দ্যা ডেইলি এজুখেইশনে বিজ্ঞাপন দিতে কল করুন

+88 01521 20 70 54 (Call for Ad)

আমি এই পর্যন্ত জীবনে কোনদিনও একটা সিগারেট খাই নি, কিন্তু আমার গলায় আজ স্বর নেই


"আমি এই পর্যন্ত জীবনে কোনদিনও একটা সিগারেট খাই নি, কিন্তু আমার গলায় আজ স্বর নেই।
আমার বিয়ে হয় ১৯৭২ সালে দূরসম্পর্কের এক ভাইয়ের সাথে। ও ছিলো ইঞ্জিনিয়ার, প্রচুর ঘুরতে ভালোবাসতো। অসম্ভব খুঁতখুঁতে, জেদি আর ধূমপায়ী ছিলো। আমি যতভাবে যতকিছুই বলি না কেন, কোনদিন ওর সিগারেট খাওয়া থামাতে পারি নি। ৯১ সালে ৪৫ বছর বয়সে ওর প্রথম ছোট একটা স্ট্রোক হয়। যদিও তখন সিগারেট খাওয়া কমিয়ে দিয়েছিলো কিন্তু একেবারে ছেড়ে দেয় নি। তারও বছর পাঁচেক পরে ওর হার্ট আ্যটাক হয় এবং বাধ্য হয়ে ওকে ধূমপান ছাড়তে হয়। এর ৯ বছর পরে ২০০৫ এর একদিন ও ঘুমের মাঝেই আমাকে ছেড়ে চলে যায়।
২০০৯ এর দিকে টের পাই আমার কণ্ঠস্বর মিইয়ে যাচ্ছে। শুনে ডাক্তার কিছু ওষুধ দিলো। মাত্র একবছরের মাথায় একদিন আমি কথা বলার চেষ্টা করতেই আমার শ্বাসপ্রশ্বাস প্রায় বন্ধ হয়ে আসতে শুরু করে। ছেলেমেয়েরা তখনই আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করায়। ডাক্তার জানায় আমার ভোকাল কর্ডে আলসার হয়েছে। কিন্তু আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছিলাম তারা কিছু একটা লুকোচ্ছে। অবশেষে জানলাম আমার কণ্ঠনালীতে ক্যানসার ধরা পড়েছে। আমি একেবারে ভেঙে পড়লাম। জীবনে কোনদিন সিগারেট খাই নি, কাউকে কষ্ট দেই নি, তবে এ শাস্তি কেন? ডাক্তার বললো, আমি পরোক্ষ ধূমপানের শিকার। কারণ আমার বর আমার সামনেই সিগারেট খেতো।
তখন ২০১০ চলে, এপ্রিলের ১৯ তারিখ। আমাকে অপারেশান থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হলো। ডাক্তার আমার গলা কেটে ভোকাল কর্ড আর থাইরয়েড গ্লান্ড ফেলে আমার গলায় একটা ছিদ্র করে দিলো। সেই ছিদ্র দিয়ে পাকস্থলী পর্যন্ত লম্বা একটা নলের মাধ্যমে আমাকে খাবার দেয়া হতো। একটা নকল পাইপ দিলো স্বর তৈরি করার জন্য। ছেলেমেয়েদের উৎসাহে আমি আবার নতুন করে সবকিছু শুরু করার শক্তি পেলাম। ৬৪ বছর বয়সে আমি কম্পিউটার শিখতে লাগলাম।
একটা একটা করে অক্ষর শিখে কথা বলতে শুরু করলাম। অভ্যাস করতে লাগলাম কেমন করে ঐ নকল নলটা ব্যবহার করতে হয়, গলার ছিদ্রটা দিয়ে শ্বাস নিতে হয়। এমনকি এখন এই ছিদ্রটা দিয়ে আমি বাঁশিও বাজানো শিখছি! শাড়ির সাথে মিলিয়ে ছোট ছোট কাপড় সেলাই করে ডিজাইন করে নিয়েছি গলার ছিদ্রটা ঢাকার জন্য। দিনের বেলায় আমি ধূমপান ও তামাকবিরোধী বিভিন্ন প্রজেক্টে কাজ করি আর ক্যানসারের রোগীদেরকে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে উৎসাহ দেই। একদিনের সেই কথা বলতে না পারা আমি আজ অনেক কথা বলি। ডাক্তার বলেছে একটা নতুন হ্যান্ডস ফ্রি ডিভাইস দেবে যেন আমাকে আর ঐ নলটা হাতে ধরে রেখে কথা বলতে না হয়। শুনে খুশিতে বাচ্চাদের মত হেসে উঠেছিলাম।
যদি আমাকে সবার উদ্দেশ্যে কিছু বলতে বলা হয়, তাহলে বলবো, পরোক্ষ ধূমপানকে উপেক্ষা করবেন না। নিজের ভালোবাসার, কাছের, প্রিয় মানুষগুলোকে ধূমপান করতে নিষেধ করার ব্যাপারে কখনো লজ্জা পাবেন না। এটা যেমন তাদের ভালোর জন্য ভালোবেসে করবেন, তেমনি নিজেকে ভালোবেসে নিজের ভালোর জন্যেও করবেন।"
- নলিনী সত্যনারায়ণ

No comments

Powered by Blogger.