নৈতিকতার চরম অবক্ষয়ের কারন ও সমাধান
বর্তমানে আমরা এক নিষ্ঠুর যুগে বাস করছি। যেখানে মানুষের আচার -আচরণ পশুর চেয়েও জঘন্য হয়ে গেছে। মানুষ আজ সভ্যতার চরম পর্যায়ে এসে আবার চরম অসভ্যতার দিকে ফিরে যাচ্ছে।
আজ মানুষের অন্তর থেকে বিবেকবোধ উঠে যাচ্ছে। হ্যাঁ, সব কিছুরই উন্নয়ন ঘটেছে সভ্যতার এই যুগে। দালানকোঠা বেড়েছে, ফ্লাইওভার হচ্ছে, বিমান চলছে, আজ পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত সরাসরি দেখা যাচ্ছে, ঘরে বসেই দোকানপাট নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, অত্যধিক গরম বা ঠান্ডায় এসির ব্যবস্থাও আছে। অর্থাৎ সভ্যতার এই পর্যায়ে সবই আছে আমাদের। কিন্তু কি নেই আমাদের? আমাদের নেই নৈতিকতা, আমাদের নেই সামাজিক মূল্যবোধ।আজ সর্বত্র অন্যায়ের ছড়াছড়ি। খুন, রাহাজানি ক্রমেই বেড়ে চলছে। দুর্নীতি গ্রাস করে ফেলেছে দেশকে।
এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে যা মহামারি আকার ধারণ করেছে তা হলো ধর্ষণ। আজ এ ভয়াবহ থাবার কবল থেকে ছোট্ট শিশু কিংবা শত বছরের বৃদ্ধাও রেহাই পাচ্ছে না। মানুষের মস্তিষ্ক কত জঘন্য পর্যায়ে গেলে মানুষ এসব করতে পারে?
আজ কোথাও মেয়েরা নিরাপদ না বা কারও কাছেও নিরাপদ না। যে জায়গায় আপন বাবা তার মেয়ের সাথে এমন আচরণ করতে পারে সে জায়গায় একটা মেয়ে কার কাছে নিরাপদ?
এর একটাই কারন নৈতিকতার চরম অবক্ষয়। আর অবক্ষয়ের যথেষ্ট কারন রয়েছে। আজ আমাদের পরিবারগুলো ভেঙে টুকরো টুকরো হচ্ছে। শহরের ক্ষেত্রে বাবা মা থাকে অফিসে। ছেলে -মেয়েরা স্কুলটাইম বাদে বাকি সময় কাটায় সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম, টিভি কিংবা ইন্টারনেটে কুফল দিকের অন্তরালে।
গ্রামে হয়ত বাবা কাজে চলে যান আর মা বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকেন। তাদের পরিবারে সঙ্গ দেয়ার মতো কেউ থাকে না। ফলে শিশুরা পারিবারিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সামাজিক মূল্যবোধ কি জিনিস বা নৈতিকতা কি জিনিস তারা জানে না বা পরিবারগুলোও ছেলে মেয়েদের শিখানোর ক্ষেত্রেও সচেতন না। কাজেই শিশুরা তাদের মতো গড়ে উঠছে অন্য যেকোনো একটা প্রাণীর মতো। অন্যান্য প্রাণীদের মতো তাকেও কোনো মূল্যবোধ শিক্ষা দেয়া হচ্ছে না। সে তার মতো বেড়ে উঠছে। ফলে তারা কার সাথে কেমন আচরণ করবে, কোথায় কিভাবে কথা বলতে হয় এই বিষয়গুলো হাতেকলমে শিখতে পারছে না।
কিন্তু একটা যৌথ পরিবারে থাকে বাবা, মা, ভাই-বোন, চাচা -চাচী, দাদা-দাদি, চাচাতো ভাই-বোন। এভাবে একত্রে বসবাস করার মাধ্যমে শিশুরা পরিবারের লোকদের সাথে সময় কাটানোর সুযোগ পায়। এভাবে তারা পরিবার থেকে পরিপূর্ণ শিক্ষা পেয়ে থাকে। ফলে অনলাইন জগতের প্রতি আসক্তি কমে আসে।
দ্বিতীয়ত হলো আমাদের পড়ালেখার সিস্টেম।আমাদের পড়ালেখার সিস্টেম হলো, পড় পরীক্ষার খাতায় লেখার আগ পর্যন্ত। এখানে ব্যবহারিক জ্ঞানের কোনো চর্চা নেই বা এর উপর কোনো মূল্যায়ন নেই।
জাপানের স্কুলগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, তাদের প্রত্যেকটা শিক্ষা ব্যবহারিক জ্ঞ্যানে পরিপূর্ণ।তাদের স্কুলগুলোতে ছেলেমেয়েরা দল বেঁধে আসে। যে যতই বড়লোক হোক একা গাড়ি দিয়ে চলে আসতে পারবে না বরং কেউ আসলে তাকে অপমানিত হতে হয়। তাদের স্কুলগুলোতে দোকানে কোন বিক্রেতা থাকে না। পণ্যের গায়ে দাম লেখা থাকে তা দেখেই ছাত্ররা নিজ দায়িত্বে টাকা জমা দিয়ে চলে আসে। দুই তিনটি বেসিক বিষয় তারা প্র্যাকটিস করায় যে সব সময় সত্য কথা বলবে, অন্যের উপকার করবে , তা না পারলেও কখনও ক্ষতি করবে না। এই বিষয়গুলো কঠোর ভাবে নজরদারিতে রাখা হয়। এভাবে শিশুরা হয়ে ওঠে সৎ ও নিষ্ঠাবান। যা তাদের পরবর্তী ভবিষ্যৎ জীবনে প্রভাব ফেলে।
একটা গল্প মনে পড়ে গেলো, একজন বাংলাদেশী জাপানি প্রবাসী। ওনি ঐ দেশে ট্যাক্সি চালান, একবার এক লোককে নামানোর পর ওনি ভাড়া দেয়ার সময় পুরোনো টাকাটা রেখে নতুন টাকাটা দিলেন। এই লোক তো আবার বাঙালি তাই একটু খটকা লাগলো। জিজ্ঞেস করলেন আচ্ছা আপনি আমাকে পুরোনো টাকাটা রেখে নতুন টাকা দিলেন কেন?
ঐ লোক বাংলাদেশীকে বললো, কেন আপনি কি পড়াশোনা করেন নি? বইয়ে কি লেখা নাই যে কাওকে কিছু দিতে হলে ভালোটা দিতে হয়? তারাও পড়েছে, আমরাও পড়েছি কিন্তু পার্থক্য হলো তারা মানে আর আমরা খাতায় লিখি কিন্তু মানি না। তাই আমাদের শিক্ষার প্রাথমিক স্তরে প্র্যাক্টিক্যালি সামাজিক মূল্যবোধের শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
আরেকটা বিষয় হলো ধর্মীয় শিক্ষা। যেমন ইসলাম ধর্মে একদম ধরে ধরে সামাজিক মূল্যবোধ, নৈতিকতা শিক্ষা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি এগুলো না মানলে ভয়াবহ শাস্তি এবং মানলে পরকালীন পুরস্কারের কথাও বলা হয়েছে। ছোট বেলায় যদি শিশুদের ২ -৩ বছর ইসলামি শিক্ষা দেয়া হয় তাহলে তার মধ্যে আল্লাহর ভয় তৈরি হবে এবং সামাজিক মূল্যবোধ ও নৈতিকতায় শক্তিশালী হবে। ফলে সে আল্লাহর ভয়ে পাপ কাজ করার সাহস পাবে না। সে যেখানেই যাক তার দ্বারা কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্বাবনা থাকবে না।
তাই তিনটি বিষয়ের উপর জোড় দিয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করা সম্ভব।
লিখেছেন-
শফিকুল ইসলাম,
শিক্ষার্থী- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। দ্যা ডেইলি এডুকেশন-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য দ্যা ডেইলি এডুকেশন কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।
প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। দ্যা ডেইলি এডুকেশন-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য দ্যা ডেইলি এডুকেশন কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।
No comments