শেক্সপিয়র রচিত ম্যাকবেথ নাটকের রিভিউ | নাসিম আহমেদ, রাবি
ফোরেসের রাজা
ডানকান। স্কটল্যান্ডের এক দয়ালু রাজার বিরুদ্ধে তার দুই সেনাপতি ম্যাকবেথ ও
ব্যাঙ্কো কঠোর ভাবে প্রতিহত করেন। ডানকান ফোরেসের প্রাসাদে তাদের ফেরার অপেক্ষায়। ফেরার
পথে ম্যাকবেথ ও ব্যাঙ্কোর সামনে আসে তিন নারীমূর্তি। তারা কোন প্রাণী বা পেতাত্মা
নয়। ওরা তিন জন হলো ডাইনি। তারা ম্যাকবেথকে গ্ল্যামিসের , কডোরের ও
স্কটল্যান্ডের ভবিষ্যৎ রাজা আখ্যা দিয়ে অভিনন্দন জানায়।
ম্যাকবেথ তা
শুনে অবাক। সে কডোরের রাজা হতে পারে। কিন্তু গ্ল্যাসিস ও স্কটল্যান্ডের রাজা তার
জন্য অসম্ভব। ব্যাঙ্কোকে বলে তার বংশের কেউ স্কটল্যান্ডের রাজা হবে। দুজন ফিরে আসে
ডানকানের প্রাসাদে। কডোরের অধিপতি করা হয় ম্যাকবেথকে। এবং ম্যাকবেথের প্রাসাদে এক রাত্রি
যাপনের কথা জানায় ডানকান। ম্যাকবেথের প্রাসাদ ছিল ইনভার্নেস।
ডাইনিদের সব কথা
ম্যাকবেথ তার স্ত্রীকে জানায়। লেডি ম্যাকবেথ সে কথা শুনে লোভে পরে যায়। স্কটল্যান্ডের
রাণী হতে সে উদগ্রীব হয়ে ওঠে। তাদের প্রাসাদে ডানকানকে হত্যা করে রাজ্যের ক্ষমতা
গ্রহণ করার পরিকল্পনা জানায় ম্যাকবেথকে। ম্যাকবেথ তা করে ক্ষমতা গ্রহণ করতে
অস্বীকৃতি জানালেও লেডি ম্যাকবেথ তাকে সাহস দেয় এবং প্ররোচিত করে।
তার মাথায় আসে
ডানকানকে হত্যা করে সে দুই দেহরক্ষীকে দোষারোপ করবে। রাজার ঘর থেকে বের হয় লেডি
ম্যাকবেথ। প্রহরীদের প্রচুর মদ্যপান করায় সে। ম্যাকবেথকে জানায় সে কাজ শেষ করতে
পারেনি। কারণ ডানকানের মুখ তার বাবার মুখের মতো।
পরে ম্যাকবেথ
রাজার রুম থেকে বের হয়ে লেডিকে বলে সে কাজ সম্পূর্ণ করেছে। তাদের দুজনের হাতে রক্ত
মাখা ছোড়া। হাত ধুয়ে ঘুমোতে যায় তারা। কিন্তু স্বস্তি পায় না ম্যাকবেথ।
ভোর বেলায়
ম্যাডকাফ ও ল্যানেক্স আসে প্রাসাদে। রাজার ঘরে তারা তার মৃত দেহ দেখতে পায়। দুই দেহরক্ষীর
গায়ে রক্ত ও তাদেরও মৃত দেহ দেখে তারা। ম্যাকবেথ ও তার স্ত্রী চলে আসে। তারা জানায়
এই দুই দেহরক্ষী ডানকানকে হত্যা করে। পরে ম্যাকবেথ তাদের প্রতিশোধ নেয়। ম্যালকম ও
ডোনালবেল জেনে যায় তাদের বাবা আততায়ীর হাতে নিহত হয়েছেন। তারা ভয়ে ইংল্যান্ড ও
আয়ারল্যান্ডে চলে যায়।
ফোরেসের
রাজপ্রাসাদ। ব্যাঙ্কো ভাবেন, ডাইনিদের সব কথা ম্যাকবেথের ক্ষেত্রে সত্যি হলে
ব্যাঙ্কোর বংশধররা রাজা হবেন সেটা কেন সত্যি হবে না। এসময়ে ম্যাকবেথ ও লেডি
ম্যাকবেথ সেখানে আসেন। ব্যাঙ্কো ও তার ছেলে ফ্লিয়ান্স প্রাসাদ ছেড়ে চলে যায়। ম্যাকবেথ
দুজন ঘাতককে পাঠায় তাদের দুজনকে হত্যা করার জন্য। কারন তারা ম্যাকবেথের শাসনের
অন্তরায় হতে পারে। ঘাতকরা ব্যাঙ্কোকে ছুড়ি চালায়; কে বুঝতে পারে এটা ম্যাকবেথের
বিশ্বাসঘাতকতা। সে কার ছেলে ফ্লিয়ান্সকে পালাতে বলে। এবং বেচেঁ থাকলে এর প্রতিশোধ
নিতে বলে। ফ্লিয়ান্স পালিয়ে যায়। ব্যাঙ্কোর মৃত্য হয়।
এদিকে
ম্যাকবেথের ভোজসভা জমজমাট। গণ্যমান্য সকলকে আমন্ত্রল জানানো হয়েছে সেখানে। কোন
ত্রুটি নেই আপ্যায়ন করতে। এসময় ম্যাকবেথ শুনতে পায় ব্যাঙ্কো মারা গেছেন কিন্তু তার
ছেলে বেচেঁ গেছেন। এটা তার মাথা ব্যাথার কারণ। ভোজ সভায় ম্যাকবেথ নানান রকম উদ্ভট আচরণ
করে। হঠাৎ ম্যাকবেথ ব্যাঙ্কোর প্রেতাত্মা দেখতে পায়। অন্য কারো চোখে নয়। সে নিজেই
শুধু তা দেখে। সে নিজে নিজেই সবার সামনে বলে, কে ব্যাঙ্কো কে হত্যা করল। ঠাকুর ঘরে কে, আমি কলা খাইনা। সে রকম অবস্থা। এরকম বিভিন্ন আচরন করলে লেডি ম্যাকবেথ
অতিথিদেরকে বলেন তার স্বামীর নতুন রোগ এটি। সবার মনে তখন সন্দেহ জাগে। একে একে
সবাই ম্যাকবেথের সুস্থতা কামনা করে বিদায় নেয়। ভোর হয় কিন্তু ম্যাকবেথের ঘুম না।
কিছুদিন কেটে
যায়। ম্যাকবেথের অপশাসনে অতিষ্ট হয়ে ওঠে জনসাধারণ। সবাই ভাবে ডারকানের ছেলে
ম্যালকম ইংল্যান্ডের রাজার সামরিক সাহায্য নিয়ে ম্যাকবেথকে প্রতিহত করবেন। এদিকে
ম্যাডকাফ ও ইংল্যান্ডে চলে যায়। ম্যালকমের সাথে হাত মেলায় সে। তা শুনে ম্যাকবেথ
রেগে যায়, যুদ্ধের প্রস্ততি নেয় সে।
ডানকান ও
ব্যাঙ্কোর অস্বাভাবিক মৃত্যু, ডানকানের দুই ছেলের পলায়ন, ডানকানের
দুই দেহরক্ষীর মৃত্যু, ম্যাডকাফেরের প্রতি ম্যাকবেথের মনোভব।
সব মিলিয়ে তার প্রতি সবার সন্দেহ মনের ভেতর।
একদিন ১ম
ডাইনিদের কাছ থেকে জানতে পারে যে, ম্যাডকাফ থেকে সতর্ক থাকবে। ২য় ডাইনি, নারী গর্ভ হতে ভূমিষ্ঠ কোন মানুষ ম্যাকবেথের ক্ষতি করতে পারবে না। ৩য় ডাইনি
বলে যে, যতক্ষণ না বিশাল বার্নাম বন পাহাড়ের উপর আসছে ততক্ষণ
তার পতন হবে না।
ইংল্যান্ডের
রাজার প্রাসাদে ম্যালকম ও ম্যাডকাফের কথা হয়। তারা যুদ্ধ করার পরিকল্পনা নেন। এমন
সময়ে ডানকানের সভাসদ রস সেখানে আসেন। সেও প্রতিরোধ করার কথা বলে।
ডারসিনান
পাহাড়ের উপর ম্যাকবেথের প্রাসাদ। লেডি ম্যাকবেথ অসুস্থ। বিখ্যাত ডাক্তাররাও তাকে
সুস্থ করে তুলতে পারছে না। সে হঠাৎ দু হাত চুলকাতে লাগল। সে বলে যে, আমার হাত দুটো কি
কখনো পরিস্কার হবে না? সে আরও বলে, ব্যাঙ্কোকে
কবর দেয়া হয়েছে সে আর উঠে আসতে পারবেনা। সবাই সন্দেহ করতে লাগল।
এদিন লেডি
ম্যাকবেধ মারা যায়। ম্যাকবেথ হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে। সে বলে, আর দুদিন পর মারা
গেলে ভালো হতো। কারন তার সামনে কঠিন যুদ্ধ অপেক্ষা করছে। সৈন্য বাহিনী বার্নাম
জঙ্গলে আশ্রয় নেয়। তারা গাছের ডাল ছিড়ে নিয়ে সামনে অগ্রসর হয়। যাতে কেউ তাদের
সৈন্য বাহিনী সম্পর্কে আচ করতে না পারে। সৈন্যরা ম্যাকবেথের প্রাসাদের সামনে
প্রবেশ করে। নেতৃত্ব দেয় ম্যালকম, সিয়ার্ড ও ম্যাডকাফ। মুখের
সামনের ডাল সরে ফেলে দেয় তারা।
ম্যাকবেথের মনে
পড়ল, এক
ডাইনি বলেছিল নারীর গর্ভজাত সন্তানের হাতে পরাজিত হবে না। কিন্তু কে গর্ভজাত
সন্তান নন? সিয়ার্ডের ছেলেও মারা গেছে।
ম্যাকবেথ বলেন, তুমি নারী গর্ভজাত সন্তান
তোমাক দেখে আমার হাসি পায়। এমন সময় ম্যাকডাফ সামনে আসে। ম্যাকবেথ ও ম্যাকডাফের
মধ্যে কঠিন বাক্য বিনিময় হয়। ম্যাকবেথ বলে, তোমরা যত সহজে
দুর্গে প্রবেশ করেছ, তত সহজে আমাকে পরাজিত করতে পারবে না। কারন
তার শরীর মায়াবলে সুরক্ষিত, আর নারীর গর্ভজাত সন্তান তাকে
পরাজিত করতে পারবে না।
ম্যাকডাফ জানায়
তার জন্ম রহস্য। সে বলে,
স্বাভাবিকভাবে মাতৃগর্ভ থেকে তিনি ভূমিষ্ঠ হননি। সঠিক সময়ের আগে
মাতৃজঠর থেকে তুলে নেয়া হয়। ম্যাকবেথের বাঁচার শেষ আশাটুকুও শেষ হয়ে যায়। অতঃপর ম্যাকবেথের
পরাজয় হয়। ম্যালকমকে রাজা বলে অভিহিত করা হলো। স্কটল্যান্ডের দুঃখের দিনের অবসান
ঘটল।
No comments