দ্যা ডেইলি এজুখেইশনে বিজ্ঞাপন দিতে কল করুন

+88 01521 20 70 54 (Call for Ad)

বাঙ্গালির উৎসবের আবেগ ও নাড়ির টান


উৎসবের আবেগ ও হার না মানা বাঙ্গালি-    
হাশেম মিয়া আগের দিন রাত এগারোটা থেকে অপেক্ষায়। আসছে ছোট ঈদে পরিবারের সাথে ঈদ করার জন্য অগ্রিম টিকেট কাটার অপেক্ষা। সকাল ৮ টা থেকে চান্দের রাতের মানে ঈদের আগের দিনের টিকেট পাওয়া যাবে। সে হিসেবে কর্মজীবী মানুষদের জন্য আগের দিনের টিকেটই যে অতীব প্রয়োজনীয়। আঞ্চলিকতার সুবাধে উত্তরবঙ্গে ঈদকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। যেমন ঈদুল ফিতর বা রোজার ঈদকে ছোট ঈদ, চান্দের ঈদ প্রভৃতি নামে।    

দীর্ঘ ১২ ঘন্টা ২০ মিনিট অপেক্ষার পর হাতে পেলেন কাঙ্ক্ষিত একখানা টিকেট। প্রায় এক সপ্তাহের প্রস্তুতির পর ভোর বেলা রওনা দিলেন কমলাপুর স্টেশনের দিকে। উদ্দ্যেশ্য একটাই বাড়ি গিয়ে মা-বাবা সহ কাছের আত্মীয়দের সাথে ঈদের আনন্দ উপভোগ করা। কিন্তু স্টেশনে পৌঁছে যা ঘটল তা যে করুণ কাহিনীতে টাসা তা হাসেম মিয়ার কাছে অকল্পনীয়ই ছিল। কারো ভাবনায় আসার কথাও না। 

ট্রেন ছাড়ার ২০ মিনিট আগে পৌঁছে দেখলেন প্রচন্ড ভিড়। ভিড় ঠেলে প্ল্যাটফর্মে পৌঁছে জানতে পারলেন তার গন্তব্যের ট্রেন এখনো রংপুর স্টেশন থেকে ছাড়েনি। গতকাল রাতে যাত্রা করে আজ সকালে ঢাকা পৌঁছে পুনঃরায় রংপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করার কথা। কখন ট্রেন আসবে আর কখন স্বপ্নের পথে যাত্রা শুরু হবে তা অজানা। অপেক্ষার রশি যে বিশাল, তা দরিয়ার অকূলকেও হার মানায়। বুকে পাহাড়সম আশা নিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনেন হাশেম মিয়া। দীর্ঘ অপেক্ষায় পরিশ্রান্ত দেহের কোষগুলোও থেমে গিয়ে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েন তা জানেন না হাশেম। নিঃতেজ কোষের ঘুম যে স্বপ্নকেও ঘুম পারিয়ে দিবে তা কি হাশেম সাহেব জানতেন? নিশ্চয়ই জানতেন না।

জেগে যখন জানতে পারলেন কাল ঘুম তার স্বপ্নকেও ঘুম পারিয়ে দিয়েছে। ট্রেন স্টেশন ত্যাগ করার ৪০ মিনিট পর হাশেম মিয়া দায়িত্বরত এক পুলিশ কনস্টেবলকে টিকেটখানা দেখাইয়া জানতে চাইলেন, সাহেব এই ট্রেনটা আসতে আর কতক্ষণ বাকি? পুলিশের উত্তর পেয়ে হাশেম কান্না জনিত কণ্ঠে উপরওয়ালার কাছে ভীর ভীর করে কি যেন বলতে লাগলেন।

হাশেম মিয়া কি তার পরিবারের সাথে ঈদ করার স্বপ্ন,স্বপ্নেই থেকে যাবে? না! হাশেম সাহেবরা হার মানার পাত্র নন। হার মানা যে তাদের হিসাবে নাই। তারা জীনগতভাবে পেয়ে আসছেন, কিভাবে কন্টকময় পথকে জয় করতে হয়। কিভাবে বাঙ্গালি উৎসব,পার্বণে শত বাঁধা উপেক্ষা করেও পরিবারের সাথে অনুষ্ঠান উদযাপন করতে হয়!

এই বৈশিষ্ট্য কি শুধু হাশেম সাহেবদের মাঝেই বিদ্যমান? এই শ্বাসত, একক বৈশিষ্ট্য সকল বাঙ্গালির ক্ষেত্রেও পরিলক্ষিত হয়। বিশ্বের বুকে প্রত্যেকটা জাতির নিজস্ব রঙ্গ ও ঢঙ্গের কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে, যা ঐ জাতিকে অন্যান্য জাতি থেকে অনন্য করে তুলে।  

এই একতা, রক্তের বন্ধনের ভিত্তিতে আচার-অনুষ্ঠান পালন করা। যেমন ঈদ,পূজা,পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ ইত্যাদি। বাঙ্গালির এই একতাই যে অপরাজেয় শক্তি। যা যেকোন অপশক্তিকে পরাজিত করতে সক্ষম। যার প্রমাণ আমরা ১৯৭১ সালে দেখিয়েছি। 

বিশ্বের মাত্র যে দুইটা জাতি আছে যারা রণাঙ্গনে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে নিজেদেরকে স্বাধীন করেছে বাংলাদেশ তন্মধ্যে অন্যতম। সমসাময়িক কালে সাম্প্রদায়িক শক্তি এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সফলতার পেছনের মূল শক্তিও অসাম্প্রদায়িক চেতনার ঐক্যবোধ। বাঙ্গালি জাতিকে এ একতার শক্তিই যে একদিন বিশ্বের নেতৃত্ব স্থানে আসীন করবে। তাহার প্রমাণ নেতৃস্থানীয় জাতিগুলোর ইতিহাসের দিকে নজর দিলেই বুঝা যায়।
-
লিখেছেন
এম. এ. মুহিত খান
শিক্ষার্থী
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। 

No comments

Powered by Blogger.