দ্যা ডেইলি এজুখেইশনে বিজ্ঞাপন দিতে কল করুন

+88 01521 20 70 54 (Call for Ad)

বুক রিভিউঃ বইয়ের নামঃ হিলড রাইটারঃ মনীষা কৈরালা ও নীলম কুমার

বুক রিভিউঃ
বইয়ের নামঃ হিলড
রাইটারঃ মনীষা কৈরালা ও নীলম কুমার
আবিদ নিয়াজ

বইটি মূলত বলিউড চিত্রনায়িকা মনীষা কৈরালার ক্যান্সারের গল্প। বইয়ে রয়েছে তার ক্যান্সার ধরা পড়ার সময়ের গল্প, সার্জারি ও অপারেশন চলাকালীন ঘটনা। রয়েছে তার খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, পড়াশুনা ও মেডিটেশনের মাধ্যমে ক্যান্সার বিজয়ের গল্প। রিভিউটা একটু বড় মনে হতে পারে। তো চলুন শুরু করি।
১০ ডিসেম্বর ২০১২, মনীষা কৈরালার পেটের নিচের অংশটা ফুলে উঠছে। তিনি ভাবছেন হয়তো একটু মুটিয়ে যাচ্ছেন, তিনি নিয়মিত ব্যায়াম শুরু করতেন, কিন্তু এবার তিনি আরো বেশি ব্যায়াম শুরু করলেন। কিন্তু শুধু যে পেট মোটা হচ্ছে তা না, সাথে প্রচন্ড ব্যাথা। এক সময় গিয়ে এই ব্যাথা সহ্য ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। ডাক্তার দেখানো হলে ডাক্তার অনেক রকমের টেস্ট দিলেন, অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ডাক্তার জানালেন এই মোটা অংশটাই আসলে ক্যান্সার।
যেখানে পর্দায় নায়িকার নাম ওঠার কথা, সেখানে তার নাম মুছে যাচ্ছে। সময় তার হাতে খুবই কম। মাত্র ১৯% লোক এই ক্যান্সারে বাচেন। তাও সম্ভাবনা খুবই কম। সব কাজ বন্ধ করে দিয়ে বলিউড কাপানো নায়িকা ভর্তি হলেন হাসপাতালে। হাসপাতালে ভিআইপি রুমে থাকতেন। ভিআইপি ডেথ রুম। আচ্ছা ডেথ রুমেরও ভিআইপি আছে? হাসপাতালের এতো ক্যাটাগরি জানা ছিলো না আগে। আমাকে মেরে ফেলতে কতো আয়োজন?
আমি তো মরতে চাই না। আর এরকম ঘোষণা পেয়ে মৃত্যু তো আরো ভয়ানক। ঠিক যেন জেল খানার ফাসির আসামীর মতো যে জানে সে মারা যাবে ৬ মাস পর। আমিও জানি আমি মারা যাবো ৬ মাস পর। এখন যদি সিনেমার শেষ সিনের মতো কোন মিরাকেল না ঘটে বাচার সম্ভাবনা নেই।
আমি কল্পনায় নিজেকে একটা কফিন বক্সে ঢুকালাম, আমি কি সেখানে থাকতে পারবো? কফিনের মুখটা আটকাতেই দম বন্ধ হয়ে আসে। আমি নিজেকে চিতায় শোয়ালাম। দেখলাম বলিউড কুইনের শরীরটা পুড়ে যাচ্ছে, পড়ে রয়েছে ছাই। আমি নিজেকে মাটি চাপা দিয়ে দেখলাম, না, মাটির ভারও অনেক। আসলে আমি বাচতে চাই।
একদিন মুম্বাইয়ের হাসপাতালে শুয়ে আছি, এমন সময় ঝোর বৃষ্টি। আমি ভিজলাম, বৃষ্টিতে ভিজলে কান্না বোঝা যায় না। পানির সাথে মিশে যায়। আসলে এরকম মৃত্যু আমি চাই না। আমি আমার পরিবারের সাথে সিদ্ধান্ত নিলাম আমি আমেরিকা গিয়ে চিকিৎসা করাবো। আমি আমার হিসাব রক্ষককে ডেকে আনলাম, সব ধরনের সোশাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকলাম। সব টাকা পয়সা এক করলাম, আমেরিকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু হলো।
ইন্ডিয়ায় থাকাকালিন শেষ কিছুদিন আমি বিভিন্ন গুরুর শরণাপন্ন হলাম। তারা আমাকে সব সময় দুটো জিনিস বলেছেন, “মনীষা, মেডিটেশন করো, মন থেকে নেতিবাচক চিন্তা একেবারে ফেলে দাও, আর খাবার দাবার চেঞ্জ করো।”
জীবন আমার, আমার জীবনের ভালো মন্দের চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত আমাকেই নিতে হবে। আমার সিদ্ধান্তে কোন ভুল হলে আমিই মারা যাবো। তাই আমেরিকার ভিসা প্রসেসিং ও ফ্লাইটের আগে আমি ৭ দিন সময় পাই। এই সময়ে আমি ক্যান্সার নিয়ে মুম্বাইয়ের বুক শপের যাবতীয় সব বই কিনি ও পড়া শুরু করি। সাইকি ও হিলিং নিয়ে পড়তে থাকি। ক্যান্সার পেশেন্টের কেস স্টাডি পড়ি। আমি ছয় মাসে মরতে চাই না। কাজেই আমার জীবনের এই সিদ্ধান্ত যাতে আমি ঠিকভাবে নিতে পারি এজন্য আমাকে আগে এই ক্যান্সারের খুটিনাটি জানতে হবে। শরীরের মাঝে প্রচন্ড যন্ত্রণা চলছে। সময় মাত্র ৬ মাস, তবু আমি পড়ছি। আমার যেন পরীক্ষা, হ্যা, পরীক্ষা, ক্যান্সারের পরীক্ষা।
ক্যান্সার মানেই কি মৃত্যু? না, ক্যান্সার মানে হচ্ছে এক রকম নতুন করে বাচা, আগের সব ভুল শুধরে নিয়ে নতুন করে একটা লড়াই। এই লড়াইয়ে আমাকে বাচতে হবে। আমরা আমেরিকা গিয়ে সেখানকার সবচেয়ে বড় ডাক্তারের কাছে গেলাম। তিনিও টেস্ট করে ক্যান্সার নিশ্চিত হলেন। তিনি বললেন, আমাকে প্রথমে অপারেশন করতে হবে। এরপর ৬ মাস কেমোথেরাপি দিতে হবে। এতে সম্পূর্ণ সেরে ওঠার কোন সুযোগ নেই। বড়জোর আর দুই বছর বাচবে।
আপনি বুঝতে পারছেন? আমি জানছি যে অপারেশনের ছুরির নিচে গেলে আমি দু বছর নয়তো ৬ মাস বাচবো। কি ভয়াবহ একটা মানুসিক চাপ। আমি রাজি হলাম, অপারেশনের ডেট নির্ধারণ করা হলো। অপারেশনের আগে একটা পেপারে সই করতে হলো, তাতে লেখা ছিলো, এই অপারেশনের মাঝেই আমি মারা যেতে পারি। আচ্ছা, অপারেশনের মাঝে মরে গেলে কি আমি মৃত্যু টের পাবো না? ছিঃ,আমি এসব ভাবছি কেন? আমি তো বাচবো। শরীরকে অপারেশনের সময় সাপোর্ট করাতে হলে ব্রেনকে রিলাক্সে রাখতে হবে।
আমার পাকস্থলীর উপর ভাতের দানার মতো ক্যান্সার। একটা একটা করে সেটা অপারেশন করতে হবে। প্রায় ১১ ঘন্টা ব্যাপী অপারেশন হলো, তার পর আরো ১৭ ঘন্টা অবসারভেশনে রাখা হলো। এরপর আমার জ্ঞান ফিরলো। ক্যান্সার আমাকে শিখিয়েছে, পরিবারের চেয়ে আপন আসলে কিছু নেই। বন্ধু বানাতে চাইলে বাজার থেকে কুকুর কিনে আনাই ভালো।
আমি আমার জ্ঞান আসার পর নার্সদের ধন্যবাদ জানাই। দুইদিন পর ডাক্তার জানালেন, আমার ক্যান্সার এতো বেশি ছড়িয়েছে যে তার ধারনার বাইরে ছিলো। তবে পুরো অপারেশনের সময় আপনার বডি চমৎকার ভাবে সাহায্য করেছে।

অপারেশনের পর ঘা শুকাচ্ছিলো না, সেখানে আবার ড্রেসিং করা লাগলো। এই ক্যাথেটার হাতে আমার খুব বিরক্ত লাগতো, যে আমি স্টেজের এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে ছুটে বেড়াই, নেচে বেড়াই, সেই আমি তখন বড্ড অসহায়।
কিন্তু এই সময়টা আমাকে পড়তে হবে, মেডিটেশন করতে হবে। কারন আমি নিজেই যদি নিজের ব্যাপারে না জানি, তাহলে আমার নেয়া ভুল সিদ্ধান্তই আমার মৃত্যুর কারন হতে পারে।
আমার সার্জারির পর শরীর থেকে স্টাপ্লার গুলো খোলার দিন সে যে কি যন্ত্রণা, বলে বোঝাবার নয়। মনে হচ্ছিলো, বাঘের থাবা এক একটা। এই সময়ে মোটা মোটা ইঞ্জেকশন হাড্ডির কাছে নিয়ে পুশ করা হতো। মনে হতো ৬ মাস বেচে থেকে কি হবে এতো কষ্ট করে, আমি বরং মরেই যাই। কিন্তু পরেই মনে হতো আবার যে আমি ৬ মাস না আমি আরো অনেক দিন বাচবো। আমার অনেক কাজ বাকি।
দেখতে দেখতে কেমোথেরাপির দিন ঘনিয়ে আসলো। সেখানেও একটা পেপারে সই করতে হলো যাতে লেখা, কান, মেমোরি, দাত, ব্রেন ড্যামেজ হবে। আমি সেই পেপারে লিখলাম, আমি সুস্থ হয়েই ফিরবো।
আমি সব সময় মেডিটেশনে গিয়ে অটোসাজেশন দিতাম।
1. I am Strong
2. I can Do It
3. I am a Winner
4. I Love my Life
5. I want To Live
ক্যান্সার হবার পর আমি বুঝেছি, আমাদের এই শরীরটা আসলে একটা গিফট। আমরা এটাকে পাত্তাই দেই না। কতো ভাবে অত্যাচার করি। আমি এর পর থেকে রেইনবো ফুড প্রিন্সিপাল ফলো করি, অ্যালকোহল একদম ছেড়ে দিয়েছি, বুঝেছি পরিবারের মানে কি।
৬ মাস কেমো চললো, আমার চুল সব পড়ে গেলো। আমি একদিন সেলুনে গিয়ে নিজেই কাটিয়ে আসলাম। নিজেকে সব মিডিয়া থেকে দূরে রেখে একাধারে নিজেকে নিজে হিল করার চেষ্টা করেছি। তবে আমার ডাক্তারদের আমি ধন্যবাদ জানাই। আসলে আমি যে ২০১৯ সালে এসেও বেচে আছি, ক্যান্সার থেকে ফিরে আরো ৩টা মুভি করেছি সবই স্রষ্টার দয়া আর আমার দর্শকদের ভালোবাসা।
ক্যান্সার কফ বা কোল্ড ওয়েদারের কারনে উদ্ভুত অসুখের মতো না, অনেক জটিল রোগ। সবাই এটার চিকিৎসা অ্যাফোর্ড করতে পারেন না। তাই সবাইকে আমি তিনটা উপদেশ দিবো।
১। ক্যান্সার হলে প্রায় প্রতিদিনই আপনার মৃত্যুর মাঝ দিয়ে যাবেন। ঠিক কোন মুহূর্তে মরবেন, শিওর না, বাট মৃত্যু আপনার আসেপাশে থাকবে ওত পেতে। কাজেই এই রোগেই জড়াবেন না। আমার মতো লাইফ স্টাইল ও ফুড হ্যাবিট থাকলে চেঞ্জ করবেন, পানি পান করবেন। ক্যান্সার ঝুকি কমবে।
২। শরীরের কোথাও কোন সমস্যা দেখা দিলে আমার মতো এক্সারসাইজ করে সেটার সমাধান করবেন না, ডাক্টার দেখাবেন, টেস্ট করে নিশ্চিত হবেন। ওটা ক্যান্সার না তো? ডাক্তার অনেক পড়াশুনা করেই এই বিষয়ে এক্সপার্ট হয়েছেন। তার ফিস বাচাতে গেলে নিজে বাচার চান্স কমে আসবে।
৩। ক্যান্সার যদি হয়েই বসে, আগেই ভাববেন না যে আপনি বাচবেন না। ধরে নেন আপনি বাচবেন, এটা আপনার ওয়েক আপ কল। মনোবলই ক্যান্সারের বড় ওষুধ। তবে সঠিক সময়ে সেটা আইডেন্টিফাই করতে হবে।

লিখেছেন- আবিদ নিয়াজ , সিইও, কর্পপোরেট আস্ক

No comments

Powered by Blogger.