করোনা ভাইরাস এবং কঠোর সিদ্ধান্ত
করোনা ভাইরাস এবং কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়ে লিখেছেন মো. আলমাসুর রহমান |
করোনা ভাইরাস এবং কঠোর সিদ্ধান্ত
গত শুক্রবার সন্ধা ৬টা থেকে ৭টা
পর্যন্ত আমি ঢাকা সিটির গুলশান ১ এবং মহাখালী, তেজগাঁ রোড, হাতির ঝিল,
মগবাজার পরিদর্শন করেছি- বুঝার চেষ্টা করেছি
ভারত, তুরস্ক, ইরান ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র করোনা
পরিস্থিতিতে যে সব পদক্ষেপ নিয়েছে– সেই তুলনায় আমাদের গাড়ী ও মানুষ চলাচল এবং
মানুষের উপস্থিতি বা ঘোরাফেরা কিরকম তা দেখার জন্য এবং বুঝার জন্য– বাস অনেক কম
চলছে, বাসের ভেতর যাত্রী অর্ধেক মনে হলো।
প্রাইভেট গাড়ী তিন ভাগের একভাগ চলছে
মনে হলো, পাঠাও মটর সাইকেল চলছে মনে হলো চারভাগের একভাগ, পেট্রোল পাম্পে জিগ্যেস
করলাম সারাদিন গাড়ী কেমন জ্বালানি নিয়েছে, জানালো
চারভাগের একভাগ। সিএনজি অটোরিকসাকে জিগ্যেস করলাম সারাদিন কত ভাড়া উঠলো–
জানালেন অর্ধেক উঠেনি, রিকসা চালকদেরকে জিগ্যেস করে উত্তর একই রকম ছিলো। যাক লোকজন
কম বেরুচ্ছে অর্থাৎ মানুষ সচেতন কিছুটা হচ্ছেন।
হাতিরঝিলে ঢুকলাম– লোক জনের ঘুরাঘুরি
গল্প- ছেলে-মেয়েদের একান্ত আলোচনা এই
পরিস্থিতিতে কমেছে কিনা– দেখলাম প্রায় আগের মতই। করোনা তাদেরে সচেতন করতে পরেনি
মনে হলো কিন্তু আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মাইকে করে করোনা সচেতন করে তাদের বাসায় চলে
যেতে কোন উদ্যোগ দেখলাম না। ব্যক্তিগত বা প্রাইভেসির বিষয় বলে তাদের কোন ছবি
তুলিনি।
রমনা পার্কের বর্তমান অবস্থা; ছবি- মো. আলমাসুর রহমান |
তবে আজ সকালে রমনা পার্কে প্রাতভ্রমনে সাধারনত: চারপাঁচ
হাজার মানুষ সকালে ব্যায়াম করেন এবং হাঁটেন, আজ সকালে গিয়ে দেখি প্রায় ফাঁকা
তারপরও পরিচিত কয়েকজনের সাথ দেখা হলো পার্কে। রমনা পার্কে গিয়ে মনে হলো মানুষ বেশ
সচেতন হয়েছেন এখন বাসায় ব্যায়াম করেছেন অনেকে।
কিন্তু এতে হবে বলে মনে হয় না। যে
হারে ইউরোপ থেকে বিশেষ করে ইতালি থেকে, চীন থেকে, মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমাদের প্রবাসী
ভাইরা এসেছেন তার অধিকাংশকেই প্রথমদিকে করেনটাইনে রাখা সম্ভব হয়ে উঠেনি। অনেকে
করেনটাইনে সঠিক ভাবে থাকবেন বলেও থাকেন
নি। ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয়ে পড়ারই কথা।
এমতাবস্থায় প্রবাসীদের জেলায় জেলায়
গিয়ে তাদের করেনটাইনে রাখার চেষ্টা চলছে।
কিন্তু যাদের সাথে মিশেছে তাদের ম্যানেজ করার চেষ্টাও চলছে। কতদূর কি হবে বলা
মুসকিল। সরকার সকল শিক্ষালয়, কোচিং সেন্টার বন্ধ ঘোষনা করেছেন। জাতীয় পর্যায়সহ সকল খেলা বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। ব্যায়ামাগার, বার, সিনেমা হল, অবকাশ কেন্দ্র,
প্রদর্শনী কেন্দ্র বন্ধ করা হয়েছে। ওয়াজ মহফিল সভাসমাবেশ সব বন্ধ।
কিন্তু জনবহুল এই বাংলাদেশে এতেও কাজ
হবেনা। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা পরিস্থিতি
অবনতিশীল বলে আরও কঠোর সিদ্ধান্ত নেবার জন্য সরকারকে বলেছে।
আমি মনে করে ঢাকা সিটি সহ প্রবাসীরা
যে সকল জেলায় গেছে সেই সব জেলায় কঠোর লক ডাউন করা হোক অর্থাৎ কারফিউ জারি করা হউক।
পুরো নিউইয়ার্ক লক ডাউন করা হয়েছে। আমার পাঁচ ভাই এবং তাদের পরিবার সেখানে থাকে,
আমার এক ঘনিষ্ট আত্মীয় নিউইযার্কে করোনায়
আক্রান্ত। আমি জানি পরিস্থিতি কি ভয়াবহ, সবকিছু বন্ধ সেখানে।
আমরা যদি কঠোর সিদ্ধান্ত না নিই তাবে
পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটতে পারে। আমি বিশ্বাস করি সরকার এ বিষয়ে গভীরভাবে
সচেতন রয়েছে। নাগরিক হিসেবে আজ থেকে, এখন
থেকে ঘরের বাহিরে যাওয়া আমাদের একদম বন্ধ করতে হবে। করো সাথে দেখা সাক্ষাৎ দুই
সপ্তাহর জন্য নিষেধ।
যারা অফিসের কাজে বাহিরে যাবেন
এনআইডি কার্ড সাথে থাকবে যাতে পুলিশ জিগ্যেস করলে দেখানো যায়। অকারণে বাহিরে কাউকে
দেখলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবেন। ভারতে সেলভ কারফিউ জারি করেছে। আমাদেরকে এই মারাত্মক
ছুঁয়াচে করোনা ভাইরাস থেকে দেশের জনগনকে বাঁচাতে কঠোর হতেই হবে। চীনে উহানে একমাস
লক ডাউনের পর আজ উৎসব করেছে করোনা মুক্ত মনে করে।
মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে এই মহা
দুর্যোগ থেকে রক্ষা করুন।
লিখেছেন-
মো. আলমাসুর রহমান
আন্তর্জাতিক বিচারক ও প্রশিক্ষক
(ফিদে)
২১/০৩/২০
No comments