কম্পিটিশনে নামার আগে কম্পিটিটরদের চিনে নাও, রুটিন ফলো করে নিজেকে তৈরি করে সাফল্যকে ছিনিয়ে আনো
০১) ঘুম থেকে উঠে, দাঁত ব্রাশ করে, নাস্তা খাওয়ার পরেই যে পড়তে বসতে হবে এমন কোন কথা নাই। মাঝে মধ্যে ঘুম থেকে উঠার সাথে সাথেই পড়া শুরু করে দিবা। এক ঘন্টা পড়ে, দাঁত ব্রাশ করতে যাবা। আরো এক ঘন্টা পড়ে নাস্তা করতে যাবা। একইভাবে “বাইর থেকে এসে জামা কাপড় খুলে, ঘাম শুকানোর আগে পড়া যাবে না”- এমন কোন আইন নাই। তাই ক্লাস, ল্যাব বা বাইর থেকে এসে ডাইরেক্ট পড়তে বসে যাও। পড়তে পড়তেই ঘাম শুকিয়ে যাবে। তারপরে ফ্রেশ হতে যাবে।
০২) মনে রাখবে, যত আগে ঘুম থেকে উঠতে
পারবে তত বেশি বোনাস পাবে। কারণ ভোর
বেলায় কেউ শব্দ করে না। উচ্চ স্বরে গান ছাড়ে না। তরকারিওয়ালারা এই লেবু, অ্যাই লেবু, অ্যাই ল্যাব-উ (I love you) বলে চিল্লায় না। তাই পারলে ৪.৩০, বা ৫.৩০ এর দিকে ঘুম থেকে উঠে যাবা। ধুমাইয়া পড়া শুরু করে দিবা। ক্লাস, কোচিং, প্রাকটিক্যাল না থাকলে বাথরুমে যাওয়া ছাড়া দুপুর ১২.০০ এর আগে রুম থেকে বের হওয়া যাবে না। কোন
একটা জিনিস নিয়ে একটানা ৫০ মিনিট পড়ার টার্গেট নিয়ে পড়া শুরু করবা। শেষ না হইলে আরেকটু বেশি সময় নিয়ে হলেও টার্গেট শেষ করতে হবে। তারপর ১০ মিনিট ব্রেক।
০৩) কোন কিছু পড়া শেষের ১০ মিনিটের ব্র্রেক অবশ্যই এনালগ ব্রেক হতে হবে। কোন
প্রকারের ল্যাপটপ, মোবাইল, ফেইসবুক,
ম্যাসেঞ্জার, ইমো, জন্মদিনের উইশ করা যাবে না। দরকার হলে বাথরুমে যাবা, মুখে পানি দিবা, হাঁটাহাঁটি করবা। আর হাটতে হাটতে এতক্ষণ যা পড়ছিলা সেটা মনে মনে রিভাইজ দিবা।
০৪) দুপুর ১২.০০ এর দিকে গোসল করো, খাওয়া দাওয়া করো, নামাজ পড়ো। দরকার হলে আধা ঘন্টা রেস্ট নাও। কোন অবস্থাতেই দুপুরে দেড়-দুই ঘন্টার আয়েশি ঘুম দেয়া যাবে না।
০৫) দুপুরে ক্লাস, কোচিং না থাকলে, ১.৩০ থেকে বিকাল ৪.৩০ পর্যন্ত সকালের মতো ৫০ মিনিট টার্গেট নিয়ে পড়বা। টার্গেট এচিভ হলে ১০ মিনিটের এনালগ ব্রেক নিয়ে মনে মনে রিভাইজ দিবা। সকাল এবং দুপুর পড়ালেখার মোক্ষম সময়। এই সময়টায় যতবেশি সম্ভব কাজে লাগাতে হবে।
০৬) বিকাল ৫.০০ থেকে ৬.০০ (সন্ধ্যার আগের ১ ঘন্টা) টেনশন করার টাইম। এই সময়টায় রাস্তার এক পাশে বা কোন খেলার মাঠের পাশ দিয়ে মাথা নিচু করে হাটতে হাটতে টেনশন মনের মাধুরী মিশিয়ে টেনশন করো। টেনশন করার কিচ্ছু না থাকলে রিলাক্স করো। কারো সাথে দেখার করার থাকলে দেখা করো। ফটোকপি নোট সংগ্রহ করো। এবং সন্ধ্যা হওয়ার আগে বাসায় ফিরো।
০৭) রাত ৬.৩০ থেকে ৯.৩০ পিউর টাইম। পড়বা আর একটু একটু পর পর মনে মনে রিভিশন দিবা। রিভিশন না দিলে সারা দিনের পড়া সব ভুলে যাবে। রাত ১০.০০ এর মধ্যে ডিনার শেষ করবা।
০৮) ১০.০০ টা থেকে ১০.৩০ হচ্ছে প্লানিং টাইম। এই সময়ে একটা কাগজে লিখবা তুমি আগামীকাল কী কী জিনিস পড়বা। কখন কি করবা সেটা প্রত্যেক ঘন্টা হিসেবে লিখে রাখবা। যাতে পরেরদিন এইগুলার পাশে টিক চিহ্ন দিতে পারো। যে এইটা এইটা করার কথা ছিল, তার মধ্যে এইটা এইটা শেষ করছি। এক
সপ্তাহ বা এক মাসের প্ল্যান বানাতে যাবা না। জাস্ট একদিন আগে তার পরেরদিনেই প্ল্যান বানাতে যাবে।
০৯) এখন ভাবের বয়স। আবেগের বয়স। একটু প্রেমের বাতাস আফসোস, আক্ষেপ, আর টেনশনের পরিমাণ নিয়ে পরীক্ষায় কোন প্রশ্ন আসবে না। তাই ডেইলি ১ ঘন্টার বেশি টেনশন করতে যাবা না। তারপরেও টেনশন করার খুব খায়েশ হলে প্রতিদিন ঘড়ি ধরে ১ ঘন্টা মনের মাধুরী মিশিয়ে টেনশন করবা। বিকাল ৫.০০ থেকে ৬.০০ পর্যন্ত। তারপর সূর্য ডোবার সাথে সাথে টেনশনের চ্যাপ্টার ক্লোজ।
১০) প্রতিদিন কমপক্ষে ৬-৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে। নচেৎ ব্রেইনের কার্যকারিতা কমে যাবে। এবং ভোর ছয়টার আগে ঘুম থেকে উঠে যাবা। বেশি ঠাণ্ডা লাগলে, ঘুম পাইলে লেপ মুড়ি দিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পড়বা। কেডস পায়ে দিবা। দরকার হলে বিছানা থেকে কাঁথা বালিশ নামিয়ে ফেলবা তারপরেও বিছানায়
ফেরত যাবা না।
১১) পড়া রিলেটেড কোন প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বের হওয়া যাবে না। কখনো বাসায় এসে আফসোস করবা না, বাসে বসে বসে জ্যামের কারণে দুই ঘন্টা নষ্ট হয়ে গেছে। বরং বাসে যতক্ষণ জ্যামে বসে থাকবে ততক্ষণ ব্যাগ থেকে বই বের করে পড়া শুরু করবে। একইভাবে রিক্সায়, টেম্পুতে পায়ের উপর একটা খাতা খুলে রাখলে কেউ তোমাকে বাস, টেম্পু থেকে নামিয়ে দিবে না। এমনকি সেলুনে চুল কাটার সময় সামনের টেবিলের উপর ইংরেজির কয়েকটা রুলস লেখাওয়ালা একটা খাতা খুলে রেখে দিলে চুল কাটতে কাটতে রিভিশন হয়ে যাবে।
১২) পরীক্ষার যতদিন বাকি সেটাকে তিন দিয়ে ভাগ করে প্রথম দুই ভাগের কোনদিন কোন সাবজেক্ট পড়বা এমন একটা রুটিন বানাতে হবে। রুটিনের শুরুতে ভালো পারো এমন দুইটা সাবজেক্ট রাখবা। মাঝখানে যেগুলা কম পারো সাবজেক্টগুলা পড়বা। আর বাকি যে তিন ভাগের এক ভাগ বাকি রয়ে গেছে সেখানে সব সাবজেক্টগুলা দ্রুত রিভিশন দিতে হবে। তারমানে তিনভাগের প্রথম দুইভাগে ভালো করে পড়বা এবং শেষের ভাগে রিভিশন দিবা।
১৩) কোন চ্যাপ্টার শুরু করার পরে দশ মিনিট সময় নিয়ে, এই চ্যাপ্টারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস কি, আগের বছরে কি কি প্রশ্ন পরীক্ষায় আসছে এক নজর দেখে নাও। তারপর ইম্পরট্যান্ট সূত্রের প্রমাণ, সংজ্ঞা, ফর্মুলা, গাণিতিক সমস্যাগুলো পড়ো।বা লিখে রাখো।
১৪) ঘন্টা হিসেবে নয়, টার্গেট হিসেবে পড়ো।
আজকে ছয় ঘন্টা পড়বো চিন্তা না করে, যতক্ষণ লাগুক না কেনো আজকে এই এই চ্যাপ্টার শেষ করবো চিন্তা করো।
১৫) কখনোই গোসল করে বা ভাত খেয়ে
পড়তে বসবো চিন্তা করব না। বরং চিন্তা করো এইটা পড়া শেষ করেই গোসল করবো। এইটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত দুনিয়া উল্টে যেতে পারে আমি গোসল করবো না। পড়া শেষ না করা পর্যন্ত ক্ষুধায় মারা যেতে পারি মাগার ভাত খেতে যাবো না। আর গোসল, খাওয়া দাওয়া করার সময় মাথা কিন্তু অবসর থাকতে হবে, বা বন্ধু তুই লোকাল বাস গান গাইতে হবে এমন কোন কথা নাই। তাই গোসল করতে, খেতে খেতেও মনে মনে পড়া রিভিশন দেয়া
যায়।
১৬) কোন কারণে পড়া না আগাইলেও ধৈর্য হারানো যাবে না। একটু টায়ার্ড হলে বাইরে হেটে আসো বা ১৫-২০ টা পুশ-আপ দিয়ে দিবা। কিন্তু পরীক্ষার আগ পর্যন্ত স্মার্ট ফোন ইউজ করা বন্ধ করো। দরকার হলে স্মার্ট ফোন তোমার আম্মুকে দিয়ে এই কয়দিন একটা নর্মাল ফোন ইউজ করবা।
১৭) কিছুক্ষণ বসে বসে পড়ার পর যদি দেখো পড়া আগাচ্ছে না, তাহলে দাঁড়িয়ে পড়বে। কিছুক্ষণ দুই পায়ের উপর দাঁড়িয়ে থাকার পরে এক পায়ে দাঁড়িয়ে পড়বে। না হয় হেঁটে হেঁটে পড়বে। টানা পাঁচদিন ভালো পড়ালেখা হওয়ার পরে একদিন একটু কম হইলে আফসোস না করে পরেরদিন পুষিয়ে দেয়ার জন্য মানুষিক প্রস্তুতি নাও।
১৮) পরীক্ষার আগে পরীক্ষা দাও। কোথাও
মডেল টেস্ট দিতে পারলে ভালো। আর না
পারলে নিজেই একটা-দুইটা ইম্পরট্যান্ট প্রশ্ন বা অংক শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত না দেখে লিখো। যারা পরীক্ষার আগেও সিরিয়াস না হয়ে, ড্যাম কেয়ার ভাব নিয়ে চলতেছে। বা অল্প পড়েই পেরে যাই- ভাব পিটায়। তাদের এড়িয়ে চলো।
১৯) পড়ার আগে নিজের ভিতরে জানার কৌতূহল সৃষ্টি করে, পড়ার পর মিশন কমপ্লিট হয়ে গেছে চিন্তা করে পুলকিত অনুভব করো। পড়ালেখাকে বোঝা হিসেবে চিন্তা করবা না। বরং পড়ালেখা একটা খেলা। এইটা পড়া বুঝা, মনে রাখা, পরীক্ষার খাতায় লেখার
খেলা।
২০) সফলতা কখনো আপনা আপনি ধরা দেয় না তারজন্য অনেক ধ্যন-জ্ঞনের প্রয়োজন। আজ আপনি কষ্ট করবেন তার ফলাফল আপনি ও আপনার পরিবার সারাজীবন ভোগ করবেন। দুঃখের পরেই সুখ আসবে তাই দুঃখটাকে জয় করেন সফলতা আপনাকে ধরা দিতে বাধ্য।
→মনে রাখবেন, "আমাকে পারতেই হবে আর আমিই পারব"। শুভ কামনা সকলের জন্য।।
No comments