দ্যা ডেইলি এজুখেইশনে বিজ্ঞাপন দিতে কল করুন

+88 01521 20 70 54 (Call for Ad)

সততার সাত সংকট - সহজ সমাধান! - মাশাহেদ হাসান সীমান্ত

Mashahed Hassan Simanta 

সততার সাত সংকট - সহজ সমাধান!

১।
আপনি সৎ থেকে যখন আপনার ভাইকে, ভাতিজাকে, গ্রামের পরিচিত দুঃসম্পর্কের কাছের আত্মীয়কে অনৈতিক সুযোগ দিতে পারবেন না, অবৈধ তদবির করতে চাইবেন না, তখন আপনাকে শুনতে হবে; আপনি তো ভাই/বোন হিসেবে কোন দায়িত্বই পালন করেন নাই; বড় চাকুরি করে গ্রামের কথা ভুলে গেছেন।
“আরে, পুলিশ/ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে যদি ঘরের আর গ্রামের কয়জনরে চাকরিতেই ঢুকাইতে না পারে, তাইলে সে অফিসার হয়ে আমাদের কী লাভ!”
অথচ তাদের পড়াশুনার খরচ চালানো, পরিবারের খরচ দেয়া ছিলো আপনার ভাই হিসেবে, পরিবারের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব; গ্রামের মানুষদের আপনার অভিজ্ঞতা আর সৎ পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করা ছিলো আপনার কর্তব্য; যেটা আপনি করেছিলেন।
কিন্তু না, এরপরও আপনি একজন অকৃতজ্ঞ আর অহংকারী। কারণ আপনি তো অন্যায় তদবির করেন না।

২।
ঢাকার রাস্তায় জ্যামে বসে আছেন। আপনি একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। আপনার গাড়ির সামনে একটা ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড, সামনের সিটে গানম্যান। প্রত্যেকটা গাড়ির জানালায় প্রকৃত আর অভিনেতা ভিক্ষুকদের সমাগম। আপনার এই ক্ষমতা আর বেতন আল্লাহর ইচ্ছায় আর সরকারের উসিলায় পাওয়া।
কিন্তু গাড়ির চাকচিক্য দেখে আপনার কাছ থেকে বেশি টাকা পাবার আশায় হাত বাড়ালে আপনি যখন আপনার প্রকৃত সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের সাহায্য করবেন; সেই টাকার অংকটা তাদের পছন্দ হবে না।
অস্ফুট কন্ঠে তাঁরা আপনাকে বলবে, ‘ছোটোলোক!’; কত টাকা লাগে তোদের!
অথচ আপনার নিয়ত কিন্তু পরিষ্কার। হারাম টাকা আপনি কামানও নি, তাদেরকেও হারাম টাকার সাথে জড়াচ্ছেন না। আর স্বল্প বেতনে হাতেম তাঈ হওয়াও আপনার পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু না, যাদের সাহায্য করতে চান, তাদের চোখেই আপনি ‘রক্তচোষা ক্যাপিটালিস্ট’; আর অহংকারী-বিত্তশালী।

৩।
আপনি একটা টাকাও ঘুষ খান না, কিন্তু আপনার রুমে ঢুকতে যে পিওনকে বলতে হয় সে সবার কাছে টাকা চাইবে, বাইরের কেউ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে চাইলে, বলে বসবে, ‘ আরে কার কাছে অভিযোগ দিবি, টাকা কি আর আমি রাখমু না কি; এইগুলো তো ভিতরের স্যারই নেবে। স্যার কি নিজ মুখে বলবে না কি ঘুষের কথা।‘
যে মানুষটি কাজ নিয়ে এসেছিলো, সে ভেতরে গিয়ে কখনই সত্য যাচাই করবে না। আপনি জানবেনও না, সারা জীবনের জন্য আপনি একটা ঘৃণিত মানুষ হিসেবেই বিবেচিত হয়ে গেছেন।
আপনি ভেতর থেকে সৎ আর সজ্জন, আপনার নিজেকে সৎ হিসেবে প্রমাণ করার কোনও তাগিদ নেই, এরপরও আপনার চোখের আড়ালে মানুষ আপনাকে অভিশাপ দেবে।
(সৎ মানুষদের নিরবতা অনেক ক্ষেত্রেই তাদের জন্য ক্ষতিকর)

৪।
আপনি হয়তো জানলেন, আপনার নিচের এক স্থানীয় স্টাফ দুর্নীতিগ্রস্থ। আপনি কিছুই করতে পারবেন না। আপনি সরকারি বেতনভুক্ত অফিসার, যে কি না ভোটের দিন দায়িত্বে থাকবেন, কিন্তু ভোট দিতে পারবেন না। কিন্তু ওই স্থানীয় স্টাফ একজন ভোটার, তাঁর একটা পরিবার আছে, তাদের আত্মীয় স্বজন আছে। একজনকে একটা ঝামেলা থেকে বাঁচালে কমপক্ষে ২০টা সলিড ভোট কনফার্ম!
কে থাকবে আপনার পাশে?

৫।
আপনি সৎ। মানুষ এসে যদি আপনার সততার অত্যধিক প্রশংসা করেন, তাহলে এর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের কোনও অসৎ উদ্দেশ্যে আপনাকে কাজে লাগাবে। যেই ক্ষেত্রগুলোতে শুধু মাত্র দেশের কল্যাণ চিন্তার কারণেই তাঁরা আপনাকে অপছন্দ করা শুরু করবে।

এদেশের অনেক সুবিধাবাদী মানুষের কাছে খারাপ হবার জন্য দেশের ভালো বোঝাটাই যথেষ্ট; কারণ আমরা অফিসে সৎ মানুষও চাই, আবার নিজের জন্য অসৎ সুবিধাও চাই। - সীমান্ত

৬।
মনে করুন আপনার গ্রামে কারও একটা বৈধ জমির কাগজ আটকে আছে। যার জমিটি প্রাপ্য তিনি হয়তো লেখাপড়ায় খুব বেশি অগ্রসর নন। আপনি কোনও টাকা ছাড়াই সৎ আর বৈধভাবে তাকে নিজে কিংবা আপনার অন্য কোনোও কলিগকে দিয়ে সাহায্য করতে চান।
সেই মানুষটি আপনার কাছে হয়তো পৌঁছাবে আপনার কোনোও পরিচিত কিংবা আত্মীয়ের দ্বারা। গোপন ডিলিংসটা এমন হবে, শোনো, আমার শালাতো অনেক বড় ম্যাজিস্ট্রেট। আমি বললেই কাজ হয়ে যাবে, তো শালার জন্য একটা টিভি কেনার টাকা তো দিতেই পারো। এতো বড় জমি পাচ্ছো।
একদিকে গোপনে আপনার আত্মীয় আপনার নাম ভাঙ্গিয়ে টাকা নেবেন; অন্য দিকে আপনি না জেনে সৎ মনে তাদের কাজ করে দেবেন। দিন শেষে ফলভোগী মানুষটি মনে করবে, টাকার জন্যই আজ সে জমিটা পেলো। আপনার আত্মীয়দের গোপন ব্যবসা চলতে থাকবে, আপনি কিছুই করতে পারবেন না।

৭।
চাকুরি শেষ! আপনার এখন অবসর জীবন। অবৈধভাবে বাড়ি-গাড়ি কিছু করেন নি। যমুনা ফিউচার পার্কে আপনার শপিং হবে না। হবে নিউ মার্কেটে। আর পাঁচটা মানুষের মত রিকশায় আসবেন; দামাদামি করবেন। এর মাঝে হঠাৎ আপনার কিছু বন্ধু কিংবা আত্মীয় আসবেন, আরে তুই তো বোকা! সময় থাকতে কেন টাকা কামিয়ে নিলি না। দেখ আমাদের এখন কী অবস্থা!

আপনি কি সত্যিই অনেক বোকা ছিলেন? হযরত আলি (রা.) বোকাদেরকে নিয়ে একটা উক্তি করেছিলেন; ‘বোকারা তর্ক করে; আর জ্ঞানীরা প্রশ্ন করে,’
সৃষ্টিকর্তা যদি যদি আমাদের প্রশ্ন করে, ‘আমি কি কখনও তোমাকে দুপুরের খাবারের জন্য রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করিয়েছিলাম?’
আমাদের অধিকাংশের উত্তর হবে’ “না”।
সৃষ্টিকর্তার পালটা প্রশ্ন যদি হয়, "তাহলে তোমার কীসের এত চাহিদা ছিলো?"; তখন আমাদের উত্তর কী হবে?


সততার সাত সংকট - সহজ সমাধান!
লিখেছেন-
মাশাহেদ হাসান সীমান্ত

No comments

Powered by Blogger.