শেক্সপিয়র রচিত ট্র্যাজেডি 'রোমিও ও জুলিয়েট' নাটকের রিভিউ | নাসিম আহমেদ
বুক রিভিউ : 'রোমিও ও জুলিয়েট
লেখক: শেক্সপিয়র
দুই পরিবারের মধ্যে বংশগত বিরোধ।
ক্যাপিউলেট পরিবারের মেয়ে জুলিয়েট এবং মন্টেগু পরিবারের ছেলে রোমিও। প্রথমে রোমিও
একজন মেয়েকে ভালোবাসে। তার নাম রোজালিন। তার কথা সে কোন মতেই ভুলতে পারেনা। একা
একা নির্জন গাছের নিচে বসে সে শুধু তার কথাই ভাবে।
বেনভোলিও হলো রোমিওর বন্ধু। রোমিওর
বাবা বেনভোলিওর কাছে জানতে চায় তার মন খারাপের কারণটা কি। রোমিও প্রথমে বেনভোলিওকে
না বললেও পরে সব কথা খুলে বলে। বেনভোলিও তাকে বোঝানোর চেষ্টা করে। নাছোড়বান্দা
কিছুতেই সায় দেয়না। রোমিওর চোখে সেই একমাত্র সুন্দরী। এসময় বেনভোলিও বলে, তোমার চোখ দুটোকে স্বাধীনতা দাও, যাতে তারা অন্য সৌন্দর্যের সন্ধান করে। এর মানে ঐ মেয়ের
চাইতেও সুন্দর মেয়ে আছে। যাকে হয় তো রোমিও এখনো দেখেনি।
সেদিন জানতে পারে শত্রুপক্ষ
ক্যাপিউলেটের বাড়িতে ছেলে মেয়ে দেখতে আসবে। অনেক লোককে আমন্ত্রণ করা হয়েছে। শত্রুর
বাড়ি জেনেও বেনভোলিও রোমিও কে জোর করে নিয়ে যায়। সে সময় মুখ বেঁধে রেখে কোন
অনুষ্ঠানে নৃত্য করা যেত। রোমিং-সহ কয়েকজন মশাল নিয়ে যায়। সেখানে জুলিয়েটকে দেখতে
পায় রোমিও। প্রেমে পরে যায় সে।
দুজন দুজনের ভাষা বুঝতে পারে।
চুম্বনের মাধ্যমে মন দেয়া নেয়া করে তারা। পরে দুজনেই জানতে পারে শত্রু দলের
মানুষকে মন দিয়েছে তারা। এটা যেন ঘৃণার মধ্যে ভালোবাসার বীজ। প্রেম ভালোবাসা তো আর
শত্রুপক্ষ মানে না। এক রাতে রোমিও ও তার বন্ধু বেনভোলিও, মারকুশিও সহ রাস্তায় হাটছে। হঠাৎ করে রোমিও নিখোঁজ। দেয়াল
টপকিয়ে জুলিয়েটের সামনে যায় সে। সেখানে তাদের অনেকক্ষণ কথাবার্তা চলে।
কে কাকে কত টুকু ভালোবাসে। এটা সম্ভব
কিনা। অনেক ধরনের কথা হয় তাদের। ভোরবেলায় সেখানেই রোমিও বিদায় নেয়। যাবার সময়
ফাদার লরেন্সের সাথে তার দেখা হয়। সব কথা ইশারায় তাকে বোঝানোর চেষ্টা করে রোমিং।
ফাদারকে রোমিও তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করতে বলে। পরদিন জুলিয়েট পরিচারিকা কে পাঠিয়ে
দেয় রোমিওর কাছে। সে তাকে জানায় গীর্জায় তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করবে ফাদার লরেন্স।
তাকে আসতে বলিও। গীর্জায় রোমিও ও জুলিয়েটের বিয়ে সম্পন্ন করে ফাদার লরেন্স।
পরের দিন গ্রীষ্মের দুপুরে বেনভোলিও
ও মারকুশিও রাস্তায় গল্প করছে। এমন সময় জুলিয়েটের চাচা টাইবল্ট চলে আসে। তাদের
মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। সদ্য বিবাহিত রোমিং তখন সেখানে এসে পৌছাঁয়। রোমিং
টাইবল্টকে শান্ত হতে বলে। কিন্তু সে কোন কথাই শোনে না। টাইবল্ট ও মারকুশিও মধ্যে
টানা হেঁছড়া বাধে। রোমিং মাঝে গেলে টাইবল্টের ছোড়া মারকুশিওর বুকে বিদ্ধ হয়। তারা
তাকে বাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। টাইবল্ট দৌড়ে পালায়।
কিছুক্ষণ পরে বেনভোলিও রোমিওকে জানায়
মারকুশিও মারা গেছে। সে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। টাইবল্ট আবার ফিরে আসলে রোমিও তাকে হত্যা
করে। দুই পরিবার চলে আসে সেখানে। ভেরানোর রাজা এসকেলাসও চলে আসে। রোমিও কে
নির্বাসন দেয়া হয়। চাচা টাইবল্টের মৃত্যুতে যত কষ্ট জুলিয়েটের হয়, তার চেয়ে বেশি কষ্ট রোমিওর নির্বাসনে।
সম্ভান্ত পরিবারের ছেলে প্যারিসের
সাথে জুলিয়েটের বিয়ে ঠিক করে তার বাবা। আজ সোমবার। বুধবার খুব কাছেই। তাই সামনের
বৃহস্পতিবারেই তাদের বিয়ের দিন ধার্য করা হয়। লেডি ক্যাপিউলেটকে জানিয়ে রাখে
মেয়েকে প্রস্তুত হওয়ার জন্য।
নির্বাসনের কথা রোমিং জানতে পারে
ফাদারের কাছে। সেদিন রোমিও আবার দেখা করতে আসে। দুজনের মধ্যে বিদায়ের সুর। কিন্তু
কেই কাউকে ছেড়ে দিতে রাজি না। ভোরের পাখি ডাকে তবুও যেতে চায় না রোমিও। ভোর হওয়ার
আগেই যে তাকে যেতে হবে মান্তুয়া নগরে। দেখে ফেললেই মৃত্যু। বাবা মাকে সব কথা খুলে
বলেও লাভ হয় না জুলিয়েটের। ক্যাপিউলেট তাকে বলে অমান্য হলে ত্যাজ্যপুত্র করতেও
বাঁধবেনা তার, তখন রাস্তায় রাস্তায় থাকতে হবে।
পরের দিন ফাদার লরেন্সের কাছে যায়
জুলিয়েট। ফাদার তাকে একটা ঔষধ দেয় যার নাম মদিরা। কাজে সেটা মূলত অর্ধ মৃত বিষ।
এটা পান করলে ৪২ ঘন্টা সে ঘুমে থাকবে। সব বন্ধ হবে। সবাই ভাববে মারা গেছে। কবর
দেয়ার পর পরই রোমিও এসে তাকে পাবে। রোমিও আসার ব্যবস্থা করতে চায় ফাদার। বুধবার
রাতে জুলিয়েট একা ঘুমায়। নার্সকে সে নেয় না সাথে। ঘুমানোর আগে সে মদিরা টুকু খেয়ে
নেয়। সকালে সবাই দেখে সে মৃত্য।
যাইহোক ফাদার এসে তার
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করা করার জন্য সবাইকে তাগিদ দেয়। ইতিমধ্যে ভৃত্য বালথাজারকে
চিঠি দিয়ে মান্তুয়ায় পাঠায় ফাদার। সেটা পেয়ে এক ওঝার কাছ থেকে বিষ কিনে ভেরোনার
উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয় রোমিও। ফাদার লরেন্স গীর্জার অন্য এক ফাদার জনের হাত দিয়ে
একটা চিঠি পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু সেটা ঠিক সময়ে তিনি পৌঁছে দিতে পারেননি। অর্থাৎ
চিঠিটি ফেরত আসে ফাদারের কাছে। ফাদার চিন্তায় পরে যায়।
তিনি সর্বনাশের আশংকা দেখতে পান।
এদিকে জুলিয়েটের কবর দেয়া শেষ হয়। পরে প্যারিস তা কবরে ফুল দেয়ার জন্য এক প্রহরীকে
বাইরে রেখে কবরের দিকে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে রোমিও ও বালথাজার এসে পৌঁছেছে কবরের পাশে।
ফাদার তখন গীর্জায় তার কক্ষে। জুলিয়েটের করব খুড়তে থাকে রোমিও। সে দেখে জুলিয়েট
ঘুমিয়ে। বুঝে যায় সে মৃত্য। প্যারিস কবর খোড়া টা সহ্য করতে পারেনা। সে প্রতিবাদ
করে। রোমিওর তরবারির আঘাতে প্যারিসের মৃত্যু হয়।
রোমিও বলে, "আমার প্রেয়সী, মৃত্যু তোমার সমস্ত মধু পান করে নিয়েছে তবু তোমার সৌন্দর্যকে ম্লান করতে পারে
নি। তুমি মৃত্যুতেও পরাজিত নও, সৌন্দর্য আজ তোমার
রক্তিম ঠোটঁ ও গালে লেগে রয়েছে"।
ওঝার কাছ থেকে আনা বিষ পান করে
রোমিও। সে মারা যায়। ফাদার লরেন্স ও পাশে থাকা বালথাজার চলে আসে। জুলিয়েট জেগে
ওঠে। সে ফাদারকে স্বামীর কথা বলে। পরে দেখতে পায় রোমিও শুয়ে। পাশে হাতের মধ্যে
বিষের বোতল। কিন্তু এক ফোঁটা বিষও সে রাখেনি জুলিয়েটের জন্য। রোমিওর ঠোঁটে যে টুকু
বিষ লেগে ছিল সেটাই সে চুম্বন দিয়ে গ্রহণ করে। আর হাতে থাকা ছুড়ি দিয়ে নিজের পেটে
আঘাত করে মারা যায় জুলিয়েট।
সবাই এসে এই বীভৎস ঘটনা দেখে। পরে
ক্যাপিউলেট ও মন্টেগুর দ্বন্ধের অবসান হয়। মন্টেগু সোনার জুলিয়েটের মূর্তি এবং
ক্যাপিউলেট সোনার রোমিওর মূর্তি তৈরী করে। রোমিও ও জুলিয়েটের জীবন বিসর্জন মাধ্যমে
অবসান হয় দুই পরিবারে দ্বন্ধ।
No comments