দ্যা ডেইলি এজুখেইশনে বিজ্ঞাপন দিতে কল করুন

+88 01521 20 70 54 (Call for Ad)

'নবান্ন' নাটকের কাহিনী সংক্ষেপ । উক্ত কাহিনী সংক্ষেপটি লিখেছেন মো. এনামুল হাসান কাওছার

নবান্ন নাটকের সারসংক্ষেপ/ সারাংশ-
 মো. এনামুল হাসান কাওছার, শিক্ষার্থী- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

         বিজন ভট্টাচার্য রচিত নবান্ন নাটকের চরিত্রাবলি-
চরিত্রের নাম
পরিচয়
মন্তব্য
প্রধান সমাদ্দার
আমিনপুরের বৃদ্ধ চাষী

পঞ্চাননী
প্রধানের স্ত্রী

কুঞ্জ সমাদ্দার
প্রধানের ভাইপো

রাধিকা
কুঞ্জর স্ত্রী

মাখন
কুঞ্জর ছেলে
১ম অংকের ৫ম দৃশ্যে
মাখন মারা যায়
নিরঞ্জন সমাদ্দার
ভাই

বিনোদনী
নিরঞ্জনের স্ত্রী

দয়াল মণ্ডল
প্রতিবেশী

হারু দত্ত
স্থানীয় পোদ্দার

কালীধন ধাড়া
চাল ব্যবসায়ী

রাজীব
কালীধনের সরকার

চন্দর
জনৈক চাষী

যুধিষ্ঠির
আন্দোলনকারী

ফটোগ্রাফার
সংবাদপত্রের প্রতিনিধি
দুইজন
প্রথম ভদ্রলোক
চাল খরিদ্দার

বরকর্তা
বড়কর্তা

বৃদ্ধ ভিখারি


ডোম


দারোগা


ডাক্তার


দিগম্বর


ফকির


খুকির মা


ভিখারিনি

বাংলার ম্যাডোনা নাম দেয় ১ম ফটোগ্রাফার
অন্যান্য চরিত্র-  ১ম ভদ্রলোক,  ২য় ভদ্রলোক, ৩য় ভদ্রলোক, নির্মলবাবু, টাউট, বরকত, কৃষক, নিরন্নর দল, জনতা, মেয়েরা, ভিখারি, হারু দত্তর শালা, কনস্টেবল, রোগী, জমাদার, বাহক, কৃষকরমণীরা, ভৃত্য, ১ম ব্যক্তি, ২য় ব্যক্তি, হারুদত্তের ছোট মেয়ে মতি প্রমুখ।


·        একনজরে "নবান্ন" নাটকের অংক, দৃশ্য ও চরিত্রাবলি
অঙ্ক
দৃশ্য
চরিত্র
স্থান
মন্তব্য


১ম
১ম
দুর্গত পল্লী

২য়
প্রধানের ছন্নছাড়া ঘর


৩য়
প্রধানের বাড়ি

৪র্থ
প্রধানের জীর্ণ ঘর

৫ম
বিনোদিনী, রাধিকা, হারু দত্ত, প্রধান, কুঞ্জ, মতি, ১ম ব্যক্তি, ২য় ব্যক্তি
প্রধানের জীর্ণ ঘর




২য়
১ম
নিরঞ্জন, কালীধন, হারুদত্ত, রাজীব, ভদ্রলোক
কালীধনের দোকান
নিরঞ্জন- রাখহরি ছদ্মনামে
২য়
১ম ফটোগ্রাফার, ২য় ফটোগ্রাফার, ভিখারিনি, প্রধান, ডোম, জনৈক ভিখারি, রাধিকা, কুঞ্জ, বিনোদিনী, টাউট
একটা পার্কের অংশ

৩য়
বড়োকর্তা, ২য় ভদ্রলোক, ৩য় ভদ্রলোক, নির্মলবাবু, প্রধান, রাধিকা, কুঞ্জ
শহরের রাজপথ, এক ধনীর বাসভবন

৪র্থ
হারুদত্তের বাড়ী (আমিনপুর)

৫ম
কালীধনের সেবাশ্রমের একটি কক্ষ

৩য়
১ম
১ম ভিখারিনি, ১ম ভিখারি, জনৈক বৃদ্ধ ভিখারি, ২য় ভিখারি, কুঞ্জ, রাধিকা
নিখরচার লঙ্গরখানা

২য়
নার্স, কম্পাউন্ডার, ডাক্তার, ৮ নং রোগী, ভদ্রলোক রোগী, প্রধান, জমাদার, বাহকদ্বয়
হাসপাতাল


৪র্থ
১ম
আমিনপুর গ্রাম

২য়
কঞ্জুর গৃহপ্রাঙ্গণ

৩য়
মরা গঙ্গার ধারে বিস্তীর্ণ প্রান্তর




'নবান্ন' নাটকের বিস্তারিত কাহিনি সংক্ষেপ-

প্রথম অঙ্ক
         ১ম দৃশ্য
       চরিত্রাবলি- প্রধান, কুঞ্জ, বিনোদিনী, পঞ্চাননী, যুধিষ্ঠির, ব্যক্তি
       স্থান- দুর্গত পল্লী

প্রথম দৃশ্যেই প্রারম্ভেই আমরা বুঝতে পারি অনেক ঘটনা পূর্বেই ঘটে গেছে, তার উত্তেজনা ও আতঙ্ক পুরো গ্রামে এখনো বিরাজমান। প্রৌঢ়ত্বের ওপারে পৌঁছানো প্রধান সমাদ্দার আর গোটা ত্রিশ-বত্রিশ বছর বয়সী কুঞ্জকে খালি গায়ে সন্তর্পণে নিজেদের মধ্যে ফিসফিসিয়ে কী যেন বলাবলি করতে দেখা যায় অতপর ঊর্ধ্বগতি ধুমকুন্ডলীর সঙ্গে উড়তে থাকে ছাই আর আগুনের ফুলকি। আগুনের আভায় সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে দুজনের অবয়ব, উত্তেজনায় তাদের শরীরের সমস্ত পেশীগুলো ফুলে উঠে।
হাত তুলে রক্তিম পটভূমির দিকে ইঙ্গিত করে প্রধান সৈন্যদের গুলিতে নিহত দুই জোয়ান ছেলে শ্রীপতি ভূপতির কথা উল্লেখ করে; সরকারের কাছে নিজের কষ্টার্জিত ফসল দিবে না বলেই সে একটু আগে তিন মাড়াই ধান স্বেচ্ছায় পুড়িয়ে দিয়েছে। শোষকের কালগ্রাসী অত্যাচারের তীব্রতায় আমিনপুরের মানুষ চূড়ান্ত ক্ষতি, প্রবল শোক আর নিদারুণ আতঙ্কের মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করছে তা ক্রমান্বয়ে সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে।
সব হারিয়ে প্রধান স্বীয় জীবন দিতে প্রস্তুত তাই সে কুঞ্জকে বলে, শত্তুরের মুখে ছাই দিয়ে প্রাণ দিবে। নেপথ্যে বাঁশের গাঁট ফাটার শব্দ চলে, মিলিটারি আক্রমণের আতঙ্কে তারা বনের মধ্যে লুকিয়ে প্রাণ রক্ষা করে অথচ প্রধান পালাতে দ্বিমত পোষণ করে। সে গাঙ বরাবর গিয়ে মিলিটারিদের বেড় দিতে চায় কিন্তু এই পদক্ষেপে খামোখা জান যাবে তা বুঝতে পেরে কুঞ্জ প্রধানকে বনের ভেতরে পালানোর কথা বলে।  বিনোদিনী, নিরঞ্জন, রাধিকা পঞ্চাননীসহ সবাই বনে পালিয়ে জীবন রক্ষা করে।
সন্ধ্যার গোধূলি আলো আর দূরে শঙ্খ ধ্বনির আওয়াজে আপাতদৃষ্টিতে বিপদমুক্তির সংকেত পাওয়া যায় আর তখন বন থেকে সবাই ফিরে। এমতাবস্থায় কুঞ্জ, প্রধান ও পঞ্চাননীর মধ্যে বনে পালায়নের যৌক্তিকতা নিয়ে ভীষণ তর্ক হয়। প্রধানের হাতের কব্জির ওপরে কেটে যায় এবং রক্ত ঝরতে থাকে। কুঞ্জ ক্ষতস্থান দেখতে চাইলে প্রধান বলে- জন্তু জানোয়ারের মতো বনে জঙ্গলে যাদের পালিয়ে বাঁচতে হয় তাদের রক্তের কোন দাম নেই, যা হয়েছে বেশ হয়েছে।
পঞ্চাননী লাঠি ভর দিয়ে ত্বরিতপদে এসে, লজ্জাশরম খুইয়ে মেয়েমানুষ বনে জঙ্গলে বসে প্রহরের পর প্রহর গুনার কারণ জানতে চায় এবং কুঞ্জর কাছে পুরুষ মানুষের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। প্রধান হঠাৎ উদভ্রান্তের মতো ছুটে গিয়ে কুঞ্জুর টুটি টিপে ধরে এবং তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়।
এমতাবস্থায় যুধিষ্ঠির আসেন শুনিয়ে যান একতাবদ্ধ হয়ে এই অন্যায়ের প্রতিবাদের কথা। যদিও এ অঞ্চলে দিন সাতেক আগে তিনি এসে ইতোপূর্বে দুইবার ঘুরে গেছেন কাবুলিওয়ালা ও অশ্বারোহীর ছদ্মবেশে। তিনি তাদেরকে প্রতিটি পদক্ষেপ রক্তরেখায় রঞ্জিত করে বিজয়লক্ষ্মীকে ছিনিয়ে নিয়ে আসার আহবান জানান। কুঞ্জ প্রধানের উন্মত্ততার কথা উল্লেখ করে। তখন যুধিষ্ঠির বলেন এই উন্মত্ততা যথার্থ, প্রধানের উন্মত্ততাই আজ সকলের অন্তরের খর্বতাকে পরিশুদ্ধ করতে সক্ষম।
অন্যদিকে গন্ডগোল ভয়াল হয়, সাহসী পঞ্চাননী সবাইকে প্রতিরোধের সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করে এগিয়ে যাওয়ার আর্তি জানায় এবং জনতার প্রতিরোধে নেতৃত্ব প্রদান করে। এতে অনেক লোক আহত হয় এবং পুলিশ-মিলিটারির গুলিতে পঞ্চাননীও মৃত্যু বরণ করে।

         দ্বিতীয় দৃশ্য
       চরিত্রাবলি- রাধিকা, নিরঞ্জন, কুঞ্জ, প্রধান, মাখন, বিনোদিনী
       স্থান- প্রধানের ছন্নছাড়া ঘর

দ্বিতীয় দৃশ্যের প্রারম্ভে প্রধানের ছন্নছাড়া গৃহস্থালির একটি দোচালা ঘরের দাওয়ার ওপর বসে থাকতে দেখা যায় প্রধান, কুঞ্জ, নিরঞ্জন ও মাখনকে। পুরোনো একটা মেটে কলসির মধ্যে রক্ষিত ফসলের শেষ সম্বল ধানগুলো রাধিকা নেড়ে দেয়; অভাবের তীব্রতা আর ক্ষুধার জ্বালা তাদের মানুষিকভাবে ত্রস্ত করে তুলেছে যা তাদের তুমুল ঝগড়ায় পরিস্ফুটিত হয়। কুঞ্জ ও রাধিকার মধ্যে ঝগড়া হয়।
প্রধান এর আগে গ্রামের প্রতিরোধের নেতৃত্ব দিয়েছে, অন্যদের প্রণোদিত করেছে। চব্বিশ ঘন্টার নোটিশে গ্রামের মানুষকে দেশান্তরে করেছে। সরকারকে দিবেনা তাই নিজ হাতে তিন মাড়াই ধান পুড়িয়ে দিয়েছে, গ্রামের নৌকা সব আটক করে রেখেছে। তারই ফলে সংসারে যে-অভাব তৈরি হয়েছে, তা এই সরল মানুষগুলির মধ্যে উত্তাপ ও কলহের সৃষ্টি করেছে। 
পরিবারের সকলের জন্য খাবার যোগান দেয়ার দায়িত্বের তাড়না কুঞ্জকে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে; কিন্তু সে আশাবাদী কারণ আমন ধান পাওয়া গেলে ভাতের ভাবনা আর থাকবেনা। তাই চাল ক্রয়ের জন্য চক্ষুলজ্জার খাতিরে একটু ভনিতা করে সে রাধিকার বাপের বাড়ি থেকে দেয়া শেষ সম্বল মলজোড়া চায় কিন্তু রাধিকা তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়; তাই রেগে গিয়ে ঘরের সব বাসনপত্র টেনে বের করে আনে এবং তা দোকানে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেয়।
নিরঞ্জন দেশ ছেড়ে যাওয়ার সংকল্প প্রকাশ করে, বিনোদিনীও তার সাথে যেতে চায় কিন্তু তাকে সে নিতে অসম্মতি জানালে বিনোদিনী কাঁদতে লাগে। পরিশ্রান্ত কুঞ্জ বাড়ি ফিরে মনে করে নিরঞ্জন বিনোদিনীকে মেরেছে। এই সামান্য ভুল বোঝাবুঝি থেকে কুঞ্জ নিরঞ্জনের মাথায় কাঠ দিয়ে তীব্র আঘাত করে এবং বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার কথা বলে; আঘাতে নিরঞ্জনের মাথা ফেটে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোয়।

         তৃতীয় দৃশ্য
       চরিত্রাবলি- প্রধান, কুঞ্জ, দয়াল, মাখন, রাধিকা, বিনোদিনী
       স্থান- প্রধানের বাড়ি

এই দৃশ্যে অভাবের কালোচিত চিত্র আরো সুস্পষ্ট হয়। দাওয়ার ওপর বসে আনমনে প্রধান তামাক টেনে চলছে অন্যদিকে কুঞ্জ উঠোনে দাঁড়িয়ে পায়ের বুড়ো আঙুল দিয়ে মাটি খুঁড়ছে; তাদের মধ্যে জমি বিক্রি করা নিয়ে আলোচনা হয়।
প্রধান প্রয়োজনের তাগিদে মগরার বিলের জমি বিক্রি করে দিয়েছে, শেষ সম্বল বিঘে তিনেকের মতো জমি আছে তাও বিক্রি করার কথা ভাবছে কিন্তু কুঞ্জ জমি বিক্রির প্রস্তাবে ঘোর বিরোধিতা করে। তার মতে অভাব সে তো লেগেই আছে তা জমি বিক্রি করলেও থাকবে, না বিক্রি করলেও থাকবে।
এমতাবস্থায় প্রতিবেশি দয়াল আসে প্রধানের কাছে; সকালবেলা থেকে আকাশের ঘোর ঘোর ভাব তথা বৈরী আবহাওয়ার কথা ওঠে আসে তাদের কথোপকথনে। কুঞ্জ দয়ালের কাছে জমি বিক্রি করার ব্যাপারে পরামর্শ চায়, দয়াল নিজেও জমি বিক্রি করে ভুল করেছে। রুজি রোজগার না থাকায় শেষ পর্যন্ত বীজধানগুলোও সে রাখতে পারেনি। প্রতিবেশি দয়ালের উক্তির মাধ্যমে সুস্পষ্ট হয় এই দুর্গতি কেবল আমিনপুরের একটি পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং তা অন্যত্র আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে। দয়ালের স্ত্রী রাঙার মা গতদিন বিকাল থেকে না খেয়ে ধুঁকছে তাই দয়ালের অবস্থা আরো করুণ, দয়াল কটা চাল ভিক্ষে করতে এসেছে এখানে।
কুঞ্জ এতে খানিকটা ক্রদ্ধ হয়, তবু সে তাদের খাবারের শেষ সম্বল মুঠোখানেক চাল দয়ালকে দেয়। কিন্তু এই অবস্থায় আর কতদিন চলবে এই প্রশ্ন ঘুরপাক খায় সবার মাথায়। সমাধানে প্রধান শহরে যাওয়ার জন্য প্রস্তাব দেয় কিন্তু দয়াল আর কুঞ্জর কথোপকথনে শোষক বাবুদের কথা ওঠে আসে।
হঠাৎ আকস্মিক সাইক্লোনের কালগ্রাসী আঘাতে প্রধানের দোচালা ঘর ভেঙে পড়ে, চালার নিচে চাপা পড়ে বিনোদিনী জ্ঞান হারায়- প্রলয়ঙ্করী বন্যায় ভেসে যায় গ্রাম। দয়াল বাড়িতে গিয়ে দেখে সাইক্লোন তার ঘর, সন্তান (রাঙ্গা), স্ত্রী সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে; তাই শোকাহত দয়াল কুঞ্জর কাছ থেকে নেয়া কোঁচড়ের চাল হাতে নিয়ে ফেরৎ আসে প্রধানের বাড়িতে।



         চতুর্থ দৃশ্য
       চরিত্রাবলি- বিনোদিনী, মাখন, প্রধান, কুঞ্জ, রাধিকা
       স্থান- প্রধানের জীর্ণ ঘর
তীব্রতর অভাব ও অন্ন সংকটের চিত্র প্রকট আকারে পরিলক্ষিত হয়। নিত্যি ডুমুরের কলা সেদ্ধ, আর কচর নতির ঝোল এবং কাকড়া তাদের খাদ্য তালিকায় স্থান পায়। অসুস্থ নিষ্পাপ বালক মাখন এসব খেতে আপত্তি জানায়। শুধু না খেতে পেয়ে মাখন তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছে এমন কথা বলতে শুনা যায় প্রধানের মুখে।

         পঞ্চম দৃশ্য
       চরিত্রাবলি- বিনোদিনী, রাধিকা, হারু দত্ত, প্রধান, কুঞ্জ, মতি, ১ম ব্যক্তি, ২য় ব্যক্তি
       স্থান- প্রধানের জীর্ণ ঘর

মহা মড়কে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে সৃষ্টি; আকাল, সাইক্লোন, বন্যা, মড়কে বিধ্বস্ত আমিনপুরের এক বিপুল মানবিক ভূখণ্ডের ছবি নেপথ্যের আর্ত কণ্ঠধ্বণি সম্বলিত বিরামহীন আবহে আরো সুস্পষ্ট হয়। কয়েকদিন থেকে জ্বরে আক্রান্ত রাধিকা রুক্ষ এলোচুলে দাওয়ার ওপর বসে থাকে অসুস্থ মাখনের শিয়রে।
এমতাবস্থায় প্রধানের খোঁজে হারু দত্তের আগমন ঘটে; অমেয় লোভী আর কুচক্রী হারু দত্ত তার লোভ ও লালসাকে ব্যবহার করে সাম্রাজ্যবাদী শোষণ পীড়িত মানুষেরই অন্ন, অর্থ, আশ্রয়, সম্মান, মানবিকতা সমস্ত কিছু লুঠ করে নেয় কিন্তু মুখের মধুমাখা কথায় প্রকাশ করে স্বীয় আত্মগৌরবের কথা।
সব হারিয়ে পথে বসা প্রধানের মগরার বিলের বাকি তিন বিঘে জমিও কিনে নিতে সে মরিয়া। তার মুখের তথাকথিত কথা কেবল ছলনায় ভরপুর। তার মতে সে জমি কিনে মাটির বদলে টাকা দিয়ে প্রধানের ক্ষতি করছে না বরং একরকম সাহায্য করছে।
হারুদত্তের বৈশিষ্ট হলো- নিরীহ খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষগুলো স্বীয় অধিকার আদায়ে সোচ্চার হলে পেশী শক্তির সাহায্যে শোষণের নীতিতে তাদের রক্তাত করা।
মাথায় এক বোঝা ঘাস নিয়ে কুঞ্জ বাড়িতে ফিরে জমি বিক্রি করবে না প্রধান এইমর্মে প্রতিবাদ করে। এজন্য হারুদত্ত কুঞ্জকে ছোটলোকের এত বড় আস্পর্ধা বলে গালাগালি করে এবং সোজা শিরদাঁড়াটা এইবার বেঁকিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। তবু কুঞ্জ লাঠি হাতে প্রতিবাদ করতে চায় অতপর কুঞ্জকে হারুদত্তের দু তিনজন বলিষ্ঠ লাঠিয়াল ভীষণ প্রহার করে; মার খেয়ে কুঞ্জ বুকে হেঁটে হারু দত্তের পা ধরতে চায় কিন্তু হারুদত্ত পা ধরতে দেয়না; কুঞ্জকে প্রহার না করার অনুরোধ করলে লাঠিয়ালরা প্রধানকেও আঘাত করে। বারান্দার ওপর অসুস্থ রুগ্ন মাখন এসব দেখে তার সমস্ত শক্তি সংহত করে উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করতে গিয়ে মাথা ঘুরে মাটিতে পড়ে যায়। মরণাহত মাখনের মুখের উপর পরিবারের অনান্য সদস্যরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে কিন্তু ততক্ষণে মাখন মৃত্যুবরণ করে। বাংলার গ্রামের উপর হারু দত্তদের অধিকার আরো প্রকট হয়ে ওঠে; জমি থেকে উৎখাতিত হয় গ্রামের চাষি পরিবার।

দ্বিতীয় অঙ্ক
       প্রথম দৃশ্য
       চরিত্রাবলি- নিরঞ্জন, কালীধন, হারুদত্ত, রাজীব, ভদ্রলোক
       স্থান- কালীধনের দোকান

এই দৃশ্যে শোষণের ছাপ আরো বেশি বিস্তৃতি লাভ করে। কালীধনের গদিতে তার মাথার উপরে সিদ্ধিদাতা গণেশের প্রতিকৃতি টাঙানো আর দেয়ালের গায়ে সিঁদুরের গোলা দিয়ে লেখা 'শ্রী শ্রীকালীমাতার শ্রীচরণ ভরসায় এই কারবার করিতেছি'। গুদামঘরের একপাশে খালি বস্তা সাজানো, মালগুলো ভারবাহী কুলিরা পিঠে করে যথারীতি চোরকুঠরিগুলোতে চালান করে দিচ্ছে। এখানে কালীধন, হারুদত্ত প্রমুখ বাহিরে সৎ, সত্য, সুন্দর আর শুভ্রতার বাণী এঁকে বাস্তবে ঠিক তার উল্টো কাজ করে শোষকদের প্রতিনিধিত্ব করছে। তাদের বিবেকহীন, হৃদয়হীন অমানবিক বাণিজ্যের বিস্তার সুবিস্তৃত।
কালীধন ধাড়ার চালের গুদামে নিরঞ্জন মজুরের কাজ নিয়েছে রাখহরি ছদ্মনামে। নিরঞ্জনকে কালীধন সব সময় ধমকের উপর রাখে, তাকে কেবল তার বিশ্বস্ততার জন্য এখানে রেখেছে যা হারুদত্তের সাথে কথোপকথনে প্রকাশ পায়।
সাড়ে বাইশ বা তেইশ টাকা দাম দিলে হারুদত্ত কালীধনকে এই আকালের সময়ে দু'দশ নৌকা চাল দিবে বলে আশ্বস্ত করে। হারুদত্ত কালীধনকে চালের পাশাপাশি ভোগের মেয়েমানুষ সরবরাহ করে।
মধ্যবিত্ত ভদ্রলোক বাজারের দরে চাল কিনতে এসে কর্মচারী রাজীব ও কালীধনের কাছে ভীষণ অপমানিত হন। কালোবাজারের কালো ছায়া গ্রাস করতে থাকে স্বাভাবিক সমাজব্যবস্থাকে। মধ্যবিত্ত ভদ্রলোক কালীধনের মণ-পিছু পঞ্চাশ টাকা দাম শুনে চমকে ওঠেন, চল্লিশ টাকা দর দিতে চাইলে কালীধন তা প্রত্যাখ্যান করে। ভদ্রলোক পুলিশে দেবার ভয় দেখালে কালীধন ভুড়ি নাচিয়ে হাসতে থাকে। রাজীব হিসেবের খাতার দিকে নজর দিয়ে বলে দুর্ভিক্ষের কাঙালিরা মরার জন্য এসেছে শহরে; সে রাখহরি (নিরঞ্জন) কে দোকানের ফটক বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দিলে রাখহরি ফটক বন্ধ করে দেয়।

         দ্বিতীয় দৃশ্য
       চরিত্রাবলি- ১ম ফটোগ্রাফার, ২য় ফটোগ্রাফার, ভিখারিনি, প্রধান, ডোম, জনৈক ভিখারি, রাধিকা, কুঞ্জ, বিনোদিনী,     টাউট
       স্থান- একটা পার্কের অংশ
ক্ষিধের নিদারুণ কষ্টে পিষ্ট হয়ে প্রধান ও সমাদ্দার পরিবারের সকলকে ভিখারির দলে মিশে যেতে দেখা যায় কলকাতার পথে। এখানে দুই ফটোগ্রাফারের স্বার্থসন্ধান ও উদাসীনতা পরিলক্ষিত হয়। সন্তান কোলে ভিখারিনীর ছবি তুলে বাংলার ম্যাডোনা নাম দিয়ে ছাপতে চায় একজন, অন্যজন ঈর্ষামিশ্রত প্রশংসায় বলে যে, দি আইডিয়া, কাগজের সারকুলেশন তাহলে তো কাল দ্বিগুণ হবে। তারা ভিখারিনীকে পয়সা দেয় দয়াতে নয়, স্বার্থসিদ্ধির পথ সুগম করতে। প্রধানকে পয়সা দেয় কঙ্কালের ছবি তুলতে, তাতে ওদের কাগজের বিক্রি বাড়বে। 
দৃশ্যের শেষ অংশে বিনোদিনী অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে টাউটের হাতে পড়ে।

         তৃতীয় দৃশ্য
       চরিত্রাবলি- বড়োকর্তা, ২য় ভদ্রলোক, ৩য় ভদ্রলোক, নির্মলবাবু, প্রধান, রাধিকা, কুঞ্জ
       স্থান- শহরের রাজপথ, এক ধনীর বাসভবন

সচ্ছল এক ধনীর বাড়িতে বিয়ের উৎসব, অন্দরমহল থেকে শানাই-এর সুর ভাসছে। হাসির লহর তুলে একদল তরুণী বেরিয়ে যায় বাড়ির ফটকের ভেতর দিয়ে। আইনে নির্দিষ্ট করা পঞ্চাশ জনের জায়গায় হাজার খানেক মানুষকে নিমন্ত্রন করা হয়েছে, কালোবাজারের সুবিধা ভোগ করে এখানে এই রাজসিক ব্যাপার চলেছে। ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে অতিথিদের সম্ভাষণ জানাচ্ছেন বাড়ীর বড় কর্তা।
সে বাড়ির গেটের বাঁপাশে অর্ধবৃত্তাকার ডাস্টবিন থেকে কুঞ্জ-রাধিকা উচ্ছিষ্ট কলা পাতার স্তূপ ঘেঁটে খাবারের জোর সন্ধান চালায়। ডাস্টবিনের পাশে ক্ষুদ্ধ কুকুরের গোঙানির আওয়াজ ভেসে আসে। বাড়ির ফটক থেকে খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে বড়ো বাড়ির দিকে হাত তুলে কাতর চিত্তে প্রধানকে খাবার প্রার্থনা করতে দেখা যায়।
ডাস্টবিনের উচ্ছিষ্ট খাবার তুলতে গিয়ে কুঞ্জ হাতে কুকুরের কামড় খেয়ে রক্তাক্ত হয়। প্রধান কাতর কন্ঠে পেটের জ্বালায় ভাতের জন্য চেঁচায়—“তোমরা কি সব বধির হয়ে গেছে বাবুকিছু কানে শোন না? অন্তর কি সব তোমাদের পাষাণ হয়ে গেছে বাবু! ... তোমাদের কি প্রাণ নেই বাবু?”
কিন্তু কেউ ফিরে তাকায় না শোষিত মানুষগুলোর দিকে। রাধিকা কুঞ্জের হাতে ব্যান্ডেজ বেঁধে দিয়ে জল খাবে কিনা জানতে চায়; গভীর মমতায় রাধিকা কুঞ্জর কপালের ওপর থেকে বিস্রস্ত চুলগুলো সরিয়ে দেয়। কুঞ্জ হঠাৎ কেঁদে ওঠে অতপর বাঁ হাতখানি রাধিকার মাথার ওপরে রাখে।

         চতুর্থ দৃশ্য
       চরিত্রাবলি- হারু দত্ত, খুকীর মা, চন্দর, ভৃত্য, মেয়েরা
       স্থান- আমিনপুর

হারু দত্ত জমি কেনা ব্যবসার পাশাপাশি এবার মেয়ে বেচাকেনার ব্যবসা ধরেছে। এখানে হারু দত্তের গুণগ্রাহিণা খুকীর মার তোষামুদে বর্ণনা করে। চন্দর বুড়ো তার মেয়ে মাতঙ্গিনীকে হারু দত্তের কাছে বিক্রি করে দেয়।

         পঞ্চম দৃশ্য
       চরিত্রাবলি- বিনোদিনী, নিরঞ্জন, রাজীব, কালীধন, জনৈক ভৃত্য, জ্ঞানদা, দারোগা, ১ম ভদ্রলোক, কনস্টেবলগণ
       স্থান- কালীধনের সেবাশ্রমের একটি কক্ষ

শহরে কালীধন সেবাশ্রম' নামে একটা লোক-দেখানো প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে, সেখানে সে হারু দত্তের পাঠানো মেয়েদের এনে রাখে। সেবাশ্রমের একটি কক্ষে অকস্মাৎ বিনোদিনী আর তার স্বামী নিরঞ্জনের দেখা হয়; নিরঞ্জন রাখহরি ছদ্মনামে কালীধনের চালের গুদামে কাজ করত। টাউটের পাল্লায় পড়ে বিনোদিনী সেবাশ্রমে এসেছে। একখানা আধময়লা শাড়ি পড়ে সে জানালার গরাদ ধরে বাহিরের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে আর ঘরের মাঝখানে মাটির দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকা নিরঞ্জনের মুখে আক্রোশ আর নিদারুণ প্রতিহিংসার স্পষ্ট ছাপ পরিলক্ষিত হয়।
বিনোদিনীর নির্যাতনের কথা শুনে নিরঞ্জন ক্রুদ্ধ হলে রাজীব ও কালীধন এসে তাকে সেবাশ্রমে দেখতে পেয়ে সেখান থেকে তাকে বের করে দিতে চায়। এরই মধ্যে হারু দত্ত তার জোগাড় করা মেয়েদের নিয়ে এসে পৌঁছায়।
হারু দত্ত ও কালীধনের ঠাট্টা ইয়ার্কির মধ্যেই নিরঞ্জন কয়েকজন কনস্টেবলসহ দারোগাকে নিয়ে আসে। পুলিশের সাথে হারুদত্ত ও রাজীব কর্তৃক অপমানিত হওয়া চাল কিনতে আসা সেদিনের ভদ্রলোককেও দেখা যায়।
গুদামে লুকিয়ে রাখা চালের পরিমাণ নিরঞ্জনের সাক্ষ্যে উন্মোচিত হয়, সেবাশ্রমের ব্যবসাও প্রকাশিত হয় এবং শেষ পর্যন্ত কালীধন, হারু দত্ত ও রাজীবের হাতে হাতকড়ি পড়ে। কিন্তু হারু দত্ত ও কালীধন পরস্পরের দিকে তাকিয়ে আকারে ইঙ্গিতে এমন ভঙ্গি করে যেন হাতকড়ি ছাড়িয়ে আসতে তাদের কোনরকম অসুবিধে হবে না।

তৃতীয় অঙ্ক
       প্রথম দৃশ্য
       চরিত্রাবলি- ১ম ভিখারিনি, ১ম ভিখারি, জনৈক বৃদ্ধ ভিখারি, ২য় ভিখারি, কুঞ্জ, রাধিকা
       স্থান- নিখরচার লঙ্গরখানা
কুঞ্জ ও অন্যান্য ভিখারিদের কথাবার্তায় দেশের স্পষ্ট অস্পষ্ট, সত্য কাল্পনিক- নানা ধরনের অসংলগ্ন সংবাদ পাওয়া যায়। তার মধ্যে দুটি সংবাদ তাৎপর্যপূর্ণ তা হলো- দেশে প্রচুর ধান হয়েছে, আর কুঞ্জ ও রাধিকা গ্রামে ফিরে যাবার কথা ভাবছে—“চল চল, বউ আমরা ফিরে যাই। এ পোড়া মাটির শহরে আর থাকব না।
বৃদ্ধ ভিখারি বলে দুরুন্তরের পথ আঁকা বাঁকা তোমরা সবাই চলে যাও, চলে যাও। 

         দ্বিতীয় দৃশ্য
       চরিত্রাবলি- নার্স, কম্পাউন্ডার, ডাক্তার, ৮ নং রোগী, ভদ্রলোক রোগী, প্রধান, জমাদার, বাহকদ্বয়
       স্থান- হাসপাতাল
এই চিকিৎসাকেন্দ্র যেন একটি প্রহসনের আয়োজনমাত্র, ঘরভর্তি অজস্র রোগী অথচ নেই ইনজেকশন, ওষুধ। তবে শত অপ্রতুলতার মধ্যে ডাক্তারকে বেশ দায়িত্বপরায়ণ হয়ে রোগী দেখতে দেখা যায়। গ্রামীণ মানুষের আবেগ প্রবণ স্বভাবে সর্বদা চিরায়ত রূপ পরিলক্ষিত হয় আর প্রধানের মধ্যে তা একটু বেশিমাত্রায় ছিল; এই আবেগ এখন আংশিক উন্মত্ততার রূপ পরিগ্রহণ করেছে।
দৃশ্যের শেষে সে নিজেকে বলে যে, ভুলে যাও তুমি তোমার ব্যথার কথা, একই সঙ্গে প্রতিবেশির প্রতি ব্যঙ্গ ও ভবিষ্যতের প্রত্যাশাপূর্ণ ব্যঞ্জনার প্রকাশ পায় তার উক্তিতে।

চতুর্থ অঙ্ক
       প্রথম দৃশ্য
       চরিত্রাবলি- ফকির, ভজন, সুজন, রহিম, বরকত, গোলাম নবী, দিগম্বর, সখীচরণ, দয়াল, নিরঞ্জন, মানিক, বরকতের মেয়ে, কুঞ্জ, রাধিকা, বিনোদিনী
       স্থান- আমিনপুর গ্রাম

পুনরায় শহর থেকে গ্রামে ফিরে আসা নিরঞ্জন জুড়েতেড়ে ভাঙা ঘর বসবাস উপযোগী করেছে। প্রধান সমাদ্দারের বাড়িতে উঠোনের মাঝখানে স্বল্পপরিসরে গ্রামের বিশ-পঁচিশ জন গেরস্থ চাষি আলোচনায় বসেছে। গ্রামের সাধারণ সহজ সরল শান্তিপ্রিয় চাষিরা কী করবে, কী করা উচিত বা কী করা সম্ভবতা নিয়েই অনেকক্ষণ ধরে তাদের মধ্যে এলোমেলা আলোচনা চলে। নিরঞ্জনের প্রচ্ছন্ন নেতৃত্বে প্রবীণ দয়ালের পরামর্শে গ্রামের বিশ পঁচিশ জন গেরস্থ চাষী প্রত্যেকের জমিতে প্রত্যেকে মিলেমিশে একসাথে গায়ে খাটার প্রতিজ্ঞা নেয়।
সিদ্ধান্তগুলি হয় সকলের যৌথ আলোচনার মাধ্যমে, কারো মনেই ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা সম্বন্ধে যেন কোনো স্পষ্ট ধারণাই নেই। চাষিদের মধ্যে ধারণাগত অস্পষ্টতা, অবস্থার যথাযোগ্য বিশ্লেষণে জড়তা, এমন-কী অজস্র কুসংস্কার ও অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে বিক্ষিপ্ত ভাবনা পরিলক্ষিত হয়। আলোচনা আগায় সবার মতামতের ভিত্তিতে যৌথ নেতৃত্বে; এখানে নেতৃত্ব দখলের জন্য মানুষগুলির মধ্যে কাড়াকাড়ি কিংবা কোন প্রতিযোগিতা নেই বরং আছে আমন্ত্রণ ও সহযোগ।
দয়াল বরকতের ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে কৌতুক করে এবং দৃশ্যের শেষে রাতের প্রবল অন্ধকারের মধ্যে কুঞ্জ আর রাধিকা বাড়িতে ফিরে আসে। তখন স্বজনদের বহুদিন পর একসাথে পেয়ে তাদের মধ্যে পুনর্মিলনের এক আবেগময় মূহুর্ত পরিলক্ষিত হয়। নিরঞ্জকে মাথায় আঘাত করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলো কুঞ্জ, পুনর্মিলনে হঠাৎ ত্রস্তে নিরঞ্জনের কপালে হাত বুলিয়ে দেয় এবং উভয়ে আলিঙ্গন করে।


         দ্বিতীয় দৃশ্য
       চরিত্রাবলি- নিরঞ্জন, বিনোদিনী, রাধিকা, কুঞ্জ, দয়াল, ফকির
       স্থান- কঞ্জুর গৃহপ্রাঙ্গণ
গ্রামের মেয়েদের মধ্যে হাসি-উচ্ছলার সুস্পষ্ট চাপ পরিলক্ষিত হয় । এখানে এসে দেখা যায় প্রধানের পরিবার এবং বাংলার গ্রামের দুর্দিন পিছু হটেছে, গ্রামে ফিরে এসেছে উপচীয়মান শস্যের উচ্ছসিত গ্রামীণ সুখ। আমিনপুরের লোকেরা নিজেদের মধ্যে প্রতিরোধের চরিত্রটি সত্য করে সকলে মিলে গায়ে খেটে প্রচুর শস্য তুলেছে; প্রত্যেকের শস্যের একটা অংশ যাচ্ছে ধর্মগোলায়, যা থেকে ভূমিহীন শস্যহীন গ্রামের গরিবরা ভাগ পাবে, তাদেরও ভাতের সংস্থান হবে।
নবান্ন উৎসবে মাতে আমিনপুর। এই প্রাচুর্যের সময় নিরঞ্জনের প্রধানের কথা মনে পড়ে, প্রধান বেঁচে আছে কিনা সে আশংক্ষা করে নিরঞ্জন। ফকির গান গায়—“হিন্দু মুসলিম যতেক চাষি দোস্তালি পাতান।

         তৃতীয় ও শেষ দৃশ্য
       চরিত্রাবলি- কৃষকরমণীরা; ১ম সারির ১ম, ২য়, ৩য়, ৪র্থ ব্যক্তি; ২য় সারির ১ম, ২য় ব্যক্তি, দয়াল, কুঞ্জ, ফেকু মিঞা, রহমৎউল্লা, ১ম দর্শক, ২য় দর্শক, প্রধান
       স্থান- মরা গঙ্গার ধারে বিস্তীর্ণ প্রান্তর

শত প্রতিকূলতায় দিনাতিপাত করা গ্রামের মানুষের মধ্যে 'নবান্ন' উৎসব খুশির বার্তা নিয়ে এসেছে তাই গ্রামের আবাল বৃদ্ধবনিতা মরা গঙ্গার ধারে বিস্তীর্ণ প্রান্তরে নবান্ন উৎসবকে বরণ করতে ভীড় করেছে। সুদূর দিগন্তের পশ্চিমাকাশে অস্তমিত সুর্যের রক্তিমাভায় অফুরন্ত প্রাণস্ফূর্তিতে মেতেছে আজ সব কৃষাণ-কৃষাণীরা, বেশির ভাগ লোকেরই খালি গা সঙ্গে একখানা গামছা। চাষি মেয়েরা সবাই দলে দলে পা ছাড়িয়ে বসে গান করছে আর পান খাচ্ছে।
খালি গায়ে চাষিরা লডুয়ে মোরগ কোলে করে বসে আছে। জোড়ায় জোড়ায় চললো মোরগ লড়াই, বিজয়ীর হাতে স্বীকৃতি স্বরূপ তুলে দেয়া হলো নতুন একখানা গামছা আর একখানা কাস্তে। এই প্রতিযোগিতায় ফেকু মিয়ার মোরগ জয়ী হয়, মোরগের লড়াই শেষে শুরু হয় চাষিদের গান আর তা ছাপিয়ে উঠে গরু দৌড় প্রতিযোগিতা।
কুঞ্জ অলক্ষ্যে নেতৃত্বের জায়গাটা নিয়ে ছোট খাটো বক্তৃতা দেয়। প্রতিকূল ঝড়-ঝাপটা আর মড়ক গ্রামের নিরীহ জীবজন্তুকেও প্রবলভাবে  আক্রান্ত করেছে তা কুঞ্জের ব্যক্তব্যে সুস্পষ্ট হয়। প্রতি বছর যে রকম গরু আসে এবার গরু দৌড় প্রতিযোগিতায় তেমন মোটেও আসেনি কারণ মড়কে প্রায় সকল বলদ মারা গেছে। রহমৎউল্লার গরু এই প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়, বিজয়ীকে একখানা নতুন কাপড় আর নতুন লাঙল প্রদান করা হয়।
গরু দৌড় শেষ হলেই তুমুল ঢোল আর কাঁসির বাজনার তালে তালে শুরু হয় ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা। বেতের ঢাল আর হাতলাঠি নিয়ে নৃত্যছন্দে দ্বন্দ্ব-যুদ্ধ চলে। জনতা লাল কৌপিনপরা দুজন লাঠিয়ালকে পরিবেষ্টন করে দাঁড়ায়। দু-একটা লড়াই হয়ে যাবার পর তৃতীয় রাউন্ডে জোর একটা লড়াই-এর শুরতে দূরে ঢোলের ছন্দ পায়ে তুলে প্রধান নাচতে নাচতে আসে মরা গঙ্গার ধারে বিস্তীর্ণ প্রান্তরে আর বলে, আমি এসে পড়েছি। সবাই নির্বাক হয়ে পড়ে, জনতার মাঝখানে বীর লাঠিয়ালের বেশে লাল কৌপিন পরে দাঁড়িয়ে থাকা দয়াল, প্রধানকে নিম্ন স্বরে বলে ওঠে, প্রধান এলে! কুঞ্জ জেঠা বলে চিৎকার করে জড়িয়ে ধরে প্রধানকে। গ্রামের মোড়ল প্রধানের আগমনে নবান্নের সুখের ছবি পূর্ণতা লাভ করে।
প্রধানের চোখ দিয়ে দু' ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে। গুরু গুরু মেঘের আওয়াজ হয়।  প্রধানকে বলতে শুনা যায়, 'কেটে গেছে সব দুঃখের দিন! আর আসবে না!' এবার নির্যাতিত সাধারণ মানুষের মধ্যে একতার দৃঢ় শক্তি জাগ্রত হয়েছে। তারা আর কোন অন্যায়, অবিচার শোষণ মুখ বন্ধ করে সইবে না বরং জোর প্রতিরোধ করবে। প্রবল সাইক্লোনে আপনজন হারিয়ে নিঃস্ব দয়াল এবার গ্রামের সবাইকে আপনজন করে নিয়েছে আর কোন মন্বন্তর কিংবা শোষণের কালো ছায়া গ্রাস করতে চাইলে সকলে সম্মিলিতভাবে জোর প্রতিরোধ করবে এমনটাই প্রকাশ পায় দয়ালের বক্তব্যে।

  •   লিখেছেন- মো. এনামুল হাসান কাওছার, শিক্ষার্থী- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

9 comments:

  1. অনেক ভালো লিখেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। আমাদের সাথেই থাকুন।

      Delete
  2. আমি কী এই লেখাটা মেইলে পেতে পারি?

    ReplyDelete
    Replies
    1. দুঃখিত আমাদের কাছে ওয়ার্ড ফাইটি আপাতত নেই। আমাদের সাথেই থাকুন, ধন্যবাদ ।

      Delete
  3. showrovnews@gmail.com
    এই মেইলে লেখাটি দিলে উপকৃত হতাম। আমার পাঠ্য নবান্ন নাটকটি। লেখাটা পেলে খুবই উপকার হতো। প্লিজ যদি লেখাটি মেইল করেন, কৃতজ্ঞ থাকবো।

    ReplyDelete
  4. দারুণ hoece ❤️❤️❤️

    ReplyDelete
    Replies
    1. অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। দ্য ডেইলি এডুকেশনের সাথেই থাকুন।

      Delete
  5. ধন্যবাদ সবাইকে। আমাদের সাথেই থাকুন।

    ReplyDelete
  6. সুস্পষ্ট ধারণা নিতে পারলাম নবান্ন নাটক সম্পর্কে! ধন্যবাদ ভাই!

    ReplyDelete

Powered by Blogger.