মাতৃভাষা দিবসে শহীদমিনারে সেবাদানরত রোভারদের গল্প
দেশপ্রেম, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা, সাহসিকতা, পরোপকার আর
সেবার দৃপ্ত শপথে বলীয়ান সারাবিশ্বের ৪০ মিলিয়নেরও অধিক স্কাউটস। পিছিয়ে নেই আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ।
বর্তমানে প্রায় ১৭ লক্ষ স্কাউটার রয়েছে যারা সেবার মানসিকতা নিয়ে নিরলসভাবে কাজ
করে যাচ্ছে। বন্যাকবলিত অঞ্চলে ত্রাণপ্রদান, ট্রাফিক সপ্তাহে জনসচেতনতা গড়ে তোলা, দুর্গতদের সেবাদানসহ যেকোন দুর্যোগ কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত
দুর্ঘটনায় তাৎক্ষণিক সেবাদান করতে সদা প্রস্তুত বাংলাদেশ স্কাউটস।
২১ শে ফেব্রুয়ারি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ২০০০ সাল থেকে
সারাবিশ্বে মহাসমারোহে পালিত হচ্ছে এই দিবসটি। প্রতিবছর এই মহান দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয়
শহীদ মিনারে সহস্র জনতার ঢল নামে। এই জনসমুদ্রের নিরাপত্তা, শৃঙ্খলাসহ সার্বিক সেবাপ্রদানের দায়িত্ব পালন করে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রুপসহ সারাদেশের বিভিন্ন ইউনিটের অসংখ্য দেশপ্রেমী রোভাররা।
তেমনি একজন রোভার তাজুল ইসলাম। শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজ রোভার স্কাউট
গ্রুপের একজন চৌকষ রোভার। ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে ট্রেনে চেপে যাত্রা শুরু করেন। ২০ ফেব্রুয়ারি
সকালবেলা এসে পৌঁছান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। তার অনুভূতি জানতে চাইলে
হসিমুখে জবাব দেন-
"সেবার মধ্যে আনন্দ খুঁজে পাই।"
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রোভার স্কাউট গ্রুপের রোভার মেট মো. বিলাল
হোসেন অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন-
"এত মানুষের মাঝে শহীদ মিনারে দায়িত্ব পালনের অনুভূতি অন্যান্য দিনের চেয়ে অনেক আলাদা । বাংলা ভাষার গৌরবান্বিত ইতিহাস রক্ষায় প্রয়োজন ১৬ কোটি অতন্দ্র প্রহরীর সম্মিলিত প্রয়াস।"
আরেকজন রোভার আবু মুছা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রুপের
একজন রোভারমেট। শহীদমিনারে আগত লোকজনের শৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।
শহীদমিনারে সেবাদানের অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি হাসিমুখে
বলেন-
"কাকডাকা ভোরে ডেনে আসি। সর্বস্তরের জনগণ বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের উত্তাল বারিধারার ন্যায় আসতে থাকে শহীদমিনারে। এই দেশপ্রেমী মানুষদের সেবাদান করতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি।"
মো. ফেরদাউস খান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রুপের সদস্য
স্তরের রোভার। তার কাছে এই সেবাপ্রদান মাহা আনন্দের। তিনি বলেন-
"সেবাই যেহেতু আমাদের মূলমন্ত্র সেহেতু তা আমাদের ধারণ করাই উচিত।"
সারারাত চলে এই জনতার স্রোত। সকালবেলা এই জনসমুদ্র বিশাল আকার ধারণ
করে। সকালবেলা বেলা গার্ল-ইন-রোভারের বিশাল একটি দল এসে যোগ দেয়। তারা
শহীদ মিনারে প্রদানকৃত ফুল দিয়ে শহীদ বেদীকে অপরূপ সাজে সজ্জিত করে। গার্ল ইন রোভারদের
নিপুণ হাতের সুনিপুণ পরশে অনন্য রূপ ধারণ করে শহীদমিনার।
তেমনি একজন প্রতিভাবান গার্ল ইন রোভার নিগার সুলতানা সুপ্তি। গত কয়েকবছর যাবৎ যিনি এই কাজ করে আসছেন।
তিনি বলেন-
" রোভারিং আমার ভালবাসার জায়গা। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শহীদমিনারে সেবাদানের মুহূর্তের জন্য সারাবছর প্রতীক্ষায় থাকি। সকালবেলা কাকডাকা ভোরে সকল গার্ল ইন রোভারদের নিয়ে শহীদ বেদীতে চলে আসি। হৃদয়ের সাজে সজ্জিত করি শহীদ বেদী। এই সাজে রয়েছে কৃষ্ণচূড়া ফুলের সৌন্দর্য, রয়েছে শহীদদের রক্তের এক বেদনার্ত ইতিহাস। যখনই আমার মৃত ভাইদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করি অশ্রুজলে সিক্ত হই। তাদের দেশপ্রেমের আদর্শে অনুপ্রাণীত হয়ে দেশ গঠনের শপথ নিই।"
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গার্ল-ইন-রোভার ইউনিটের সিনিয়র রোভার মেট
সনিয়া আক্তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন-
শুভ্রতার উষ্ণতা গায়ে মেখে
শহীদ মিনারে ছুটে চলা ছলছল চোখে
উজ্জ্বল ভাবমূর্তি হৃদয়ে ধ্বনিত একটাই কথা
"আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি। "
এভাবে রোভারবৃন্দ তাদের দেশপ্রেম, কর্তব্যনিষ্ঠা
ও সেবার পরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেন। আগামীর বাংলাদেশ এগিয়ে যাক রোভার স্কাউটদের হাতধরে
অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায়।
লেখক-
রোভারমেট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট
গ্রুপ।
No comments