সৌদি- হুথি কৌশলগত মিত্রতা নাকি খন্ডিত ইয়েমেন? - বিসিএস লিখিত ও ভাইভা
সৌদি- হুথি কৌশলগত মিত্রতা নাকি খন্ডিত ইয়েমেন ?
ইয়েমেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার সময়ে সৌদি আরব এবং আরব আমিরাত একই শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করলেও দুই দেশের লক্ষ্য ছিল ভিন্ন । প্রথমে অনেকেই ভেবেছিল হুতিদের আগ্রাসন থামানোর জন্য সৌদি আরব কে সহযোগিতা করাই ছিল আরব আমিরাতের বিশেষ করে এমবিজেড এর লক্ষ । কিন্তু ইয়েমেনের যুদ্ধ যতই দিন গড়িয়েছে ততই আরব আমিরাতের লক্ষ্যকে সুস্পষ্ট করেছে ।
মোটাদাগে সৌদি আরব এর স্বার্থ
১. সীমান্ত স্থিতিশীলতা
২. হুথি মিলিশিয়াদের পরাজিত করে ইরানের প্রভাব কমানো
৩. সৌদি নির্ভর সুন্নি শাসক
৪. অখন্ড ইয়েমেন
আরব আমিরাত এর স্বপ্ন
৩. হুথি মিলিশিয়াদের পরাজিত করে ইরানের প্রভাব কমানো
২. উত্তর ও দক্ষিণ ইয়েমেনের বিভাজন
৩. দক্ষিণ ইয়েমেনের উপর নিজের কর্তৃত্ব
৪. ব্রাদারহুড পন্থী ইসলাহ পার্টিকে নির্মূল করা ( পলিটিক্যাল ইসলামিক পার্টি )
আরব আমিরাত ইয়েমেনে তার লক্ষ্যপানে এগিয়ে গেছে খুবই ধূর্ততার সাথে । এবং সত্যি বলতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের লক্ষ অনেকটাই বাস্তবসম্মত ।এবং তা যথারীতি উসকে দিয়েছে স্বাধীন দক্ষিণ ইয়েমেন গঠনের স্বপ্নে । যদিও দক্ষিণ ইয়েমেনের বিচ্ছিন্নতা আন্দোলন শুরু হয়েছে মূলত প্রেসিডেন্ট আলি আব্দুল্লাহ সালেহ এর সময়ে 2007 সালে ।
আরো পিছনে ফিরে গেলে এর শিকড় অনেক গভীরে । 1874 সালে ব্রিটিশ রা এডেন বন্দর কে কেন্দ্র করে উপনিবেশ তৈরি করে এবং 1967 সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর 1970 সালে সমাজতান্ত্রিক দক্ষিণ ইয়েমেনের সূত্রপাত ঘটে । মজার ব্যাপার হচ্ছে সোভিয়েত বেকড লেলিন পন্থী মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র রাষ্ট্র ছিল দক্ষিণ ইয়েমেন । ১৯৯০ এর দিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের সময় দক্ষিণ ইয়েমেনের জন্য উত্তর ইয়েমেনের সঙ্গে একত্রিত হওয়া ছাড়া আর তেমন কোন উপায় ছিল না । কিন্তু মাত্র চার বছর পরে উত্তর ইয়েমেন কর্তৃক discrimination এবং নির্যাতিত হওয়ার অভিযোগে গৃহযুদ্ধ বাধে । 2007 সালে দক্ষিণ ইয়েমেনে গঠিত হয় আল হীরক আল জানুবি যাদের দাবি ছিল সমতা এবং উত্তর ও দক্ষিণে সম উন্নয়ন । এই দলটির প্রতি আলি আব্দুল্লাহ সালেহ এর নির্যাতন দক্ষিণ ইয়েমেনের বিভক্তি আন্দোলনে ভিত্তি গড়ে দেয় । আরব বসন্তের সুযোগে 2009 সাল থেকে এই দলটি দক্ষিণের স্বাধীনতা দাবি করছিল ।
2015 সালে মার্চ মাসে সৌদি আরব ও আমিরাতি জোট ইয়েমেনে আব্দে রাব্বি মানসুর হাদির সমর্থনে হামলা চালিয়ে এডেন বন্দরসহ মোটামুটি দক্ষিণ ইয়েমেনে হুথি মুক্ত করে । এ সময় আরব আমিরাত আল হীরক আল জানবি এর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রাধান্য দিয়ে সিকিউরিটি বেল্ট ফোর্স গঠন ( SBF) করে । এই প্যারামিলিটারি অস্ত্রশস্ত্র ও আর্থিক দিক থেকে আমি রাতে বেকড । হাউ টু বিরোধী অভিযানে প্যারামিলিটারি বাহিনীর অভিযান যুদ্ধ ছিল প্রশংসনীয় ।
এ পর্যন্ত মোটামুটি ভালই চলছিল আব্দে রাব্বি মানসুর হাদি যখন দেখল ইডেনের গভর্নরসহ দক্ষিণ ইয়েমেনের অধিকাংশ গভর্নরেট মূলত ধীরে ধীরে দক্ষিণ ইয়েমেনের বিচ্ছিন্নতার দিকে আগাচ্ছে তখন তিনি এডেন এর গভর্নর আল-জুবাইদি কে ২৭ এপ্রিল ২০১৭ সালে বরখাস্ত করলেন ।
যা এতদিনে ধীকধীক করে জ্বলা আগুনে ঘৃতাহুতি করল । ১১ মে আল-জুবাইদি এর নেতৃত্বে গঠিত হলো সাউদান ট্রানজিশনাল কাউন্সিল । মনসুর হাদি যে সংগঠনকে সঙ্গে সঙ্গে অবৈধ ঘোষণা করেন।
মানসুর হাদির অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইসলাম পার্টির সমর্থন পাচ্ছে এই অভিযোগে সংযুক্ত আরব আমিরাত সরাসরি সাউদান ট্রানজিশনাল কাউন্সিল কে সমর্থন করে । এবং সিকিউরিটি বেল্ট ফোর্স প্যারামিলিটারি সাউদান ট্রানজিশনাল কাউন্সিলের মিলিটারি শাখা হিসেবে কাজ করা শুরু করে ।
2018 সালে এস টি সি ( সাউদান ট্রানজিশনাল কাউন্সিল) জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে যা ছিল মূলত আন্তর্জাতিক স্বীকৃত হাদিপুর নিতে সরকারকে দক্ষিণ ইয়েমেন থেকে উৎখাতের সূচনা ।
উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠে যখন 2019 সালের অগাস্টের দিকে সিকিউরিটি ফোর্স তার অধীনে থাকা এলাকাগুলো সৌদি পন্থী হাদি সরকার-সমর্থিত সৈন্যদের কাছে হারাতে থাকে ।
এবার 29 আগস্ট আরব আমিরাত সরাসরি সৌদি পন্থী সরকার-সমর্থিত সৈন্যদের উপর হামলা শুরু করে যাতে সরকারপন্থী ৩০০ সৈন্য মারা যায় ।
যা ইন্টারন্যাশনাল কনফ্লিক্ট স্পেশালিস্টদের কাছে সিভিল ওয়ার ইন্ সিভিল ওয়ার নামে খ্যাত ।
গত নভেম্বরে উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হলেও গত সপ্তাহে সাউদান ট্রানজিশনাল কাউন্সিল দক্ষিণ ইয়ামেন জুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা দেয় এবং দক্ষিণ ইয়েমেনে নিজস্ব শাসন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয় ।
যা সৌদি আরবকে এবং তার মিত্র মনসুর হাদীর সরকারকে একেবারে খাদের কিনারে নিয়ে আসে । যাদেরকে একাধারে হুথি , আল-কায়েদাপন্থী যোদ্ধা , আরব আমিরাত পন্থী সাউদান ট্রানজিশনাল কাউন্সিল , প্রেসিডেন্ট সালে সরকারের প্রতি অনুগত যোদ্ধা সবার বিরুদ্ধে লড়তে হচ্ছে ।
এখন সবচেয়ে বেকায়দায় থাকা সৌদি আরব এবং এবং তার সমর্থিত মনসুর হাদি সরকারের সামনে দুইটি অপশন খোলা ...
১. সংযুক্ত আরব আমিরাতকে সঙ্গে রেখে সাউদান ট্রানজিশনাল কাউন্সিলের নেতৃত্বে খন্ডিত স্বাধীন দক্ষিণ ইয়েমেন গঠন করা ।
২. হুতি বিদ্রোহীদের সঙ্গে একজোট হয়ে দক্ষিণ ইয়ামেন কে সাউদান ট্রানজিশনাল কাউন্সিলের আওতামুক্ত করে অখন্ড ইয়েমেন প্রতিষ্ঠা করা ।
এক নম্বর পয়েন্ট সৌদি আরবের প্রধান চারটি লক্ষ্যের মধ্যে কোন লক্ষ্য কেই পূর্ণ করে না । কিন্তু দ্বিতীয় পয়েন্ট সৌদি আরবের লক্ষ গুলোর মধ্যে ৪ নম্বর লক্ষ্যকে সরাসরি পূর্ণ করে এবং হুতি বিদ্রোহীদের কে যদি ইরান পন্থী হওয়া থেকে বিরত রেখে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে পাওয়ার শেয়ারিং ডিল করা সম্ভব হয় তাহলে বাকি তিনটি লক্ষ্যের অন্তত দুইটি লক্ষ্য অর্জিত হবে ।
যা সৌদি আরবের জন্য এক নম্বর পয়েন্টের চেয়ে ভালো অপশন ।
ইয়েমেন কনফ্লিক্ট
লেখক-
মোবাশ্বের আহমেদ
No comments