বরফ গলা নদী | জহির রায়হান | বুক রিভিউ
বইয়ের নাম: বরফ গলা নদী
লেখক: জহির রায়হান
জহির রায়হান এর 'হাজার বছর ধরে' (উপন্যাস) 'শেষ বিকেলের মেয়ে' এই ২টা বইয়ের পর এই 'বরফ গলা নদী' (উপন্যাস) আমার পড়া লেখকের এটা তৃতীয় বই।
জহির রায়হানের এই বিষয়টি আমার খুব ভালো লাগে যে তিনি তার লেখায় মধ্যবিত্ত
পরিবারের অবস্থা তুলে ধরেন। সাধারণের মধ্যে অসাধারণ কিছু বের করে আনেন।
আসছি এবার বইয়ের আলোচনায়,
হাসমত আলীর নিম্নমধ্যবিত্ত এক পরিবার, যেখানে তার স্ত্রীসহ ৫টা সন্তান৷ বড় ছেলে মাহমুদ যে শ্রেণি বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী এক যুবক। লুই
ফিশার হওয়ার স্বপ্নে বিভোর থাকলেও অনৈতিক কিছু মানুষ তাকে সেটা হতে দেয়নি।
বড় মেয়ে মরিয়ম, টিউশনি করে নিজের খরচ চালানো মেয়েটি একবার ভালোবেসে
প্রতারিত হয় এবং পরবর্তীতে অন্য কোনো ছেলেকে বিশ্বাস করতে দ্বিধায় পড়ে
যায়। মরিয়মের বোন হাসিনা, উপন্যাসটির উচ্ছল এক তরুণী৷ যে পরিবারটিকে মাতিয়ে
রাখে উৎফুল্লতায়, হাসি-আনন্দে...
একসময় মরিয়মকে এক ধনীঘরের ছেলে মনসুর
পছন্দ করে বিয়ে করতে চায়। যে পরিবার আধভাঙ্গা এক বাড়িতে বাস করে, বৃষ্টিতে
দেয়াল ভেঙ্গে ঘরে পানি প্রবেশ করে, সে পরিবারে ধনীজামাইয়ের আগমন এবং
পরিবারের সাহায্যে এগিয়ে আসা যেন মেঘের কোণে একফালি রোদ হয়ে আসা....
কিন্তু উপন্যাসের শুরুর অংশ, উপসংহারের আগে বড়ছেলে মাহমুদ কেন লিলির কাছে
এই আর্তনাদ করে যে, আমি কেন মরে গেলাম না? বেঁচে গেলাম? কে-ই বা লিলি?
মরিয়ম, হাসিনা ওদেরই বা কি হলো? বিষাদের কালো ছায়া কেন নেমে আসে পরিবারে?
জানতে হলে পুরো বইটি পড়তে হবে আপনাকে....
উপন্যাসের প্রিয় কিছু লাইন,
দুনিয়াটা হলো কতগুলো স্বার্থপর এর আড্ডাখানা। অন্যকে দিয়ে নিঃশেষ হয়ে যেতে পারো তুমি, কিন্তু প্রয়োজনে কারো কাছ থেকে একটা কানাকড়িও পাবে না।
জীবনটা কি কারো অপেক্ষায় বসে থাকে? আমাদেরও একদিন মরতে হবে। তখনো পৃথিবী এমনি চলবে। তার চলা বন্ধ হবে না কোনোদিন৷ যে শক্তি জীবনকে চালিয়ে নিয়ে চলেছে, তার কি কোনো শেষ আছে?
লিখেছেন-
সুমাইয়া আহমেদ,
শিক্ষার্থী বিবিএ (মার্কেটিং ৪র্থ বর্ষ), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments