অণুজীব কী? যা তুমি খালি চোখে দেখতে পাচ্ছো না, কিন্তু তোমাতেই তার বসবাস। লিখেছেন সাদিয়া আখতার
অণুজীব বা
মাইক্রোঅর্গানিসম বলতেই প্রথমে ব্যাক্টেরিয়ায়ার নাম মনে আসে, তাইনা? অণুজীব জগতের
অধিকাংশ জুড়েই আছে ব্যাক্টেরিয়া, যা তুমি খালি চোখে দেখতে পাচ্ছো না, কিন্তু
তোমাতেই তার বসবাস।
ঠিক তাই,
মানবদেহ হচ্ছে ব্যাক্টেরিয়ার প্রাকৃতিক আবাদভূমি। এই অণুজীব নরমাল ফ্লোরা হিসেবে
ত্বক, চোখ, মুখ, নাক, শ্বাসনালী, পাকস্থলি, অন্ত্র -দেহের সর্বত্র বিরাজমান। কখনো
ভেবেছো, আমাদের দেহকোষের সংখ্যার দশগুণ ব্যাক্টেরিয়া নিয়ে আমরা চলছি? আমাদেরকে রোগ
থেকে বাঁচাতে তারা প্রতিনিয়ত ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়ার সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছে, আমরা কখনো
বুঝতেই পারিনা।
আমাদের দেহকোষের সংখ্যার দশগুণ ব্যাক্টেরিয়া নিয়ে আমরা চলছি- সাদিয়া আখতার, মাইক্রোবায়োলোজি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। |
মানুষের
অন্ত্রের ভিতরে কোটি কোটি ব্যাকটেরিয়া আছে উদাহরণ স্বরূপ- Escherichia coli, Lactobacillus, Bifidobacterium, Methanogenes তারা খাবারকে হজম করতে, ভিটামিন তৈরি করতে, সেরাম
কোলেস্টেরল কমাতে এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সহায়তা করে। Bifidobacterium ব্যাকটেরিয়া ডায়রিয়া, আলসারী কোলাইটিস, অ্যাটোপিক
অ্যাকজিমা, ছত্রাক সংক্রমণ এবং Bowel Syndrome এর চিকিৎসায়
সাহায্য করতে পারে।
জানোই তো,
ব্যাক্টেরিয়ার কারণে আমাদের কত রোগে ভুগতে হচ্ছে। ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগের কমন উদাহরণগুলো- টিটেনাস বা ধনুষ্টংকার (Clostridium tetani), যক্ষা (Mycobacterium tuberculosis), টাইফয়েড
(Salmonella Typhi), নিউমোনিয়া (Streptococcus
pnneumoniae) এবং Escherichia coli এর কারণে ডায়রিয়া, শ্বাসযন্ত্রের
অসুস্থতা,
মূত্রনালীর সংক্রমণের কারণ হতে পারে। ব্যাকটেরিয়া সরাসরি একজন অসুস্থ বা বাহক ব্যক্তির থেকে
অন্য ব্যক্তির মধ্যে ছড়িয়ে যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, তার রক্ত, স্পর্শ, হাচি, কাশির
মাধ্যমে অন্যকে আক্রান্ত করতে পারে অথবা খাদ্য, জল,
বা বস্তুর মাধ্যমেও ব্যাক্টেরিয়া পরিবেশে ছড়িয়ে পড়তে
পারে।
এছাড়াও আমদের
নিত্যদিনের জীবনযাপনে ব্যাক্টেরিয়ার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে, তা আমরা
দেখতেই পাচ্ছি। এরা আমাদের উপকার ও ক্ষতিসাধন একসাথেই করছে।
আমাদের
বেঁচে থাকার প্রধান উপাদান খাদ্য বা বিভিন্ন রকমের খাবার- যার মাঝে ব্যাক্টেরিয়া
সুযোগ পেলেই জন্মাতে চায়। খাদ্যের গুণাগুণ বা পুষ্টিকর উপাদান নষ্ট করা থেকে শুরু
করে নানা স্বাদের খাদ্য তৈরিতে ব্যাক্টেরিয়ার প্রধান ভূমিকা আছে।
ব্যাক্টেরিয়ার
সাহায্যে অনেক খাবার উৎপাদন সম্ভব। যেমন- চিজ, দই, বাটার-দুগ্ধজাত খাবারগুলো Lactobacillus bulgaricus, Streptococcus thermophilus, Lactococcus
lactis subsp. lactis. ব্যাক্টেরিয়ার দ্বারা ফারমেন্টেশন বা গাঁজন করে
তৈরি হয়। এরা দুধের শর্করা ল্যাক্টোজকে ল্যাকটিক এসিডে পরিণত করে। ফারমেন্টেশন
পি-এইচ হ্রাস করে প্রোটিনকে জমাট বাঁধে একইসাথে গন্ধ ও স্বাদ প্রদান করে।
কফি, চকলেট
তৈরিতে Acetobacter aceti, Acetobacter fabarum, Leuconostoc spp., Lactobacillus
spp. ব্যবহৃত হচ্ছে। সয়া বীজ ও চালের মিশ্রণকে বিভিন্ন ব্যাক্টেরিয়ার সাহায্যে
ফারমেন্টেশন করে সয়া সস তৈরি করা হয়।
বিভিন্ন
ব্যাক্টেরিয়া দেহে ইনফেকশন করছে, খাবারে বিষাক্ত উপাদান সৃষ্টি করছে, যেমন- Clostridium botulinum,Staphylococcus aureus, Salmonella, Shigella, Escherichia coli, Listeria
monocytogenes, Bacillus cereus, Yersinia
enterocolitica –আরো অসংখ্য ব্যাক্টেরিয়া। যার ফলে আমরা প্রায়ই
ডায়রিয়া, বমি বা বমির ভাব, ব্যথা-রোগের লক্ষ দেখতে পাই।
আমরা জানি, বর্তমানে
ব্যাক্টেরিয়াজনিত রোগের চিকিৎসায় প্রচুর এন্টিবায়োটিক ব্যবহৃত হচ্ছে। অধিকাংশ এন্টিবায়োটিকের
মূল উপাদান হলো একটি নির্দিষ্ট রোগের জন্য দায়ী নির্দিষ্ট ব্যাক্টেরিয়ার মৃত বা
নিষ্ক্রিয় কোষ। Streptomyces spp., Bacillus
spp. Neomycin, Chloramphenicol, Cypemycin, Teracycline, Lincomycin সহ অনেক এন্টিবায়োটিকের উৎস।
ডায়াবেটিস
রোগীদের প্রয়োজনে রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ টেকনোলজিতে ইনসুলিন উৎপাদনে ব্যাকটেরিয়াল
প্লাজমিড ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি ব্যাক্টেরিয়ার উপকারিতার অন্যতম মাইলফলক।
ব্যাক্টেরিয়া
যেমন আমাদের দেহের উপকারে ভূমিকা রাখছে তেমনি পরিবেশের ভারসাম্য রাখতেও সাহায্য
করছে। নাইট্রোজেন ফিক্সিং ব্যাক্টেরিয়া যেমন-Azotobacter, Rhizobium, Clostridium মাটির
উর্বরতা বৃদ্ধি করছে। সবচেয়ে বিপজ্জনক গ্রীন হাউস গ্যাসগুলির মধ্যে একটি, মিথেন যা বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য এবং সমস্ত ধরণের শিল্প ও
প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া দ্বারা উৎপাদিত হয়। কয়েক ধরণের ব্যাকটেরিয়া পরিবেশ থেকে
তামার ব্যবহার করে মিথেনের সাথে বিক্রিয়া করে, গ্রীন হাউস গ্যাস এবং বিষাক্ত ভারী ধাতু উভয়ই একযোগে নির্মূল করে। সালফার
রিডিউসিং ব্যাক্টেরিয়া, Proteus spp., Pseudomonas, Campylobacter পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এসিড বৃষ্টির
হার হ্রাস করে। এছাড়াও বিয়োজক হিসেবে পরিবেশের বর্জ্য কমাতে সাহায্য করছে।
ব্যাক্টেরিয়া্র
সাথে আমরা ও পরিবেশ গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কে আবদ্ধ। অপকারী দিক প্রতিরোধের উপায়
সন্ধানের সাথে জীবনযাপনের উপাদানসমূহে ব্যাক্টেরিয়ার ব্যবহার বাড়ানো উচিত।
·
লিখেছেন-
সাদিয়া আখতার
শিক্ষার্থী, মাইক্রোবায়োলোজি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
সাদিয়া আখতার
শিক্ষার্থী, মাইক্রোবায়োলোজি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments