দ্যা ডেইলি এজুখেইশনে বিজ্ঞাপন দিতে কল করুন

+88 01521 20 70 54 (Call for Ad)

আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরি | শনিবার, জানুয়ারি ৩০, ১৯৪৩



আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরি | শনিবার, জানুয়ারি ৩০, ১৯৪৩ | সাদিয়া আখতার [HD]

আদরের কিটি, 
আজ সকালে আবার সব কিছু আমাকে এলোমেলো করে দিয়েছে। ফলে একটা জিনিসও আমি ঠিকমত করে উঠতে পারিনি। 

বাইরেটা সাংঘাতিক। দিনরাত ওরা আরও বেশি করে ঐ সব অসহায় মানুষগুলোকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে ; পিঠে একটা বোঁচকা আর পকেটে সামান্য টাকা ছাড়া ওদের নিজের বলতে আর কিছু থাকছে না। পথে সেটুকুও ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সংসারগুলো ছিটিয়ে গিয়ে স্ত্রীপুরুষ ছেলেমেয়েরা সব পরস্পরের কাছ থেকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ইস্কুল থেকে ছেলেমেয়েরা বাড়ি ফিরে দেখছে মা-বাবা নিখোঁজ। মেয়েরা বাজার করে বাড়ি ফিরে দেখছে দরজায় তালা ঝোলানো, পরিবারের লোকজনেরা হাওয়া হয়ে গেছে। 

যারা জাতে ওলন্দাজ, তারাও খুব চিন্তাগ্রস্ত। তাদের ছেলেদের ধরে ধরে জার্মানিতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সকলেরই মনে ভয়। 

প্রত্যেকদিন রাত্রে শ'য়ে শ'য়ে প্লেন হল্যাণ্ডের ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে জার্মান শহরগুলোতে। সেখানে বোমায় বোমায় মাটি চষে ফেলা হচ্ছে। রুশদেশে আর আফ্রিকায় প্রতি ঘন্টায় শয়ে শয়ে হাজারে হাজারে মানুষ খুন হচ্ছে। কেউই এর বাইরে থাকতে পারছে না, লড়াই সারা বিশ্ব জুড়ে। যদিও তুলনায় মিত্রপক্ষ এখন ভালো অবস্থায়, তাহলেও কবে যুদ্ধ শেষ হবে বলা যাচ্ছে না। 

আমাদের কথা ধরলে, আমরা ভাগ্যবান। নিশ্চয় লক্ষ লক্ষ লোকের চেয়ে আমাদের বরাত ভালো। এখানে নির্ঝঞাটে, নিরাপদে আছি। বলতে গেলে, আমরা রাজধানীতে বাস করছি। এমন কি আমরা এতটা স্বার্থপর যে, কথায় কথায় বলি, 'যুদ্ধের পর’, নতুন জামা নতুন কাপড়ের কথা ভেবে আমরা উৎফুল্ল হই-অথচ আমাদের সত্যি করে প্রত্যেকটা পাইপয়সা বাঁচানো উচিত, অন্য মানুষজনদের সাহায্য করা উচিত এবং যুদ্ধের পর ধ্বংস হয়েও যেটুকু অবশিষ্ট থাকবে সেটুকু রক্ষা করা উচিত। বাচ্চারা এখানে ছুটোছুটি করে, গায়ে শুধুমাত্র একটা পাতলা পিরান আর শিলি পরে ; না আছে কোট, না আছে টুপি, না আছে মোজা।

কেউ তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়ায় না। সব সময় তাদের পেটগুলো পড়ে থাকে, কবেকার শুকনো একটা গাজর দাঁতে কাটতে কাটতে তারা ক্ষিধের ভেঁচকানি ঠোকরে রাখে। কনকনে ঠাণ্ডা ঘরগুলো থেকে বেরিয়ে তারা যায় কনকনে ঠাণ্ডা রাস্তায় ; যখন ইস্কুলে ইস্কুলঘর তার চেয়েও ঠাণ্ডা। দেখ, হল্যাণ্ডের হাল এখন এত খারাপ যে, অসংখ্য ছেলেপুলে রাস্তার লোকদের ধরে এক টুকরো রুটির জন্যে হাত পাতে। যুদ্ধের দরুন মানুষের দুঃখযন্ত্রণার ওপর আমি ঘণ্টার পর ঘণ্টা বলে যেতে পারি। কিন্তু তাতে নিজেকে আমি ম্রিয়মাণ করে তুলব। যতদিন দুঃখের শেষ না হয়, ততদিন যথাসম্ভব শান্তচিত্তে অপেক্ষা করা ছাড়া আমাদের আর কিছু করার নেই। ইহুদীরা আর খৃস্টানরা অপেক্ষা করছে, অপেক্ষা করছে সারা জগৎ; সেইসঙ্গে বেশ কিছু লোক মৃত্যুর জন্যে দিন গুনছে। 

তোমার আনা।

কৃতজ্ঞতা-
সুভাষ মুখোপাধ্যায়।

গ্রন্থসূত্র ও প্রকাশনী- নাথ পাবলিশিং 
৭৩ মহাত্মা গান্ধী রোড, কলকাতা ৭০০০০৯ । 

পড়েছেন- সাদিয়া আখতার।

No comments

Powered by Blogger.