তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী করোনায় আক্রান্ত
তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী করোনায় আক্রান্ত
মোঃ সাখাওয়াত হোসেন
কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি রেডিও আমারে কর্মরত এবং তিতুমীর কলেজ সাংবাদিক সমিতির সদস্য ছিলেন। এপ্রিল মাসে করোনার সংক্রামণ যখন বাড়ছিলো তখন থেকে তিনি গুলশানে ছিলেন।
তার সাথে থাকা তার এক রুমমেট করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি ও তার অপর রুমমেটের মাঝে করোনার উপসর্গ দেখা দেয়। তারা দু’জন রাজধানীর মুগদা হাসপাতালে গিয়ে ২৬ এপ্রিল (রোববার) কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়ে আসেন। মুগদা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, আগামী দিনে অর্থাৎ ২৭ এপ্রিলের মধ্যে তার করোনা পজিটিভ হলে মেসেজের (খুদে বার্তা) মাধ্যমে নিশ্চিত করা হবে।
এরইসাথে তিনি ২৫ এপ্রিল (শনিবার) রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইডিসিআর) হটলাইনে যোগাযোগ করে বিস্তারিত জানান। আইডিসিআরের পক্ষ হতে ২৭ এপ্রিল (সোমবার) তার নমুনা সংগ্রহ করা হয় এবং পরবর্তী দুই থেকে তিনদিনের মধ্যে ফলাফল মেইলে জানানোর কথা বলা হয়। এরপর ৩০ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) তিনি আইডিসিআরের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয় তাদের ল্যাবের অনেক কর্মী অসুস্থ থাকায় আরো দুই-একদিন সময় লাগবে।
এদিকে বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) মুগদা হাসপাতাল থেকে আরমানের রুমমেটের পরীক্ষার ফলে দেখা যায় তার করোনা পজিটিভ। কিন্তু ফলাফল আসেনি। এরপর তিনি কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযাগ করলে তারা জানান, রোগীর টেস্টের রিপোর্ট হারিয়ে ফেলেছেন তারা। পরবর্তীতে বৃহস্পতিবার আবার রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপর শনিবার তার পরীক্ষার ফলাফল করোনা পজিটিভ আসে তিতুমীরের এ শিক্ষার্থীর।
এমন পরিস্থিতি মানসিকভাবে বেশ ভেঙে পড়েছেন এই শিক্ষার্থী। তিনি বলেন,
রুমের দু’জন লোক করোনায় আক্রান্ত হলো। আমি আর আমার রুমমেট একই সাথে নমুনা দিলাম। তারটা পজিটিভ আর আমারটা নাকি হারিয়ে গেছে! ভয়ে ছিলাম, এলাকার লোকজন জানলে কেমন ব্যবহার করবে তা নিয়ে। আর পরিবারের কথা ভেবেও চিন্তা হচ্ছিলো। মানসিকভাবে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করছি। বৃহস্পতিবার তৃতীয়বারের মতো নমুনা দিয়ে এসেছি। তারা কী ধরনের উদাসীনতা দেখালেন বুঝে আসে না। আজ ফলাফলে করোনা পজেটিভ এসেছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেডিও আমারের এমডি শাকের চৌধুরী বলেন,
‘আমাদের কর্মীর বিষয়ে আমাদের যথেষ্ট চিন্তা আছে। আমরা আমাদের কর্মীর পাশে থাকব। তাকে সব ধরনের সহোযোগিতা করবো।’
তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আশরাফ হোসেন বলেন,
‘করোনা এমন একটা রোগ যে, আমরা চাইলেই রোগীকে হাসপাতালে গিয়ে বা তার বাসায় গিয়ে দেখে আসতে পারছি না। আমাদের এখন দূর থেকেই তাকে সহোযোগিতা করতে হবে। আমি বিষয়টি জানার পর ওই শিক্ষার্থীর সাথে যোগাযোগ করেছি। তাকে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে যথাযথভাবে সব অনুসরণ করতে বলেছি। আমরা তাকে আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি সব ধরণের সহোযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।’
তিতুমীর কলেজ সাংবাদিক সমিতির পক্ষ থেকে এ শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। সংগঠনটির সভাপতি শামিম হোসেন শিশির বলেন,
‘সে তিতুমীর কলেজ সাংবাদিক সমিতির একজন সদস্য। ক্যাম্পাসের প্রিয় মুখ। যতটুকু শুনেছি রেডিও আমারে কর্মরত থাকা অবস্থায় সে আক্রান্ত হয়েছে। আমরা সমিতির পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতার চেষ্টা করে যাচ্ছি। সিনিয়র, জুনিয়র সবাই তার প্রতি অত্যান্ত আন্তরিক। সমিতির পক্ষ থেকে আমরা কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং তার কর্মস্থান প্রতিষ্ঠানকে বিষয়টি অবহিত করেছি। সকলের কাছে তার জন্য দোয়া প্রার্থনা করছি।’
No comments