মা | আনিসুল হক | বুক রিভিউ
বইয়ের নাম: মা।
লেখক: আনিসুল হক।
'মা' উপন্যাসটি হলো সত্য ঘটনা অবলম্বনে রচিত একটি উপন্যাস, যেখানে
মুক্তিযুদ্ধের সময়কার বিভিন্ন কাহিনীর মধ্য দিয়ে উঠে এসেছে, মা ও ছেলের
সম্পর্কের গভীরে মায়ের অসাধারণ আত্মত্যাগ।
মা উপন্যাসটির কেন্দ্রীয়
চরিত্র আজাদ। তার বাবা, ইউনুস চৌধুরী ছিলেন তৎকালীন সময়ের ধনী ব্যক্তিদের
মধ্যে একজন। তিনি যখন দ্বিতীয় বিয়ে করেন তখন আজাদের মা একবস্ত্রে ছেলেকে
নিয়ে সেই রাজকীয় জীবনযাপন থেকে বেরিয়ে আসেন। এরপর তিনি শুরু করেন ছেলেকে
মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার সংগ্রাম। আজাদের মা এতটাই দৃঢ় চিন্তার
অধিকারী ছিলেন যে, তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আর নিজের স্বামীর সাথে দেখা
করেননি। এমনকি নিজের ছেলে আজাদ যখন পুলিশের হাতে বেদম প্রহারে
জর্জরিত তখন পর্যন্ত তিনি ছেলেকে শক্ত হয়ে থাকার নির্দেশ দেন এবং
মুক্তিবাহিনীর কোনো খবর যেন না দেয় সেই পরামর্শ দেন।
আজাদের মা,
সাফিয়া বেগম মানুষকে খাওয়াতে পছন্দ করতেন। আর্থিক অবস্থার অবনতি থাকা
স্বত্ত্বেও নিজের আত্মীয় স্বজন, ছেলের বন্ধুবান্ধব এলে খুব খুশি মনে
আপ্যায়ন করতেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় আজাদের বন্ধুদের বাসায় এসে থাকার এবং
বাসায় অস্ত্রশস্ত্র রাখার অনুমতিও দেন।
১৯৭১ সালের ২৯ আগষ্ট,
আজাদকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। আজাদের সাথে যখন তার মায়ের জেলখানায় দেখা হয়
তখন আজাদের কন্ঠে শোনা যায় ভাত খাওয়ার জন্যে সে কি আকুল বেদনার কথা। আজাদের
মা তার পরদিন ছেলের জন্যে ভাত রান্না করে নিয়ে যান কিন্তু আজাদকে আর
পাননি। দেশ স্বাধীন হয়, কিছু মুক্তিযোদ্ধা ফিরেও আসে কিন্তু আজাদ আর ফিরে
আসেনি। এরপর আজাদের মা আরো ১৪বছর জীবিত ছিলেন কিন্তু তিনি ভাত খাননি
এবং বিছানায় শোননি৷ কারণ তিনি শেষ দেখেছিলেন তার ছেলে জেলখানায় মেঝেতে শোয়া
ছিলো।
আজাদ নিখোঁজ হওয়ার ১৪বছর পর ১৯৮৫ সালের ৩০ আগষ্ট বিদায় নেন
আজাদের মা সাফিয়া বেগম। তার ইচ্ছে অনুযায়ী কবরের এপিটাফে লেখা হয়, 'শহীদ
আজাদের মা'। কারণ স্বামীর সংসার ত্যাগ করার পর আজাদের মা তার ছেলেকে নিয়েই বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখেছিলেন.....
বইটি পড়লে বোঝা যায়, একজন মা তার
সন্তানের জন্যে কি পরিমাণ সংগ্রাম করতে পারেন। এই কঠিন সংগ্রামের কথা লেখক
সহজ-সাবলীল ভাষায় উপন্যাসে বর্ণনা করেছেন।
রিভিউটি শেষ করছি কোনো
একজন বিখ্যাত ব্যক্তির বলা একটি উক্তির সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে, "আমার বাসায় ৩
মা। নিজের মা, আনিসুল হকের 'মা' এবং ম্যাক্সিম গোর্কির 'মা'
লিখেছেন-
সুমাইয়া আহমেদ,
শিক্ষার্থী বিবিএ (মার্কেটিং ৪র্থ বর্ষ), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments