শফিকুল এই সন্তানদের মাঝেই হয়তো তার আল আমিনকে খুঁজে ফেরে
লালমনিরহাটের ধরলা পাড়ে যে তিনটি চরে আমরা মানুষের জীবন মানের টেকসই উন্নয়নে কাজ করছি তার একটি ওসমান তাঁতীর চর।
এই চরে যেতে ধরলার আদি ধারা পার হতে হয়।
এই ধারা বছরে ৮ মাসই শুকনো থাকে।
কিন্তু বর্ষায় শুকনো এই ধারা বড় নদীতে রুপান্তরিত হয়।
এই সময়ে ওসমান তাঁতীর চরের শিশুদের নগদটারীর চরে আমাদের স্কুলে আসা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
আমরা এর সমাধান খুঁজছিলাম ।
আল আমিনকে মনে আছে? আমাদের স্কুল থেকে প্রাইমারী পাশ করে দূরে হাই স্কুলে ক্লাস সিক্সএ পড়তো।
গত জানুয়ারিতে তার ব্রেইন টিউমার ধরা পড়ে।
আমরা লালমনিরহাট, রংপুর মেডিকেল, ঢাকার নিউরো সাইন্স হাসপাতাল, মহাখালীর জাতীয় ক্যান্সার হাসপাতালে তার চিকিৎসার ব্যাবস্থা করেছিলাম।
গত জুন মাসে আল আমিন রংপুর মেডিকেল কলেজে মারা যায়।
তার বাবা শফিকুল। পেশায় জেলে। যদিও আল আমিনের চিকিৎসা ব্যয় আমরা বহন করে ছিলাম, তারপরও নৌকা, জাল, আমাদের দেয়া ছাগল সবই বিক্রি করে দিতে হয়েছিল।
শফিকুলকে আবার আমরা বড় নৌকা বানিয়ে দিয়েছি, জাল কিনে দিয়েছি।
এখন শফিকুল তার নৌকায় সকালে দুই শিফটে ছাত্র ছাত্রীদের পুরানো ধরলা পার করে স্কুলে পৌছে দেয়। আবার বিকেলে দুই বারে তাদের ওসমান তাঁতীর চরে নামিয়ে দিয়ে আসে।
শফিকুলকে এই পারাপারের দায়িত্ব পালনের জন্য মাসিক বেতন দেয়া হচ্ছে। বাকী সময়ে সে ধরলায় মাছ ধরে।
শফিকুলের এই নৌকা ভরা বর্ষায় ২৪ টি বাচ্চার স্কুলে আসা নিশ্চিত করেছে। আমরাও সাধ্যমত শফিকুলের প্রতি খেয়াল রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
শফিকুল এই সন্তানদের মাঝেই হয়তো তার আল আমিনকে খুঁজে ফেরে। সে তার ছোট মেয়েটাকে আমাদের স্কুলে ক্লাস ওয়ানে ভর্তি করে দিয়েছে।
"একজনকেও পেছনে রেখে নয়" টেকসই উন্নয়নের এই শ্লোগান আমাদের সভাপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক জনাব মোঃ আবুল কালাম আজাদ স্যারের মুখ থেকে শোনা। তাঁর উচ্চারিত এই উক্তি বাস্তবায়নে আমরা অংগীকারাবদ্ধ।
একজন শফিকুল বা পুরানো ধরলা পার হতে না পারা ওসমান তাঁতীর চরের একটি শিশুকেও বাদ রেখে আমরা স্কাউটের চরে টেকসই উন্নয়নের কথা ভাবি না।
আমাদের চাইতে সংখ্যায়, অর্থে, দক্ষতায় বড় এমন অনেক ভাল স্কাউট ও রোভার দল এ দেশে আছে। তাঁরা যদি এমন ছোট ছোট চরের, গ্রামের বা শহরের সুবিধা বঞ্চিত মানুষের জীবন মান উন্নয়নের দায়িত্ব নেন স্কাউটিং এর মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের সফল বাস্তবায়ন সহজ হবে। স্কাউটিং দৃশ্যমান হবে। অভিভাবকগন তাঁদের সন্তানদের স্কাউটিং করতে উৎসাহিত করবে।
সারা বিশ্বে এদেশের স্কাউটিং এর সংবাদ ছড়িয়ে পড়বে।
আমাদের অভিজ্ঞতায় এ কাজে দলগুলিকে যে কোন সহায়তা দিতে আমরা অংগীকারবদ্ধ।
#SDGsbyCrystal
#Scouts4SDGs
লিখেছেন-
Sarwar Mohammad Shahriar
National Commissioner at Bangladesh Scouts
Founder at CRYSTAL OPEN SCOUTS
No comments