দ্য এ্যালকেমিস্ট | পাওলো কোহেলহো | বুক রিভিউ
বুক রিভিউ
বই : দ্য এ্যালকেমিস্ট
লেখক: পাওলো কোহেলহো
অনুবাদক: মাকসুদুজ্জামান খান
"যারা স্বপ্নের পিছুধাওয়া করে জীবন তাদের কোন না কোনভাবে সহায়তা করে।"
উপরের কথাটিই বলে দিতে পারে স্বপ্নবিলাসী মানুষ বা সফল ও প্রতিষ্ঠিত মানুষ গুলো কেন উঁচুতে পৌঁছেছে। কারণ তারা লেগে ছিল আর তাদের স্বপ্নের পিছনে ছুঁটে চলতে বদ্ধ পরিকর ছিল।
পাওলো কোহেলহোর বিশ্ববিখ্যাত এই বইটি গতবছরের মাঝামাঝি পড়া শুরু করেছিলাম কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে তা শেষ করতে পারিনি।
গতকাল নতুন করে পড়তে শুরু করার পর যতই এর ভিতরে যেতে থাকি ততই যেন বিস্ময় বালক সান্তিয়াগোকে ছাড়িয়ে যেতে নিজেকে নতুনভাবে পাঠ্যে মনোনিবেশ করি। যার প্রতিটা লাইনে ছিল জীবনের পরমব্রত হওয়ার চেষ্টায়। জীবনে কখনো পিছু হটতে নেই। পিছনে ফিরলে তুমি সামনে এগোতে পারবেনা। যদি অতীত নিয়ে বেশি ভেবে থাকো তাহলে বর্তমানকে উপভোগ করার আনন্দ হারিয়ে ফেলবে।
বাঁচো আজকের জন্য, দেখবে জীবন কত সুন্দর।
সাথে জীবনের লক্ষ্য ঠিক করো,অধ্যাবসায় করে তা অর্জনের জন্য নিজেকে পুরোপুরি বিসর্জন দাও। দেখবে একদিন না একদিন সেই স্বপ্ন তুমি ধরতে পারবে। এখন একটু সান্তিয়াগোকে নিয়ে বলি।
আন্দালুসিয়ার চঞ্চল, ভ্রমণপিপাসু,নিজেকে জানতে আত্মপ্রত্যয়ী ছেলে সান্তিয়াগো। বাবা মা চেয়েছিল যাযক হয়ে পরিবারের সম্মান বৃদ্ধি করবে। তা হয়নি । সান্তিয়াগো নিজে পৃথিবী টা নিজের মতো করে দেখতে চেয়েছে। তা সে করেছেও। কিন্তু তা তার স্বপ্ন তে বাস্তব রুপ দিতে গিয়ে তাকে কত কষ্ট পোঁহাতে হয়েছে,কত জনের সাথে কথা বলতে হয়েছে কত ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়েছে তা না পড়লে বোঝার উপায় নাই। ভেড়ার রাখাল থেকে যার জীবন শুরু।
প্রথম দিকে তার জীবনে এক বণিকের মেয়ে দেখতে পাই যাকে তার ভালো লাগে।কিন্তু পরবর্তী সময়ে তা মলিন হয়ে যায়। কারণ স্বপ্ন ছিল আরো উঁচুতে। পিরামিড এবং গুপ্তধন।
এজন্য তাকে নিজ পালের সব ভেড়া বিক্রি করতে হয়। বয়েসি রাজার সাথে ডিল করতে হয়। রাজা তাকে তার স্বপ্ন ছুঁতে সহায়তার হাত বাড়াঁয়। সান্তিয়াগোকে দুটি পাথর দেন। যা সে বিপদের সময় কাজে লাগাতে পারবে। প্রশ্ন করে উত্তর খুঁজে পাবে। লক্ষণ গুলো ফলো করলে সফল হবে।
এর পরের ধাপে সে তাঞ্জিয়ারে আসে। সেখানে সে তার সমস্ত টাকা পয়সা লম্পট বন্ধু খপ্পরে পড়ে হারায়। সর্বশান্ত হয়ে তাকে স্ফটিকের দোকানে কাজ নিতে হয়। দোকানের কোনো উন্নতি হয়না। মালিক সান্তিয়াগোর কথা শুনে স্ফটিকের সাথে চা বিক্রি শুরু করেন। তার পর থেকে ব্যবসায় লাভ হতে থাকে। অনেক অর্থ পায় সেখান থেকে। চাইলে নিজের হারানো ভেড়ার পাল করতে পারতো বা নিজ জন্মভূমি ইউরোপরে আন্দালুসিয়ায় যেতে পারতো। তার সামনে দুটি পথেই খোলা ছিল। ইচ্ছে করলেই পিছনে যেতে পারতো । কিন্তু সান্তিয়াগো তা না করে সামনের দিকে এগোয়। লক্ষ্য একটাই পিরামিড এবং গুপ্তধন। পথে তাকে পাড়ি দিতে হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় "সাহারা" মরুভূমি। গন্তব্য মোটেই সহজলভ্য নয়। পথে তার সাথে এ্যলকেমিস্টের সাথে দেখা হয়। যে তাকে নানান বিষয়ে অভিজ্ঞতা প্রদান করে।
মরুর প্রান্তরেও সে দেখা পায় অপরুপ সুন্দরী এক মেয়ের নাম হলো ফাতিমা। যাকে তার পছন্দ হয়। এবং বিয়ের প্রস্তাব দেয়। মেয়েটিও তাকে ভালোবেসে ফেলে। কিন্তু তার লক্ষ্য আরো দূরে; পিরামিডে। তাকে ছেড়ে স্বপ্ন কে ধরতে হবে।
সান্তিয়াগো কি পারবে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে?
পারবে ভালোবাসার মানুষের সাথে শেষবার দেখা করতে?
পারবে মনের মিলকে বাস্তব জীবনে হাতে হাত রেখে রুপ দিতে?
সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে পাঠককে বলব আজই বইটি পড়ুন। করোনার এই সঙ্কটময় সময়ে অবশ্যই বইটি ভালো লাগবে।
কথা গুলো সহজভাবে বললেও বইটি পড়তে ধরলে নিজের ভালোলাগা কাজ করবে।
লেখক চাইলেই এর চেয়ে বড় চমক উপহার দিতে পারতো যতটা সে পেয়েছে। অদ্ভুদ কিছু পেয়ে গেলে তার যেমন ভালো লাগতো পাঠকও মনে তৃপ্তি পেতো। তাই বলে যে পাঠক নিরান্দ হবে তা নয়; অনেক ভালো লেগেছে বইটি শেষ করতে পেরে। গল্পটা সত্যিই দারুণ।
বইটি থেকে ভালোলাগার মতো কিছু কথা নিচে তুলে ধরলাম নিশ্চয়ই আপনাদের ভালো লাগবে। জীবনের লক্ষ্যে অবিচল থেকে সফলতা কেড়ে আনতে যা বারুদের মতো কাজে দিবে।।।।
☑️ঈশ্বর তার সৃষ্টিকে অনেক ভালোবাসেন। প্রতিটি দিন শুরু অসীম সম্ভাবনা নিয়ে.
☑️ বালির দেশের মেয়েরা সব সময় স্বামীর অপেক্ষায় থাকতে পছন্দ করে।
☑️কেউ যদি লক্ষ্য ছেড়ে দেয়, বুঝতে হবে সে ভালোবাসা সত্যি নয়,,,সে ভালোবাসা,যা জগতের ভাষায় কথা বলে।
☑️কেউ ভালোবাসা পায় কারণ সে ভালোবাসা পায়। ভালোবাসার জন্য কোন কারণ দর্শানোর দরকার নেই।
☑️লোকে কিন্তু চলে যাবার কথা বেশি ভাবে না,ভাবে ঘরে ফেরার কথা।
☑️ভোগান্তির ভয় আসল ভোগান্তির চেয়ে কষ্টকর।
সম্পদ পাবার কথা ভাবলে তখন মনে চলে আসে পাবার আশা। তাই থাকে অনেক আনন্দ।
☑️লক্ষ্য থেকে দূরে সরে গেলে চাপ দিতে হবে তাকে। চাপ দিতে হবে পথে ফিরিয়ে আনার জন্যে।
☑️সূর্য উদিত হওয়ার আগের প্রহর সবচেয়ে বেশি অন্ধকার হয়।
☑️তোমার ভেতরে অসাধারণ কোন সম্পদ থাকলে তা লোককে বলে বেড়ালে খুব বেশি মানুষ তা বিশ্বাস করবেনা।
☑️যখন কেউ অন্যের লক্ষ্যে হস্তক্ষেপ করে তারা কখনো নিজের লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনা।
☑️টাকা কিন্তু সব সময় প্রাণ বাঁচাতে পারেনা।
☑️কোন মানুষ লক্ষ্য নিয়ে জীবন কাটালে সে প্রয়োজনীয় প্রতিটা ব্যাপার জানে। স্বপ্নকে অসম্ভব করে তোলে মাত্র একটা ব্যাপার; ব্যর্থ হবার ভয়।
☑️সাধারণত মৃত্যর হুমকি মানুষের মনে বেঁচে থাকার আশা বাড়িয়ে দেয়।
☑️একবার যা হয় তা আর কখনো হতে পারেনা। কিন্তু যা দুবার হয় তা তৃতীয়বার হবেই।
☑️পৃথিবীর প্রতিটা মানুষে এ গ্রহের ইতিহাসে একটা কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে। সাধারণত নিজেও তা জানে না।
☑️যে জায়গা চোখে অশ্রু আনে সে জায়গার ব্যাপারে সাবধান থাক।
☑️ভালোবাসা কখনো কাউকে লক্ষ্যে থেকে সরাতে পারেনা।
☑️উদ্দেশ্যগুলো পূর্ণ না হলে কখনো কোন পরিকল্পনা আলোর মুখ দেখে না।
☑️মিশরে কাকড়ার যুদ্ধ ঈশ্বরের প্রতিনিধিত্ব করে।
☑️যারা স্বপ্নের পিছুধাওয়া করে জীবন তাদের কোন না কোনভাবে সহায়তা করে।
লিখেছেন-
নাসিম আহমেদ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
Team member Zakir’s BCS
No comments