দত্তা (উপন্যাস) | লেখক- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় | কাহিনি সংক্ষেপ | রিভিউ | নাসিম আহমেদ
১৯১৮ সালে শরৎচন্দ্রের রচিত উপন্যাস এই 'দত্তা'। গ্রামীণ পরিবেশের আলোকে রচিত এ উপন্যাসে প্রেম ভালোবাসা রাগ অভিমান আর অত্যাচারদের কূটকৌশল সবই ধরা পড়েছে। আমি যত বার এই বিখ্যাত কথাসাহিত্যিকের উপন্যাস পড়ি তখনি আবেগ আপ্লুত হয়ে যাই। পরে যাই তার লেখার প্রেমে, ছেঁয়ে যায় মন থেকে মনে।
তিনজন বন্ধু বনমালী, রাসবিহারী আর জগদীশ। এক সাথে পড়াশুনা করে বড় হয়। লক্ষ্য আশা আকাক্ষা অনেক বড় ছিল কিন্তু কোন এক ঝড়ে তা টিকে থাকেনি ৩জনের জীবন। বনমালী আর রাসবিহারী ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করে। কিন্তু জগদীশ তা না পেরে বিয়ে করে চলে যায় পশ্চিমে। কলকাতায় বনমালী আর গ্রামে রাসবিহারী। জগদীশের ছেলে নরেন। তার ইচ্ছা ছেলের বিয়ে তিনি বনমালীর মেয়ের সাথে দিবেন। কিন্তু তখনো বনমালীর মেয়ে পৃথিবীর মুখ দেখে নাই। রাসবিহারীর ছেলে বিলাস।
বনমালীর ছিল বিশাল জমিদারি। তাই তিনি টাকা পয়সা খরচ করে বন্ধুপুত্র নরেন-কে বিলেত পাঠায় ডাক্তারি পড়বার জন্য। হয় ও তাই। একসময় অনেক সম্পদের মালিক জগদীশ নেশাগ্রস্থ হয়ে ঋণী হয়ে পড়েন বনমালীর কাছে। পরে তিনি মারা যান। ওদিকে নরেনের সাথে আজীবন দেখা না হওয়ার আগেই সব কিছু বুঝিয়ে পরপারে চলে যান বিজয়ার পিতা বনমালী। তার জমিদারীর ভার গ্রামে নেন রাসবিহারী। হুট করে গ্রামে এসে পিতার জমিদারী নিজের হাদে তুলে নেন বিজয়া। জানতেন, পিতৃবন্ধু জগদীশের সব সম্পদ ঋণী। তা নিজের করে নিতে হবে।
রাসবিহারী আর বিলাশ কখনোই চাইতেন না বাবার ঋণ শোধ করার সুযোগ নরেন-কে দিতে। রাসবিহারীর কৌশল হলো ছেলের সাথে বিজয়ার বিয়ে দিয়ে সকল জমিদারীর মালিক হবে তারা। সেজন্য তাদের সুনিপুণ কূট চালের দেখা পাওয়া যায়। বিজয়ার ইচ্ছা নরেনের সাথে দেখা করার, তাকে ঋণ শোধ করার সুযোগ দেয়া। একদিন গ্রামে পূজার ধারা অব্যাহত রাখতে বিজয়া আর বিলাশের সাথে দেখা করে নরেন। কিন্তু তারা তাকে চিনতে পারেনি। বড়দিনের দিন সবার সম্মুখে রাসবিহারী ঘোষণা দেয় আগামী বৈশাখ মাসে বিলাস ও বিজয়ার বিয়ে দিতে চান। সেখানে বিজয়ার মত থাকে না।
বিজয়া নদীর ধারে ঘুরতে গেলে একজন লোকের সাথে তার দেখা হয় তিনিই যে নরেন তা সে জানত না। বিলাস নরেন বাবুর পাঠশালা উচ্ছেদ করতে গিয়ে তার পরিচয় পান। বিজয়াও চিনতে পারে। পরে নরেন আর বিজয়ার মধ্যে মাইক্রোস্কোপ নিয়ে নানান কথা বার্তা হয়।
নরেনকে বিজয়ার ভালো লাগত কিন্তু বলেনি কখনো। তাদের কত কথা, কত খুনসুটি ছিল। কিন্তু রাসবিহারী ও বিলাস এগুলো পছন্দ করতো না। সব সময় দেখা হলেই নরেন কে তারা অপমান করতো। বিশেষ করে বিলাস তাকে দেখতেই পেতো না। বিজয়ার ছিল জ্বর, নরেন তাকে সুস্থ করে তোলে। তাকে দেখলেই বিজয়া সুস্থ হতো। এমনকি আচার্য দয়াল ও ভৃত্য পরেশের অসুখও তিনি ভালো করেন।
রাসবিহারীর কথা বার্তায় নরেন বুঝতে পারে পুত্র বিলাসের সাথে বিজয়ার বিয়ে দিবেন। প্রেমটা ধরা পড়ে নরেনের। ভালোবাসার উত্তপ্ত বাতাস সে বুঝতে পারে। দয়ালসিংয়ের ভাগনি ছিল নলিনী। সে বি.এ পড়তেছে। নরেন তাকে সাহায্য করে যাতে ভালো রেজাল্ট করে ডাক্তারি পড়তে যেতে পারে। এদিকে বিলাস ও রাসবিহারীকে বুঝতে পারে স্বার্থপর ও লোভী বলে। তখনো নরেনকে সে মনে মনে ভাবত, ভালবাসত। কিন্তু যখন নিজের চোখে দেখে মলিনীকে পড়াচ্ছে নরেন বাবু আর দয়াল বাবার একপক্ষে বিয়ের কথা শুনে নরেনের প্রতি তার ঘৃণা জন্মে।
শুধু নরেনের প্রতিই নয়, পুরো পুরুষ জাতিকে সে এক কাঠগড়ায় দাঁড় করায়। সে মনে মনে ভাবে, হয়তো বিলাসের ভালোবাসায় ঠিক। তাই সে রাসবিহারীর দেয়া বিয়ের রেজিস্ট্র পেপারে সই করে দেয়। পরে নরেন তার সাথে দেখা করতে এলে সব ভুল বোঝাবুঝি ধরা পড়ে। মলিনীর সাথে তার বিয়ে সে কল্পনাও করতে পারেনা। বিজয়া ভাবে তাহলে দয়াল বাবার কথা ছিল অনুমান করা, একচোখা। কিন্তু ততক্ষণে দেরী হয়ে গেছে। বিজয়া বিয়ের সম্মতি দিয়েছে বিলাসকে। এখন মরণ ছাড়া তার উপায় নাই।
দয়াল বাবা ছিল বিজয়ার পিতার সময়ের লোক। সে জানত বনমালী তার মেয়ে বিজয়ার সাথে জগদীশের ছেলের বিয়ে দিতে চান। এ নিয়ে জগদীশ - বনমালীর কাছে চিঠিপত্র আদানপ্রদান হয়। সে প্রমাণ বর্তমান আছে। দয়াল জানত বিজয়া আর নরেন দুজন দুজনকে ভালোবাসে, চেনে, জানে। তারা একত্র হতে যায়। ব্রাহ্মসমাজের বাইরে গিয়ে পুরো হিন্দু রীতিতে নরেন- বিজয়ার বিবাহ সম্পন্ন করেন। নেমন্তন্ন রাসবিহারী বাবু এসে যা দেখলেন তা তার কাছে কল্পনাতীত।
বি:দ্র: ১০০ বছর পর হলেও এ উপন্যাসের চলচ্চিত্র তৈরি হতে যাচ্ছে। বিজয়ার চরিত্রে পশ্চিম বাংলার নায়িকা ঋতুপর্না আর নরেনের চরিত্রে অভিনয় করবেন বাংলাদেশের নায়ক ফেরদৌস। ছবিটির কাজ সম্ভবত শুরু হয়ে গেছে। অপেক্ষা করছি মুভিটির জন্য। চমৎকার একটা মুভি উপহার দিবে বলে মনে করি। ভুল ত্রুটি মার্জনীয়
লিখেছেন-
শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments