মানুষকে চমকে দিতে মাঝে মাঝে মজাই লাগে- সিএনজি ড্রাইভারের জরিমানা
সিএনজি ড্রাইভারের জরিমানা
আজ আমি 'ক্রু মিটিংয়ে' গিয়েছিলাম
বিশ্ব স্কাউট সংস্থা থেকে লালমনিরহাটের চরে আমাদের (কৃস্টাল ওপেন স্কাউটস
এর) কাজের উপর যে প্রামান্য চিত্র বানাতে আসছে, তার প্রস্তুতির জন্য।
ক্রু মিটিং শেষ করে শাফায়াত,
সালাহ হুদ দীন, সাগরসহ অন্যদের নিয়ে জুম্মার নামাজ পড়ে একটা সিএনজি অটো নিয়ে বাসার দিকে রওয়ানা হয়েছি।
জুম্মার পর পর রাস্তা ঘাট একটু ফাঁকা।
সিএনজি শান্তিনগর মোড়ে এসে বেইলী রোডে ঢুকতেই ড্রাইভারকে মানা করে বললাম, "বেইলী রোড ওয়ান ওয়ে। ঢুকো না"।
ড্রাইভার আমার কথা না শুনে ঢুকে পড়লো। বলে "একটানে চলে যাবো স্যার, সমস্যা হবে না"। " এখন রাস্তায় কেউ নাই "।
আমি চুপচাপ বসে আছি।
গাড়ী ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সামনে আসতেই দুই সার্জেন্ট গাড়ী থামালো।
ড্রাইভার এর কাছে লাইসেন্স ও কাগজপত্র চাচ্ছে সার্জেন্ট।
কিন্তু ড্রাইভার দিচ্ছে না।
ড্রাইভার প্রথমে মিথ্যা বলে যে, "আমরা এই সিদ্ধেশ্বরী কলেজের সামনেই নামবো"।
সে আমার দিকে তাকিয়ে তার কথায় আমার সায় চাচ্ছিল।
আমি সায় না দিয়ে চুপচাপ বসে আছি।
সার্জেন্ট ধমকাচ্ছে লাইসেন্স এর জন্য।
এবার ড্রাইভার একশ টাকার একটা নোট বের করতেই সার্জেন্ট চেঁচিয়ে উঠে বললো,
"টাকা বের করলে তোকে আজ একদম মেরে ফেলবো"।" তোরতো সাহস কম না! " সার্জেন্ট
এর সততা ভাল লাগলো।
আমার চুপ থাকা, সাদা চুল দাঁড়ি সার্জেন্টকে বোধকরি কৌতুহলী করে তুলেছে।
সার্জেন্ট আমার কাছে জানতে চাইলো, 'আমার পরিচয় কি'?
আমি শান্ত গলায় বললাম, "আমার পরিচয় জানা এ ক্ষেত্রে জরুরী নয়, আপনি আপনার ডিউটি করুন"।
অবস্থা বেগতিক দেখে ড্রাইভার গাড়ী থেকে নেমে লাইসেন্স, গাড়ীর কাগজপত্র বের
করে সার্জেন্ট এর হাতে দিয়ে আমাকে ফিস ফিস করে শেষ বারের মত কিছু একটা
করার জন্য অনুরোধ করে।
সার্জেন্ট সব কাগজপত্র নিয়ে দেখে মেশিন বের
করেছে জরিমানা করবে বলে। সিএনজির যে পাশে আমি বসা তার পাশেই সার্জেন্ট
দাঁড়িয়ে কাজ করছিল।
ড্রাইভার তখন সার্জেন্টের কাছে অনুনয় বিনয় করছে শাস্তি কম করার জন্য।
সার্জেন্ট বললো "মাত্র ১২০০ টাকা জরিমানা করবো"। ড্রাইভারের মুখ শুকিয়ে গেছে।
এবার আমি মুখ খুললাম।
সার্জেন্টকে অনুরোধ করে বললাম "ড্রাইভার যেহেতু অনুতপ্ত, জরিমানা যতটা সম্ভব মিনিমাম করবেন"।
মেশিনে অনেক টেপাটেপি হোল। ড্রাইভারের মোবাইল নম্বর লেখা হোল।
মেশিন থেকে কাগজ বেরিয়ে আসলো। ড্রাইভার এর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো, "মাত্র
২০০ টাকা জরিমানা করেছি ; ১০০০ টাকা কম করলাম শুধু এই স্যারের সন্মানে, তোর
ভাগ্য ভাল"।
ড্রাইভারের চেহারায় আমার প্রতি মহা কৃতজ্ঞতা। গাড়ী
স্টার্ট দিয়ে মগবাজার ফ্লাইওভার ধরে বিজয় স্মরণী হয়ে মোহাম্মদপুরে বাসার
সামনে এসে থামলাম।
ভাড়া দিলাম।
এর পর পকেট থেকে আলাদা ২০০ টাকা বের করে ড্রাইভারের হাতে দিয়ে বললাম "আজই ইউক্যাশের মাধ্যমে জরিমানা পরিশোধ করে দাও"।
তার জরিমানার টাকাটা আমিই দিয়ে দিলাম।
ড্রাইভারের ব্যাপারটা বুঝতে বোধকরি একটু সময় লাগছিল।
তাকে বিভ্রান্ত মনে হচ্ছিল ।
মানুষকে চমকে দিতে মাঝে মাঝে মজাই লাগে।
লিখেছেন-
National Commissioner at Bangladesh Scouts
Founder at CRYSTAL OPEN SCOUTS
No comments