানের পাক কালে।

সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে লকডাউনে ব্যক্তিগত মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য নিজের অবসর সময়টুকু কিভাবে কাটিয়েছেন এমন প্রশ্নে সদাহাস্যোজ্জল নওরিন ডেইলি এডুকেশনকে বলেন, প্রকৃতপক্ষে লকডাউন পুরোটাই অবসর সময় ছিল। আমি সব সময় নিজেকে হাসি-খুশি রাখার চেষ্টা করতাম এবং নিজেকে ব্যস্ত রাখার প্রয়াস হিসেবে ফ্ল্যাটের বারান্দায় বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজির বীজ রোপণ করি। যেমন- পুঁইশাক, লাউ, ডাটা শাক, মিষ্টি কুমড়া, তরমুজ বীজ। খুব অল্প সময়েই বীজ অঙ্কুরোধগমিত হয়ে চারাগাছে পরিণত হয়ে পরিপক্কতা অর্জন করে। শাক-সবজির গাছের পরিচর্যা ছাড়াও বিসিএস এবং অন্যান্য সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিতে থাকি।

নিজ এলাকাভিত্তিক ত্রাণ কার্যক্রম ছাড়াও নিজ গ্রামেও পরিবারের সহায়তায় এবং চাচাতো ভাই বোনদের সকলের সহায়তায় হতদরিদ্রের মাঝে ত্রান বিতরনসহ ঈদের যাবতীয় পোশাক থেকে শুরু করে ঈদ পণ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়।

হতদরিদ্র্যদের মধ্যে এমনও পরিবার ছিল যারা লকডাউনে ঢাকায় থেকে বাড়ি ফেরত। এছাড়াও সমাজের একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ এরকম প্রায় ১৭টি পরিবারের মাঝে সাহায্য সহযোগিতা করা হয়।

পুরো লকডাউনে নিজের সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখার কথা জানতে চাইলে নওরীন বলেন, আমার পুরো লকডাউন জুড়ে যদি ভূমিকা রাখার জায়গা কোথায় তাহলে আমি বলবো আমার পরিবারকে সময় দেওয়া। পুরো লকডাউনে আমি আমার পরিবারের সকল  সদস্যকে সব ধরনের ভয়-আতঙ্ক থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছি। কীভাবে আতঙ্কিত না হয়ে সকলকে সচেতন রাখা যায় সে চেষ্টা করেছি।বিভিন্ন সময়ে সকলকে বিনোদনমূলক গল্প, ছড়া শুনিয়েছি। প্রচারমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভাইরাল হওয়া খবরে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। এছাড়াও নিজ ফ্ল্যাটের আশেপাশের বাসিন্দাদেরও প্রতিনিয়ত আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হতে উদ্বুদ্ধ করেছি। 

সরকারি গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের মাস্টার্স পড়ুয়া নওরীন তার ক্যাম্পাসের সিনিয়র-জুনিয়ররা মিলে প্রায় ৭৫ টি পরিবারের মাঝে সহযোগিতা করেন।

ত্রাণ কার্যক্রমে কেন যুক্ত হলেন এরকম প্রশ্নে খুব সাবলীলভাবেই নওরীন বললেন, আসলে দেশের এরকম একটি অবস্থায় দেশের নাগরিক হিসেবে আমি সত্যি বলতে যেসব সংগঠনে কাজ করেছি সেসব সংগঠনের কাছ থেকে মানুষের দুঃসময়ে পাশে থাকা, মানুষের খারাপ সময় গুলোতে পাশে থাকার শিক্ষাটাই সংগঠন এবং আমার পরিবারের কাছ থেকে পেয়েছি। আসলেই এ জন্যই সাহায্য করা, প্রকৃতপক্ষে আমি এতাকে সাহায্য করা বলবো নাহ এটা আসলে নিজ অবস্থান থেকে যতটুকু সম্ভব ততটুকুই করার চেষ্টা করেছি রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে স্বীয় দায়িত্বের নিরিখে।

আমরা যদি একসাথে হয়ে কাজ না করি, আমি যদি আমিই থাকি তাহলে বিপদ কখনোই আমাদের সামনে থেকে সরে দাড়াবে না, যখন আমি আমরা হয়ে যাই তখন বিপদ সামনে থেকে সহসাই সরে যায়। 

এছাড়াও আমি আসলে সবাইকে স্বপ্ন দেখাতাম ঠিক হয়ে যাবে আমরা একটু সচেতন হলেই ঠিক হয়ে যাবে, সবাইকে সাহস দিতাম করোনা ক্যানসার, এইডস এর মতো কোন মরণব্যাধি নয় সাধারণ একটি ভাইরাস। অন্যান্য রোগের উপর আমাদের কন্ট্রোল নেই কিন্তু এটার উপর আমাদের কন্ট্রোল আছে। আমরা ইচ্ছা করলে এটা থেকে দূরে থাকতে পারি।

No comments

Powered by Blogger.