দ্যা ডেইলি এজুখেইশনে বিজ্ঞাপন দিতে কল করুন

+88 01521 20 70 54 (Call for Ad)

করোনা মোকাবেলায় জবি শিক্ষার্থীদের ভাবনা



করোনা মোকাবেলায় জবি শিক্ষার্থীদের ভাবনা

মানবসভ্যতার এক নতুন ট্র্যাজেডিতে পরিণত হয়েছে করোনাভাইরাস। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পৃথিবীর বিশাল মৃত্যু মিছিলে যুক্ত হয়েছে আমাদের বাংলাদেশ। আমরা জানি, আমাদের রয়েছে অসংখ্য সীমাবদ্ধতা আর প্রয়োজন আতঙ্কিত না হয়ে সচেতনতার। করোনাভাইরাস নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চার মেধাবী শিক্ষার্থী তুলে ধরেছেন তাদের মতামত। এসব নিয়ে তাদের সাথে কথা বলেছেন মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ-

"জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মিথিলা দেবনাথ ঝিলিক লিখেছেন করোনা ভাইরাস নিয়ে গুজব নির্মূল প্রসঙ্গে। তার মতে, বতর্মান বিশ্বে সবচেয়ে বড় আতঙ্ক হলো covid-19 বা করোনা ভাইরাস। এটি মোকাবেলায় সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হলো জনসচেতনতা।
বর্তমান সময়ে জনগনকে সচেতন করার সবচেয়ে সহজ ও কার্যকরী উপায় হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। কিন্তু এসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মধ্য দিয়েই ছড়িয়ে পড়ছে নানা রকমের গুজব। তাই সবার আগে আমাদের উচিৎ সকল প্রকার গুজবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, অল্পকিছু দিন আগের এক ঘটনা: নেত্রকোনায় এক ভন্ড সাধু কিছু ভেষজ পাতা নিয়ে বলছেন, এগুলো করোনা রোগের ঔষধ। আর তার এই ভুয়া ঔষধ বিক্রির খবর ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকের মাধ্যমে। আরও কিছু স্বার্থানেষীমহল মিথ্যা ভয়েজ মেইল পাঠিয়ে মানুষকে ভুল তথ্য দিচ্ছে আর বাড়িয়ে দিচ্ছে আতঙ্ক। একদল ধর্মব্যবসায়ীর ভন্ডামীর ভিডিও ক্লিপ ফেসবুক, ইউটিউব এর লাইক আর শেয়ারের মাধ্যমে মানুষের ইনবক্সেও ফরওয়ার্ড হয়ে পৌঁছে যাচ্ছে যা আরও বিপদজনক। তাদের বক্তব্য তারা স্বপ্নাদেশে নাকি করোনার প্রতিষেধক পেয়েছেন। রসুন, লেবু, থানকুনি পাতার রস থেকে নাকি নিরোগ হচ্ছে করোনা আক্রান্ত রোগীরা।

এসব গুজব নির্মূলরোধে আমাদের উচিত  সামাজিক যোগাযোগ  মাধ্যমে সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনা। সঠিক ও নির্ভুল তথ্য জেনে, খবরের সত্যতা যাচাই করে লাইক, শেয়ার বা কমেন্ট করা। অর্থাৎ, নির্দিষ্ট নিউজ পোর্টাল, টিভি চ্যানেল বা বিশ্বাসযোগ্য উৎস থেকে সঠিক সংবাদ শেয়ার করা। নিজেরাও এসব গুজবে কান দিবো না আর এসব গুজবে কাউকে উসকানিও দিবো না।"

"জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নিশাত তাহসিন অপি লিখেছেন করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি নিয়ে। তার মতে, বর্তমানে বিশ্বব্যাপি আতঙ্ক সৃষ্টিকারী নতুন এক ভাইরাসের নাম "করোনা ভাইরাস"। ভাইরাসটি বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ১৭৮ টি দেশে আক্রমণ করেছে। যেটার নির্দিষ্ট প্রতিষেধক এখনো আবিষ্কৃত হয় নি। করোনা ভাইরাস হলো একই শ্রেণিভুক্ত ভাইরাস যারা স্তন্যপায়ী এবং পাখিকে আক্রান্ত করে। মানুষের মধ্যে করোনা ভাইরাস শ্বাসনালীর সংক্রমণ ঘটায়। এই সংক্রমণের লক্ষণ মৃদু হতে পারে, অনেক সময় যা সাধারণ ঠান্ডা জ্বরের ন্যায় মনে হয়। বর্তমানে COVID -19 গ্রাস করেছে সারা বিশ্বকে। চীনে প্রথম সংক্রমণ ঘটে এই ভাইরাসের। বর্তমানে ইতালি, আমেরিকা, স্পেন, চীন, ইরাকে ভায়বহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দিনের পর দিন মারা যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ।

হঠাৎ বিস্ফোরণের মতো গ্রাস করা এই ভাইরাসের নাম শুনে আতংকিত পুরো বিশ্ববাসী। সচেতনতা, কার্যকারিতা, ভয়াবহতা সম্পর্কে না জেনেই ধর্মকে কাজে লাগিয়ে কিছু কুচক্রী মহল ছড়াচ্ছে নানা গুজব। আর এর থেকে বাঁচার জন্য বাড়াতে হবে সচেতনতা।

এই কঠিন করোনা ভাইরাস এর সাথে যুদ্ধ করার সাথে সাথে আমাদের যুদ্ধ করতে হবে সেইসব কুচক্রী মহলের সাথে।

বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সচেতনতা বাড়ানো জন্য সর্বোত্তম পন্থা। কারণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন সবচেয়ে বেশি মানুষ এক্টিভ থাকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন- ফেইসবুক সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত একটি যোগাযোগ মাধ্যম। এই ফেইসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম এ আপডেট নিউজ শেয়ার করার মাধ্যমে আমরা সচেতনতা বাড়াতে পারি। নিউজের সত্যতা যাচাই করে শেয়ারের মাধ্যমে পৌঁছে দিতে পারি সবার কাছে। এমনকি পুরো বিশ্বের খবর পৌঁছে দেওয়া সম্ভব প্রত্যন্ত অঞ্চল গুলোতে। আমরা দল গঠন করেও এই কাজটি করতে পারি যাতে গ্রামীণ ও শহুরে সমাজ সবাই একসাথে সচেতন হতে পারে।

সচেতনতাই পারে বর্তমান ভাইরাসকে দমিয়ে রাখতে। আর এজন্য আমি মনে করি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলো যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক এমনকি সকল তরুণ সমাজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে খবর সরবরাহের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে সচেতনতা। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।"

"জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নূর আমীন লিখেছেন করোনা ভাইরাস থেকে পরিবার ও সমাজকে সচেতন ও এর প্রাদুর্ভাবে খেটে খাওয়া মানুষদের অবস্থা নিয়ে। তার মতে, বিশ্বের অনেক উন্নত দেশই যেখানে করোনা ভাইরাস মোকাবেলা করতে যেয়ে হিমশিম খাচ্ছে সেদিকে আমাদের মত দেশে বিস্তার হওয়ার আগ থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এদিকে নিজ থেকে সচেতন হয়ে পরিবার ও সমাজকে সচেতনতা তৈরি  করতে সাহায্য করতে পারি আমরা তরূণরা। সচেতনতাই পারে করোনার মত মহামারি রুখতে।

আর যারা দিন এনে দিন খায় তাদের অবস্থা নিয়ে তিনি বলছেন যে, আমাদের দেশে মোট জনসংখ্যার অনেকাংশ মানুষ দিনমজুর হিসেবে কাজ করে। করোনার মত মহামারী ভাইরাসের প্রতিরোধ হিসেবে সবাইকে যেখানে বাসায় থাকার নির্দেশ সেখানে তাদের জন্য খাবার জোগাড় করা কষ্টসাধ্য হয়ে পরেছে। এরমধ্যে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধিতে জনগনের অনেকটা খাড়ার উপর মরা ঘা হয়ে পড়েছে। এখন খেটে খাওয়া মানুষদের করোনা ভাইরাস থেকে খাবার জোগাড় করাই তাদের বেশি চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়েছে।  এক্ষেত্রে বাজার মনোটরিং করা বেশি জরুরি বলে মনে করি। আমরা সাধারণ জনগণও আতংকিত না হয়ে অহেতুক খাবার মজুদ করে বাজার স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করতে হবে। দেশের সবাই নিরাপদ থাকুক।"

"জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল রাফি সাকিব লিখেছেন করোনা ভাইরাসের ত্রাশের ফলে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির অভিশাপ নিয়ে। তার মতে সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যমের শিরোনামে প্রাধান্য বিস্তার করেছে কোভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাস। এশিয়ার বিভিন্ন দেশ এবং এর বাইরেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এই ভাইরাস। সাধারণ সতর্কতা অবলম্বন করে আপনার আমার এই ভাইরাসটির সংক্রমণ ও বিস্তারের ঝুঁকি কমিয়ে আনতে অবশ্যই সব ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

কতটা ভয়ংকর এই ভাইরাস?

শ্বাসতন্ত্রের অন্যান্য অসুস্থতার মতো এই ভাইরাসের ক্ষেত্রেও সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা এবং জ্বরসহ হালকা লক্ষণ দেখা দিতে পারে। কিছু মানুষের জন্য এই ভাইরাসের সংক্রমণ মারাত্মক হতে পারে। এর ফলে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট এবং অর্গান বিপর্যয়ের মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। তবে খুব কম ক্ষেত্রেই এই রোগ মারাত্মক হয়। এই ভাইরাস সংক্রমণের ফলে বয়স্ক ও আগে থেকে অসুস্থ ব্যক্তিদের মারাত্মকভাবে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বেশ

দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি

পণ্য উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে যখন কোনো প্রকার সামঞ্জস্য না থাকে তখন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেখা দেয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে করোনা ভাইরাসকে কেন্দ্র করে কিছু অসাধু ব্যাবসায়ী মাস্ক, হাত মোজা, হ্যান্ড সেনিটাইজার/ হ্যান্ড ওয়াশ সহ যেসব দ্রব্যাদি আমাদের শরীরকে জীবাণুর হাত থেকে রক্ষা করবে এদের দাম ক্রমাগত বাড়িয়েই চলেছেন। কিন্তু এ সমস্ত দ্রব্যাদি সাধারণ মানুষের বাধ্য হয়ে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়েও কিনতে হচ্ছে। এটি প্রকটভাবে সমস্যার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য। দেখা যাচ্ছে ২০ টাকা দামের মাস্ক ১৫০ টাকা দিয়েও কিনতে হতে হচ্ছে। শুধু এসব দ্রব্যাদিতেই থেমে নেই কাঁচা বাজারও যেন ফুলে ফেপে উঠেছে। সকল পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। চাল প্রতি কেজিতে ৮ টাকা দরে বেড়েছে এমনটাও দেখা যাচ্ছে। ভাইরাসের কারণে জীবন যতটা হুমকিস্বরূপ তার থেকে খেয়ে বেঁচে থাকাটা হয়ে উঠেছে আরো বেশি হুমকিস্বরূপ বিশেষ করে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য। দেশের অধিকাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। সুতরাং তারা অতিরিক্ত দামে দ্রব্য কিনতে তীব্র অসুবিধার সম্মুখীন হয়। আবার অনেকে আর্থিক সংকট কাটানোর জন্য অবৈধ উপার্জনের দিকে মনোযোগী হয়। ফলে সমাজে নৈতিক অবক্ষয় অবধারিত।

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিকার

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে হলে সর্বপ্রথম আমাদের সবাইকে নৈতিক হতে হবে এবং এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা অনেকটা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার উপর নির্ভর করে। বাজারের উপর সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে। মুনাফাখোরদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। দেশে লাগামহীন দুর্নীতির অবসান ঘটাতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হল, দেশের সকল মানুষকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজ স্বার্থ ত্যাগ করে দেশের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করতে হবে।

শেষ কথা

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির ও কষ্টের সম্মুখীন হয় স্বল্প আয়ের মানুষরা। সুতরাং এদের স্বার্থ রক্ষার জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। বাজারের ওপর সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে। ভাইরাস সহ যেকোনো ব্যাধিতে দেশের মানুষের উচিত সবাইকে এগিয়ে এসে সাহায্য করা। বিনা পয়সায় খাবার, মাস্ক, হ্যান্ড ওয়াশ সুরক্ষার জন্য সব ধরনের দ্রব্যাদি বিতরন করে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ী যাতে তার ইচ্ছামতো দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি করতে না পারে সে জন্য দেশের জনগণকে সচেষ্ট থাকতে হবে। তাই অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ও মানুষের মান উন্নয়ন জীবীকা ঠিক রাখতে হলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।"

ফিচার লেখক-
মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

No comments

Powered by Blogger.