কেন তারা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে মরীচিকার পিছনে ধাবিত হয়?
ছবিটা দেখে কিছু মনে পরে? কত সমালোচনা! জাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বি সি এস বা সরকারি চাকরির পিছনে ছুটে ছুটে । একবার ভেবে দেখার চেষ্টা করেছেন কেন তারা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে মরীচিকার পিছনে ধাবিত হয় ? আসলে এরা কারা?
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা দরিদ্র, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারে সন্তান। তারা বাল্যকাল থেকে দেখে আসছে অস্বচ্ছলতা ও অভাব। এটা নাই , ওটা নাই, দোকানের বাকি, পাওনাদারে তাগাদা, বাবার অসহায় মুখ, এই দিক থেকে এনে অন্য দিকে মিলানো, এভাবে এক একটি বছর পার করে আসে বিশ্ববিদ্যালয়ে।
শুরু হয় আর এক লড়াই, টিউশনি, কোচিং আর পড়াশুনা। টিকে থাকার তীব্র আকাঙ্ক্ষার সাথে থাকে তাদের সোনালু চোখের স্বপ্ন, এক দিন আমি ও স্বচ্ছল হবো, একদিন আমি ও বলবো বাবাকে, “অনেক হয়েছে, বাবা, এবার আপনি ক্ষান্ত হন। সংসার আমি দেখবো।“ যদি ও বাবারা থামে না।
এই স্বচ্ছলতা, আজীবন চাকরির নিশ্চয়তাই তাদের বাধ্য করে অসামাজিক হতে, বইয়ে মুখ গুঁজে ঘণ্টার পর ঘণ্টা টেবিলে বসে থাকতে। এমন নয় যে বেসরকারি চাকরি দিয়ে স্বচ্ছলতা অর্জন অসম্ভব কিন্তু করোনা কাল স্পট করে তুলে ধরছে সরকারি এবং বেসরকারি চাকরির ফারাক। এখন বেসরকারি চাকরিজীবীরা চাকরি হারানোর, বেতন না পাওয়া কিম্বা পেলে ও কম পাওয়ার দুশ্চিন্তার সাথে করোনা আতঙ্কে দিন কাটাছে (বেসরকারি ব্যাংকার বাদে) অন্য দিকে সরকারি চাকরিজীবীরা শুধু করোনা আতঙ্কে ভুগছে, অন্য অযাচিত দুশ্চিন্তা বাদে।
আবার এই সরকারি চাকরিজীবীরাই ফ্রন্টলাইনে কাজ করছে, প্রশাসনিক কর্মকর্তা , ডাক্তার, নার্স , স্বাস্থ্যকর্মী, সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকার ( যদিও বেসরকারি ব্যাংকের কিছু ব্রাঞ্চ বন্ধ) , সেনাবাহিনী, আর পুলিশ নিয়ে কি বলবো , যাদের “ঠোলা” বলে গালি দিতেন তাদের কাজ তো দেখতেই পাছেন। অবশ্য এর জন্য পুরস্কার ও পাবে । এই পুরস্কারে তারা মানসিক স্বস্তি পাচ্ছে এই ভেবে যে,“ যাক, আমার যদি কিছু হয়ও, প্রণোদনার টাকাতে আমার পরিবার ভালো থাকবে, একবারে পথে পরবে না”। কিন্তু যারা বেসরকারি তে চাকরি করছে তাদের এই স্বস্তি কি কোম্পানি দিচ্ছে?
তাহলে এই স্বপ্নবাজ শিক্ষার্থীদের নিয়ে এতো ট্রল, সমালোচনা কেন? তারা তো অন্যায় করছে না, শুধু মেধার জোরে চাচ্ছে নিজের এবং নিজের পরিবারে আর্থিক ও মানসিক নিশ্চয়তা। সমালোচনা হতে পারে সিস্টেম নিয়ে, কেন একজন ডাক্তারকে সাধারণ জ্ঞান নিয়ে বিস্তর স্টাডি করে, বি সি এস ক্যাডার হতে হবে, এই সময় টা যদি সে আন্তর্জাতিক জার্নাল পড়েতো তবে সে তার পেশায় আরো বেশি দক্ষ হতো , কেন এক জন বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীকে ব্যাঙ্কের কাজের জন্য চেষ্টা করতে হবে, কেন? এমন শত শত কেনের উত্তর কি শিক্ষার্থীদের দেয়ার কথা না রাষ্টের? আর রাষ্টকে অবহিত করার দায়িত্ব তো সুশীল সমাজের, বুদ্ধিজীবীদের । বুদ্ধিজীবীদের কাজের অবহেলা আর তাদের ভাড়ায় খাঁটার মানসিকতার দায়ভার কেন শিক্ষার্থীরা নিবে ? কেন?
গর্ভিণী নারীর মতো বেকাররা কষ্টের ভ্রূণকণা ধারণ করে অন্তর্লোকে। আমাদের জল ভেবে সমাজের কূপমুন্ডকের কথার বাণ যখন তরঙ্গ তোলে তখন মনে হয় ভেঙ্গে ফেলি এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড, অসত্য সভ্যতা। অতঃপর মনে পড়ে, আগামি শুক্রবার পরীক্ষা আছে। এভাবেই চলে, এভাবেই চলছে ধৈয্যের খেলা। সিকি পরিমাণ বিদ্যা, বুদ্ধি এবং জ্ঞান নিয়ে কূপমুন্ডকেরা ভেবে দেখে না, আমাদের প্রচেষ্টাকে খাটো করার কোন অধিকারই তাদের নাই, নেই কোন যোগ্যতা । এসব জটিল ঘুর্ণাবর্তের ঘূর্ণনে বাধ্য সূর্য প্রখর হতে, মুখর করতে জীবন। এই করোনা কালে একটা প্রত্যাশা, সমাজের কূপমুন্ডকদের শুভবুদ্ধি জাগ্রত হোক।
লেখক-
সৌরভ আহমেদ
No comments