দ্যা ডেইলি এজুখেইশনে বিজ্ঞাপন দিতে কল করুন

+88 01521 20 70 54 (Call for Ad)

অবশেষে সেই কাঙ্খিত দিনটি আসলো- অথই কথা: ২ | অভিজিৎ বসাক | বিসিএস(প্রশাসন)

অথই কথা: ২

অভিজিৎ বসাক
বিসিএস(প্রশাসন)
৩৩তম বিসিএস

আমার খুব ক্লোজ একটা ছোট ভাই আছে, সে নিজেকে খুবই ক্রিয়েটিভ মনে করে। ওর ধারণা, ও যদি সিনেমা বানায় তাহলে দেশের সবাইকে ছাড়িয়ে যাবে। ওর অবশ্য নিজের তৈরি করা কিছু ডকুমেন্টরি, মিউজিক ভিডিও এই টাইপের কিছু কাজ আছে। ওর কাজ কেমন আমি সে বিচার করতে যাব না। কিন্তু সমস্যা হলো, ও এই সিনেমা বানানোর অজুহাতে তার লেখাপড়াটাও ঠিকমতো করেনি। এমনকি আন্ডারগ্র্যাডও ঠিকমতো শেষ করতে পারেনি!!
ওর ধারণা হলো, কেউ যদি ওকে সিনেমা বানানোর জন্য অনেকগুলো টাকা দিত তাহলে সে সিনেমা বানিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিতে পারত। কিন্তু বাস্তবতা হলো- সিনেমা বানানোর জন্য ওকে কেউ টাকাও দেয় না, ওর সিনেমা বানানোও আর হয়না। আর নাম না জানা এক আনাড়ি অল্পবয়সি ছেলেকে কে’ই বা সিনেমা বানানোর টাকা দেবে? কিন্তু ওদিকে এই সিনেমা বানানোর অজুহাতে জীবনের সবকিছুই বাদ পরে আছে! তবে সময়তো আর বসে থাকে না। ইদানিং ওকে মারাত্মক রকম হতাশ আর জীবনের প্রতি বিরক্ত হতে দেখা যায়। সবমানুষের প্রতি, সবকিছুর প্রতিই একটা ক্ষোভ কাজ করে ওর।
আমাদের আশেপাশে তাকালে এমন অনেক ছেলেমেয়ে পাওয়া যাবে। যারা হয়ত নিজেদেরকে ঠিকমতো বুঝতে পারেনা। আর এর ফলস্বরূপ হতাশায় জীবন পার হয়ে যায়। আর অন্যদিকে, ভালকিছু করতে গিয়ে স্বাভাবিকভাবে যা করতে পারত, তার আংশিকও ভালোভাবে করতে পারে না।তাই নিজেকে চিনতে পারাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ।সেইসাথে, সমস্যাকে সমাধান করার পথ খুঁজে বের করে এগিয়ে যেতে হবে, এটাও মাথায় রাখতে হবে।
আসুন আমাদের দেশ থেকে অনেক দুরের একটি ঘটনা শুনি- উইলমা রুদলফ নামে এক মেয়ে আছে। অ্যামেরিকার তেনেসিস প্রদেশের এক গরীব ঘরে তার জন্ম। কিন্তু শুধু গরিব হলেও সমস্যা ছিল না। সে একে ছিল মেয়ে তারপর আবার প্যারালাইসড। চার বছর বয়সে তিনি স্কারলেট ফিভারসহ ডাবল নিউমেনিয়ায় আক্রান্ত হন যা পরবর্তিতে তাকে পোলিওতে আক্রান্ত করে প্যারালাইজড করে দেয়।তাই ডাক্তারের পরামর্শে উইলমাকে সর্বদা পায়ে ব্রেস পড়তে হতো। কারন ডাক্তারের ভাষ্যমতে উইলমা কখনই তার পায়ের পাতা মাটিতে রাখতে সক্ষম হবে না। কিন্তু উইলমার মা ডাক্তারের এ কথায় সহজে দমে গেলেন না। বরং তিনি ডাক্তারের কথা অগ্রাহ্য করে উইলমাকে উৎসাহিত করার জন্য বললেন- "মা, স্রষ্টা তোমাকে যতটুকু সামর্থ্য দিয়েছে সেটাকে কাজে লাগাও। অধ্যাবসায় আর নিজের প্রতি বিশ্বাস নিয়ে তুমি সামনে এগিয়ে যাও। অবশ্যই তুমি যা চাও তা করে দেখাতে পারবে।"
মায়ের এ কথা শুনে উইলমা তখনই বলে উঠলো – "মা আমি দৌড় প্রতিযোগিতায় পৃথিবীর দ্রুততম মানবী হতে চাই।"
উইলমা তার এই স্বপ্ন পূরনের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে নয় বছর বয়সেই ডাক্তারের সকল উপদেশ উপেক্ষা করে পা থেকে ব্রেসটা সরিয়ে ফেলেন। দ্বিতীয় পদক্ষেপ হিসেবে তিনি তের বছর বয়সে প্রথম দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। কিন্তু সেই প্রতিযোগিতায় তিনি সবার শেষে গন্তব্যে পৌছান। কিন্তু তাতেও তিনি দমে যান নি। বরং এভাবে করে তিনি ২য়, ৩য়, চতুর্থ দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করতে থাকেন যতক্ষন না তিনি সবার আগে গন্তব্যে পৌছাতে পারছেন।
১৫ বছর বয়সে উইলমা তেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে কোচ এড টেম্পলের সাথে দেখা করেন। কোচ টেম্পলকে উইলমা তার মনের ভিতরের লালিত স্বপ্নের কথা খুলে বলেন। উইলমার কথা শুনে কোচ টেম্পল তখন অভয় দিয়ে বললেন – “উইলমা, শুধুমাত্র তোমার এই স্পিরিটটার জন্য তোমাকে কেউ থামাতে পারবে না এবং আমি সর্বদা তোমার পাশে আছি তোমাকে সাহায্য করার জন্য”।
অবশেষে সেই কাঙ্খিত দিনটি আসলো যখন উইলমা দৌড় প্রতিযোগিতার জন্য অলিম্পিকে অংশগ্রহন করার সুযোগ পেলেন। সেই প্রতিযোগিতায় উইলমার কম্পিটিটর হিসেবে ছিলেন জুটা হেইন নামের আরেকজন নারী যিনি কখনই কোন প্রতিযোগিতায় পরাজিত হননি। কিন্তু উইলমা তারপরও নিজের প্রতি আস্থা হারান নি।

প্রতিযোগিতার প্রথম ইভেন্টটা ছিল ১০০ মিটার দৌড়ের। কিন্তু বিস্ময়করভাবে প্রথম ইভেন্টেই উইলমা জুটা হেইনকে হারিয়ে বাজিমাত করে দেয় এবং পুরস্কার হিসেবে ১ম গোল্ড মেডেল অর্জন করেন। এরপর ২০০ এবং ৩০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় তিনি আবারো জুটা হেইনকে হারিয়ে আরো দুটো গোল্ড মেডেল অর্জন করেন। তার এই অর্জন পরবর্তিতে ইতিহাসে পরিনত হয়ে যায়। কারন তিনি ছিলেন সেই প্যারালাইটিক নারী যিনি ১৯৬০ সালে অনুষ্ঠিত হওয়া অলিম্পিকে পৃথিবীর দ্রুততম নারী হিসেবে খেতাব অর্জন করেন।
এই মেয়ের গল্প থেকে কি বুঝতে পারলাম? সফল ব্যক্তিরা সমস্যার অনুপস্থিতিতে নয়, বরং সমস্যার উপস্থিতিতেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করে যায়।
আমাদের আশেপাশের কোন মানুষের জীবনই একদম সমস্যাহীন নয়। বাইরে থেকে আপাতদৃষ্টিতে দেখলে মনে হয় যেন আমি ছাড়া আর সবাই অনেক সুখে আছে। কিন্তু মূল বিষয়টি কখনোই এমন না। সবসময়ই মানুষকে প্রচুর সমস্যার মধ্য দিয়ে পার হতে হয়েছে। এতসব সমস্যা ছিল বলেই আমাদের সভ্যতা আজ এত বেশি প্রযুক্তিসম্মন্ন হয়েছে। তাই কখনোই নিজের সমস্যার অজুহাতে নিজের লক্ষ্য অর্জন করার চেষ্টা থেকে বিরত থাকবেন না। সাহস নিয়ে সব বাঁধা মোকাবেলা করতে হবে।
সবসময় মনে রাখবেন, ‘ Your Dream is Possible.’
“When you fly high, People will throw stones at you. Don’t look down. Just fly higher so the stones won’t reach you” - Chetan Bhagat

No comments

Powered by Blogger.