দ্যা ডেইলি এজুখেইশনে বিজ্ঞাপন দিতে কল করুন

+88 01521 20 70 54 (Call for Ad)

করোনা ভাইরাস ও বাংলাদেশ


করোনা ভাইরাস ও বাংলাদেশ

জানুয়ারি ২০২০ সালে চীনে প্রথম কোরোনা ভাইরাস আক্রমন করার পর প্রথম মাথায় আসলো এবারের এইচ.এস.সি, বি.সি.এস বা অন্য চাকরি পরীক্ষার একটি টপিক বেড়ে গেল। সেই সুবাদে আমি নিজেও এটা নিয়ে একটু পড়াশুনা করলাম।

অতঃপর, জানুয়ারি ২০২০ এর শেষ দিকে শুনি, ফেব্রুয়ারিতে চীন থেকে ছাত্রছাত্রীদের দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। তবে কয়েকজন তখনও আসতে পারেনি। যারা আসতে পারেননি তারা তাদের নিজেদের অবস্থানে থেকে অনেক কষ্ট করে বেঁচে ছিলেন। তাদের সম্মান জানাই। 

আর যারা এসেছেন, তারা সবাই বাংলাদেশ সরকারের দেয়া রুলস ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন মেনে ১৪ দিন পর তাদের বাসায় ফিরে গিয়ে বন্ধু, আত্নীয়-স্বজনদের সাথে দেখা করেছেন। তাদের মাধ্যমে দেশে খুব একটা সমস্যা দেখা দেয়নি। 

সমস্যাটি শুরু হলো যখন আমাদের প্রবাসী বাঙালী (ইতালি বা অন্যান্য দেশে বাস করতেন) আসলেন। তারা হয়ত কিছু অসুবিধার সম্মুক্ষীন হয়েছিলেন, কিন্তু তাদের কেউ কেউ সরকারি কোন নিয়ম তো মানেন নাই উল্টো দেশ ও দেশের সিস্টেমকে গালাগাল দিলেন। 

বাংলাদেশ সরকার সব মেনে নিয়ে তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলেছিলেন, কিন্তু কিছুকিছু মানুষ তা মানলেন না। তাদের মধ্যে একজন হেলমেট মাথায় না দিয়েই বাইক চালাচ্ছেন, মিষ্টির দোকানে মিষ্টি খাচ্ছেন, কেউ বিয়ে করছেন কেউবা বাজার করছেন। এগুলো কেন? আমরা এত অসচেতন কেন?

এটার পরে অন্য সমস্যা হলো, তারা নিজেদের পরিচয় গোপন করে মানুষের সাথে মিশে যাচ্ছেন। অসুস্থ্য হলে ডাক্তারের কাছেও মিথ্যা কথা বলছেন, পালিয়ে যাচ্ছেন বা তাদের পরিবার তাদের পরিচয় গোপন করছেন। এমতাবস্থায় ডাক্তারদের কি করার আছে, আপনারাই বলুন?

এর পর আরও কিছু মানুষ আছেন, যারা ডাক্তারদের, বাড়িওয়ালাদের, ব্যবসায়ীদের গালাগাল দিচ্ছেন। কিন্তু আপনারা এটি চিন্তা করছেন না, তাদের জায়গায় থাকলে আপনি কি করতেন ? অসাধু ব্যবসায়ীদের কথা আলাদা। কিন্তু আপনি সুযোগ পেলে এই কাজ করতেন না এটার কি গ্যারান্টি আছে? আপনি তো তাহলে সুযোগের অভাবে ভদ্রলোক হয়ে আছেন। ডাক্তাররা কারও মা, বাবা, ভাই, বোন। তারাও তাদের নিরাপত্তা চান, যা তাদের অধিকার নয়, দরকার।

কোন কোন মানুষ তো আন্দোলনের মত করে নাগরিক অধিকার নিয়ে বলছেন, বাড়ি ভাড়া কমানো উচিত। আমিও বলি, কমানো উচিত। কিন্তু যে বাড়িওয়ালা বিপুল টাকা ঋণ করে বাড়ি বানিয়েছেন, ব্যাংক কি এই তিন মাসের ইন্সটলমেন্ট কম নিবে? নাকি তারা আপনাদের কাছে আবদার করেছে, ৫০% ইন্সটলমেন্ট আপনাদের দিতে। যদি তারা এমন আবদার করে, তখন অবাক হবার কিছুই নাই।

মার্চের মাঝামাঝিতে কয়েকজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ধরা পরার পর, সবাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের দাবি জানালেন। সরকার তা বন্ধ করে দিলেন। কিন্তু এই সুযোগে সবাই চলে গেলেন কক্সবাজার, সাজেক, বান্দরবান।

তারপর সরকারকে বললেন, অফিস আদালত বন্ধ রাখতে। সরকার তাও মেনে নিলেন। কিন্তু আপনারা ঈদের আমেজের মত করে বাড়ি চলে গেলেন। বাস, লঞ্চ, ট্রেনে ভীড় করে। এই অসচেতনতার কারনেই আজকে বাংলাদেশে করোনার মত ভয়ঙ্গকর ভাইরাস প্রবেশ করেছে।

এবার বলি আমদের কিছু আলেম সমাজের কথা। উনারা ওয়াজ মাহফিলে করোনা ভাইরাস নিয়ে নানান রকমের কথা বলেছেন। এটা সত্য যে স্রষ্ঠা ছাড়া আমাদের কেউ বাঁচাতে পারবে না। তাই বলে এটি নিয়ে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানো উচিত নয়।

এবার আমাদের সরকারের কিছু আমলাদের কথা বলতে চাই, এখনও বেফাস কথা বার্তা বলে যাচ্ছেন? তবে উনারা কি চিন্তা করে বলছেন, সেটি ভালোভাবে পরিষ্কার করে না বললে বুঝা বড় মুশকিল।

২০২০ সালকে মুজিব বর্ষ বলে ঘোষনা দেয়া হয়েছে। এই বর্ষ নিয়ে সাধারন মানুষের অনেক আশা, আনন্দ করার কথা ছিল। কিন্তু হুট করে ভাইরাসের আগমনের কারনে সরকার প্রোগ্রাম স্থগিত করেন। এ জন্য বাংলাদেশ সরকারকে আমি সাধুবাদ জানাই।

পরিশেষে বলতে চাই, আমরা ১৬ কোটি বাঙালি। আমরা চাইলে যে কোন কিছু করতে পারি। সরকারের একার পক্ষে এত বড় সমস্যা মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। আমাদের নিজেদের সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে অন্য মানুষকেও আমাদের বুঝাতে হবে। নিজেরা যদি নিজেদের দেশের নিয়ম না মানি, তাহলে অন্য কেউ আমাদের পাত্তা দিবে না। আমরা নিয়ম মেনে কাজ করলে বা নিয়মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকলে একদিন আমরা আসলেই সোনার বাংলা গড়ে তুলতে পারব।

লিখেছেন-
তানভীর তনু

No comments

Powered by Blogger.