প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে জানাটা খুব জুরুরি
প্রাথমিক চিকিৎসা
সম্পর্কে জানাটা খুব জুরুরি
আমরা প্রায়ই হঠাৎ কোন না কোনো কারনে জেনে অথবা না জেনে ছোটখাটো দূর্ঘটনা বা
আঘাত প্রাপ্ত হই। হঠাৎ পাওয়া এই আঘাত গুলো আমাদের প্রায়ই অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। এমনকি উপযুক্ত জ্ঞান ও সচেতনতার অভাবে অবস্থা আরও
শোচনীয় করে তোলে।
আমরা সবাই জানি যে, সারা বিশ্বে প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দূর্যোগের কারনে
ব্যাক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র পযার্য়ের দূর্ঘটনা ও অসুস্থতার সংখ্যা বেড়ে
চলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান মতে সাম্প্রতিক কালে প্রতি বছর সারা
বিশ্বে প্রায় ৬ কোটি লোক মৃত্যু বরণ করছে, যার ১০% অর্থাৎ ৬০ লাখ লোক কোন না কোন
শারীরিক আঘাতের কারনে মারা যায় এবং বিপুল সংখ্যক লোক পঙ্গুত্ব বরণ করে।
গবেষণায় এবং অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় যে, সব ধরনের দূর্ঘটনা ও অসুস্থতায় যদি
যথা সময়ে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা যায় তাহলে বহু মানুষের মৃতু ও পঙ্গুত্ব
প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই প্রাথমিক চিকিৎসার গুরুত্ব অপরিসীম।
এখন আসা যাক, প্রাথমিক চিকিৎসা বলতে কি বুঝায়, হঠাৎ দূর্ঘটনায় আহত বা
অসুস্থ ব্যাক্তিকে ডাক্তার বা হাসপাতালে পাঠানোর আগে তাৎক্ষণিক ভাবে যে সেবা দেওয়া
হয় তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা বলে। যিনি প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করে থাকেন তাকে
প্রাথমিক চিকিৎসক বলেন।
আমরা ডাক্তারের কাছে নেওয়ার আগে অনেক ভাবে রোগীকে সেবা প্রদান করতে পারি
কিন্তু মজার কথা আমরা নিজেরাই জানি না কতভাবে তাৎক্ষণিক সেবা দেয়া যায়। এমনকি
আমাদের মাঝে কিছু কুসংস্কার ও সঠিক জ্ঞানর অভাবে রোগীর অবস্থা আরও তিরোহিত হয়।
যেমন -কবিরাজ, ঝারফু অথবা ভুল চিকিৎসা পদ্ধতি। আবার অনেকের কাছে সামান্য
হাতকেটে গেলে জীবানু পরিষ্কার করার মতো স্যাবলন ও থাকে না। কিছু হতেই ডাক্তারের
কাছে ছোটেন। এতে রোগী আরও ঘাবড়ে যায়। কারন রোগীর কাছে ওই সময়ের তাৎক্ষণিক সেবাটা
জীবন বাঁচানোর জন্য খুব সহায়ক-ভূমিকা পালন করে।
কারণ প্রাথমিক চিকিৎসার
উদ্দেশ্য হচ্ছে -
১.আহত বা অসুস্থ
ব্যাক্তির জীবন বাঁচাতে সাহায্য করা
২.অবস্থার অবনতি রোধ করা
৩.অবস্থার উন্নতি করা।
আমাদের অনেকের প্রশ্ন কখন প্রাথমিকচিকিৎসা দিব। রোগীকে আঘাত পাওয়ার সাথে
সাথে দিলেই রোগী সবচেয়ে আরাম পাবে তবে এক্ষেত্রে যিনি চিকিৎসা দিবেন অবশ্যই মাথা
ঠান্ডা রেখে কাজ করতে হবে এবং নিজেকে ডাক্তার ভাবা যাবে না।
প্রাথমিক চিকিৎসককে অবশ্যই সঠিক ধারনা নিয়ে চিকিৎসা সেবা দিতে হবে।
প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে (airway, breathing and circulatio) দেখতে হবে ঠিক আছে কিনা
এবং পরে পা থেকে মাথা পর্য়ন্ত সমস্ত শরীর ভালো করে দেখে সমস্যা চিহ্নিত করতে হবে।
মোটামোটি ভাবে সারা বিশ্বে প্রায় একই রকম ভাবে প্রাথমিক সেবা দেওয়া হয়। এটা
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রাপ্ত। প্রাথমিক চিকিৎসার ক্ষেএ অনেকবিস্তর । তবে আমাদের
জানার ক্ষেএটা খুব অল্প। হঠাৎ দূর্ঘটনা ঘটতেই পারে, পরিবেশ পরিস্থিতি অনূকূল নাই
থাকতে পারে। এমনকি হাতের কাছে ডাক্তার নাও পেতে পারি। আর তখনি প্রাথমিক চিকিৎসা টা
খুব বেশী দরকার।
এভাবে আমরা চোকিং (গলায় খাদ্যকণা বা কিছুআটকে যাওয়া), হৃদপিণ্ড ও ফুসফুসে পুনসঞ্চালন
পদ্ধতি (সিপিআর- হার্টঅ্যাটাক) যা
শ্বাসপ্রশ্বাস এবং রক্ত সঞ্চালন নিতে কারোও সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক দিলে খুবই উপকার পাওয়া
যায় এবং রোগীকে ডাক্তারের কাছে নেওয়ার আগে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়া শক, রক্তক্ষরণ, ছোটখাটোক্ষত, dressing,
মচকানো, ব্যান্ডেজ, পোড়া, রাসায়নিক পোড়া, বৈদ্যুতিক
পোড়া, ফিট, অজ্ঞন হওয়া, মূছা যাওয়া, বিষক্রিয়া, হাড়ভাঙা, পানিতে ডোবা, মনস্তাত্ত্বিক
আঘাতপ্রাপ্ত রোগীকে তাৎক্ষণিক সেবা দিতে পারি।
আমরা যদি নিজেরা প্রাথমিকচিকিৎসা সম্পর্কে
সচেতন হই এবং অন্যকে সচেতন করি, তবে অকাল করুন অবস্থা থেকে যে কেউ বাঁচতে
পারবে। এক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
গুলোতে বিভিন্ন first aid Training programme এবং
বিভিন্ন সামাজিক সেচ্ছাসেবী সংঘটন গুলোতে
জোরালো ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা
শিক্ষনের ব্যবস্থা করতে হবে।
এক্ষেত্রে সেচ্ছাসেবী মূলক সংগঠন যেমন স্কাউট, রেডক্রিসেন্ট উল্লেখযোগ্য
অবদান রাখছে। মনে রাখবেন আপনার এই তাৎক্ষণিক সেবাই হয়ত রোগীকে চরম বিপদজনক অবস্থা
খেকে বাঁচাতে পারে। রোগীটি হতেই পারে আমার পরিবারের কেউ, আমার সমাজের কেউ, আমার
দেশের কেউ, একটু সেবা পাওয়ার অধিকার সবারই আছে। মানব ধর্ম সেবা করা। তাই আমাদের প্রত্যেকের
প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান থাকা উচিত। এমনকি প্রতেকের কাছে একটি করে
first aid box থাকা উচিত।
লিখেছন-
সোনিয়া আক্তার পুষ্প
শিক্ষার্থী-
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
No comments